রাশিয়ায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, যাত্রীতালিকায় প্রিগোশিন
রাশিয়ায় একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মস্কোর উত্তরের একটি এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। রাশিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিধ্বস্ত ওই উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকায় ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিনের নাম রয়েছে।
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, উড়োজাহাজটি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাচ্ছিল। তাতে ৩ জন ক্রুসহ ১০ আরোহী ছিলেন। প্রাথমিক তথ্যমতে, আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানা যায়নি। তবে গত জুনে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ভাগনার বাহিনীর সশস্ত্র বিদ্রোহ প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে মস্কোর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। ভাগনার গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন খবর দিয়েছে, মস্কোর উত্তরের টিভিয়ের এলাকায় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পরপর এই উড়োজাহাজে করে প্রিগোশিন বেলারুশে গিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই উড়োজাহাজে করে তিনি মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে বেশ কয়েকবার যাওয়া–আসা করেছেন। প্রিগোশিন সম্পৃক্ততার কারণে ২০১৯ সালে উড়োজাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভাগনারপ্রধান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিলেন ভাগনার সেনারা। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ ছিল প্রিগোশিনের। সেই অসন্তোষের প্রকাশ ঘটে ২৩ জুন। বিদ্রোহ করে বসেন প্রিগোশিন। রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের জন্য ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কোর দিকে অভিযান শুরু করেন তিনি। পথে কয়েকটি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ভাগনারের যোদ্ধারা। ভাগনারের নিয়ন্ত্রণে যায় গুরুত্বপূর্ণ একটি রুশ সেনাঘাঁটি।
প্রিগোশিনের বিদ্রোহের জেরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেন প্রিগোশিন। সমঝোতায় বলা হয়, প্রিগোশিনসহ ভাগনার সেনারা রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন।
বিদ্রোহের পর ভাগনার সেনারা বেলারুশে চলে যান। তবে ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিনের অবস্থান নিয়ে জল্পনাকল্পনা রয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, তিনি বেলারুশে আছেন। এমনকি তাঁর রাশিয়া সফর এবং পুতিনের সঙ্গে দেখা করার খবরও জানা যায়। কিন্তু কখনোই প্রকাশ্যে আসেননি তিনি।
[বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রথমে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ইয়েভগেনি প্রিগোশিন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল। পরবর্তীতে রাশিয়া কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকায় প্রিগোশিনের নাম থাকার কথা উল্লেখ করেছে।]