বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় নারীর সংখ্যা এখনো বেশ কম। তবে এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে ফোর্বস। এ বছর বিশ্বে ২ হাজার ৭৮১ জন শতকোটিপতির মধ্যে ৩৬৯ জন নারী (১৩ শতাংশের একটু বেশি), গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৩৭ জন। এই ৩৬৯ জন কোটিপতির হাতে প্রায় দুই লাখ কোটি (১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন) মার্কিন ডলার রয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা ২৪ হাজার কোটি ডলার বেশি। গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত ফোর্বসের প্রতিবেদন থেকে একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের শীর্ষ ১০ নারী শতকোটিপতিকে।
ফরাসি প্রসাধনসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লরিয়ালের উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়া বেতনক্যুঁ মায়ার্স বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী। তিনি লরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন শ্যুলারের নাতনি। এ নিয়ে টানা চতুর্থবার তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন। নিজের বেশির ভাগ সম্পদের মালিক তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে হয়েছেন। ফোর্বস ও ব্লুমবার্গ ম্যাগাজিনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, একসময় তাঁর মা লিলিয়ান বেতনক্যুঁ বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারী ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। মেয়ের জন্য তিনি রেখে যান সম্পদের পাহাড়। মায়ের মৃত্যুর পরের বছর প্রথমবার ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ফ্রাঁসোয়ার নাম ওঠে। ফ্রান্সের নাগরিক ফ্রাঁসোয়ার বয়স এখন ৭০ বছর। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৯ হাজার ৯৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
গত ১২ মাসে ওয়ালমার্টের শেয়ারের দাম ৩৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী নারী অ্যালিস ওয়ালটনের সম্পদের পরিমাণ এক লাফে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার বেড়ে গেছে। অ্যালিস ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের একমাত্র মেয়ে। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রয়াত মার্কিন ধনকুবের ডেভিড কোখের বিধবা স্ত্রী জুলিয়া কোখ এ বছর ফোর্বসের শীর্ষ নারী ধনীর তালিকায় এক ধাপ পিছিয়ে তিন নম্বরে নেমে গেছেন। ২০১৯ সালে ডেভিড কোখের মৃত্যুর পর জুলিয়া এবং এ দম্পতির তিন সন্তান কোখ ইন্ডাস্ট্রিজের ৪২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। তেল শোধন থেকে শুরু করে এ কোম্পানির নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। জুলিয়া মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের ট্রাস্টি। জুলিয়ার বয়স ৬১ বছর। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী নারী যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকুলিন মার্স। ভাই জন মার্স ও তাঁর প্রয়াত আরেক ভাইয়ের চার মেয়ের সঙ্গে তিনি মার্স ইনকর্পোরেটেডের মালিকানা ভাগ করে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক এ কোম্পানি ক্যান্ডি, পোষা প্রাণীর খাবার এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করে। জ্যাকুলিনের দাদা ফ্রাঙ্ক সি মার্স ১৯১১ সালে নিজের রান্নাঘরে তৈরি বাটার ক্রিম ক্যান্ডি বিক্রির মধ্য দিয়ে বিশাল এই কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন। জ্যাকুলিনের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
২০১৯ সালে জেফ বেজোসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ম্যাকেঞ্জি স্কট অ্যামাজনের ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। তিনি তাঁর ওই সম্পদের বেশির ভাগটাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৫৩ বছর বয়সী ম্যাকেঞ্জির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলার।
জিন্দাল গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবিত্রী জিন্দাল বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারীর তালিকায় ছয় নম্বরে আছেন। তিনি জিন্দাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ওম প্রকাশ জিন্দালের স্ত্রী। ২০০৫ সালে ওম প্রকাশ মারা যান। জিন্দাল গ্রুপের স্টিল, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা রয়েছে। ৭৪ বছর বয়সী সাবিত্রী বর্তমানে ভারতের শীর্ষ ধনী নারী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
ইতালির ব্যবসায়ী স্বামী জাঁলুইজি অ্যাপোন্তের সঙ্গে ১৯৭০ সালে এমএসসি প্রতিষ্ঠা করেন রাফায়েলা অ্যাপোন্তে-দিয়ামন্ত। এমএসসি এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিপিং লাইন। তাঁরা দুজনে কোম্পানির ৫০ শতাংশ করে শেয়ারের মালিক। দুই লাখ ডলার ঋণ নিয়ে একটি জাহাজ কিনে তাঁরা এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। রাফায়েলার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৩০১ কোটি মার্কিন ডলার।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোর একটি লাস ভেগাস স্যান্ডস। মিরিয়াম অ্যাডেলসন এবং তাঁর পরিবার এই ক্যাসিনো কোম্পানির অর্ধেকের বেশি শেয়ারের মালিক। স্বামীর মৃত্যুর পর মিরিয়াম এই শেয়ারের মালিক হন। তাঁর স্বামী শেলডন অ্যাডেলসন ২০২১ সালে মারা যান। পেশায় চিকিৎসক মিরিয়াম চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং ওষুধ নিয়ে গবেষণার কাজে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দান করেছেন। ৭৮ বছর বয়সী মিরিয়াম ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের মালিক।
বিশ্বের নবম শীর্ষ ধনী নারী অস্ট্রেলিয়ার জিনা রাইনহার্ট। তিনি তাঁর বাবা ল্যাং হ্যানককের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে শতকোটি ডলারের ব্যবসার মালিকানা পেয়েছেন। তাঁর বাবার কোম্পানি খনি এবং কৃষি খাতে ব্যবসা করে। ৭০ বছর বয়সী জিনার সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৮০ কোটি মার্কিন ডলার।
মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বৃহৎ কোম্পানি ফিডেলিটির প্রধান মার্কিন নাগরিক অ্যাবিগেইল জনসন এ বছর এক ধাপ এগিয়ে শীর্ষ ১০ ধনী নারীর তালিকায় দশম স্থান দখল করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। ৬২ বছর বয়সী এই নারীর মোট সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস