বিষাক্ত যে ১০ মাকড়সা কেড়ে নিতে পারে আপনারও প্রাণ

পৃথিবীর বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী প্রাণীর একটি বিষাক্ত মাকড়সা। আট পেয়ে এ খুদে প্রাণী শিকার ধরার আগে শিকারকে আটকে বিষ প্রয়োগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলার জন্য খ্যাত। অনেক সময় মাকড়সা যখন শিকার ধরে খাওয়া শুরু করে তখনো প্রাণীটি জীবিত থাকে। বেশির ভাগ মাকড়সার বিষগ্রন্থি থাকে। তবে সেগুলোর সবই মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়। কিছু মাকড়সার কামড়ে মৌমাছি বা বল্লার হুল ফোটানোর মতো জ্বালা–যন্ত্রণা হয়। তবে কয়েকটির কামড় আসলেই ভয়ংকর। আসুন বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত ১০ মাকড়সা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

অস্ট্রেলিয়ান ফানেল-ওয়েব

অস্ট্রেলিয়ান ফানেল-ওয়েব মাকড়সা
ছবি: রয়টার্স

পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাকড়সা অস্ট্রেলিয়ার ফানেল-ওয়েব। এটি অতি আক্রমণাত্মক ও প্রাণঘাতী প্রাণীগুলোরও একটি বটে। বিপদের সামান্য আঁচ পেলেই এটি নিজের সুরক্ষায় সজাগ হয়ে ওঠে। একবার আক্রমণে এটি বেশ কয়েকবার কামড়ে দিতে পারে। কামড় অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও দ্রুত বিষের উপসর্গ শরীরে দেখা দেয়। চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। হতে পারে মৃত্যুও। তাই কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং

কনটেইনারের ভেতর একটি ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সা
ছবি: এএফপি

একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং মাকড়সার আকার ৪৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা প্রায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তর্জনীর সমান। বিষাক্ত মাকড়সাদের মধ্যে এটিই আকারে সবচেয়ে বড়। রাতে শিকারের খোঁজে এ মাকড়সা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। এ স্বভাবের কারণেই এটির নাম ওয়ান্ডারিং বা বিচরণকারী। দিনে এ মাকড়সা সাধারণত কলাগাছে লুকিয়ে থাকে। কলার কাদিতে লুকিয়েই এটি বিশ্বের নানা প্রান্তে চলে যায়। এ কারণে এটি ব্যানানা স্পাইডার নামেও পরিচিত। পুরুষের চেয়ে নারী ওয়ান্ডারিং মাকড়সা বেশি বিষাক্ত। এ মাকড়সার কামড়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি, জ্বর, বমি, অতিরিক্ত ঘাম ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যদি চিকিৎসা গ্রহণ করা না হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

চিলির রেকলুস

সাধারণত চিলিতে এ মাকড়সা দেখতে পাওয়া যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের কয়েকটি অঞ্চলেও রেকলুস মাকড়সা দেখা যায়। চিলির রেকলুস মাকড়সা দেখতে অনেকটা বাদামি রঙের রেকলুস মাকড়সার মতো। তবে অতটা আক্রমণাত্মক নয়; যদিও চিলির রেকলুস মাকড়সা বেশি বিপজ্জনক। এর কামড়ে মানবদেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ঠিক হতে কয়েক মাস লেগে যায়। খুব বিরল হলেও এ মাকড়সার কামড়ে মানুষের কিডনি অকেজো হয়ে পড়তে পারে। তা থেকে হতে পারে মৃত্যুও।

ব্রাউন রেকলুস

বাদামি রেকলুস মাকড়সা সাধারণত উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে দেখা যায়। খুবই লাজুক ও নির্জনপ্রিয় এটি। আপনি যদি যথেষ্ট দুর্ভাগা না হন ও সেটির ওপর গিয়ে না পড়েন, তবে এ মাকড়সা আপনাকে কামড়াবে না। তবে এর কামড় বেশ যন্ত্রণাদায়ক। কামড়ের পর বিষের প্রভাবে বমি হতে পারে, আসতে পারে জ্বর। বিরল ক্ষেত্রে রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে যেতে পারে, যা বিপজ্জনক। তাই কামড় খেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

রেডব্যাক স্পাইডার

নারী রেডব্যাক মাকড়সা পুরুষ রেডব্যাক মাকড়সার চেয়ে ছোট হয়
ফাইল ছবি: রয়টার্স

লালপিঠের এ মাকড়সা বেশ বিপজ্জনক। এটি আমার-আপনার ঘরের ভেতর ঝুলে থাকে। এ মাকড়সা শিকার খুঁজে পেলে প্রথমে সেটির দিকে থকথকে আঠালো পদার্থ ছুড়ে আটকে ফেলে। পরে শিকারকে জাল দিয়ে ঘিরে ধরে কামড়ে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। এরপর শিকারকে নিয়ে যায় নিজের ডেরায়। এর কামড় বেশ যন্ত্রণাদায়ক। কামড় খেলে কারও কারও মাথাব্যথা ও বমি বমিভাব হতে পারে।

সাউদার্ন ব্ল্যাক উইডো

নিজের জালে ঝুলে আছে একটি ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা
ছবি: এএফপি

চেনা-পরিচিত বিপজ্জনক মাকড়সার মধ্যে অন্যতম সাউদার্ন ব্ল্যাক উইডো। অন্যান্য মাকড়সার মতো এটিও শিকারের সময় ও যখন বিপদের আশঙ্কায় ভয় পেয়ে যায়, তখন আক্রমণ করে।
সাউদার্ন ব্ল্যাক উইডোকে যতটা বিপজ্জনক বলা হয়, এটি আদতে ততটা নয়। ব্ল্যাক উইডোর কামড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল। তবে শিশু ও বয়স্করা এর কামড়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। নারী ব্ল্যাক উইডোর পেটে লাল রঙের দাগ দেখা যায়। পুরুষ মাকড়সার চেয়ে নারী মাকড়সা আকারে বড় হয়।

হোয়াইট-টেইলড

হোয়াইট-টেইলড বা সাদা লেজের মাকড়সা নিজের জালে শিকারকে আটকায় না। কারণ, এটির পছন্দের শিকার অন্যান্য মাকড়সা। এটি মানুষকে কামড়াতে পারে। সাধারণ পোশাক বা জুতার ভেতর এটি লুকিয়ে থাকে। যদি আপনি দুর্ভাগা হন ও এ মাকড়সার কামড় খেয়ে বসেন, তবে আপনার বমি বমিভাব, বমি ও প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে পারে।

ব্রাউন উইডো

জালে ঝুলে আছে একটি মাকড়সা
ছবি: রয়টার্স

সারা পৃথিবীতেই ব্রাউন উইডো মাকড়সা দেখতে পাওয়া যায়। ডোরাকাটা পা ও পেটে উজ্জ্বল দাগ দেখে এগুলো সহজেই চেনা যায়। এটির শরীরে তার স্বজাতি ব্ল্যাক উইডোর মতো এত বিষ থাকে না। বিষও অতটা ক্ষতিকর নয়। এটির কামড়ে ক্ষতস্থানের চারপাশে ব্যথা ও কারও কারও এক–দুবার বমি হতে পারে।

লাইকোসা টরন্টুলা

শীর্ষ ১০ বিষাক্ত মাকড়সার তালিকায় আকারে দ্বিতীয় বৃহৎ লাইকোসা টরন্টুলা মাকড়সা। দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে এটি বেশি দেখা যায়। ইতালির শহর টরন্টোর নামে এটির নামকরণ হয়েছে। এ মাকড়সা নিশাচর এবং এদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এটির মানুষকে কামড়ানোর ঘটনা খুবই বিরল ও বিষও ততটা বিপজ্জনক নয়।

১০

মাউস স্পাইডার

মাউস মাকড়সা মোটেও ইঁদুর খায় না। এ মাকড়সা জালে নয়; বরং ইঁদুরের মতো মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে। এটি সাধারণত মানুষের চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। খুব একটা আক্রমণাত্মকও নয়। এটি কামড়ালে মাথাব্যথা কিংবা শরীরে অবশভাব হতে পারে। এ মাকড়সা দেখতে যত ভয়ংকর, এর বিষ তত বিপজ্জনক নয়।

আরও পড়ুন