করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দরিদ্র দেশগুলোকে করোনার ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডোজ টিকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি–৭। তবে জাতিসংঘ এ মহামারির সংক্রমণে লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় চায় আরও টিকা।
এদিকে ধনী দেশগুলোর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য খাতের প্রচারণাকারীরা গত শুক্রবার বলেছেন, জি–৭–এর পরিকল্পনায় উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঘাটতি আছে, এটি খুবই ধীরগতির। পশ্চিমা নেতাদের মনোভাবে এটি পরিষ্কার, শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ এ স্বাস্থ্যসংকট মোকাবিলার বিষয়টি এখনো তাঁদের শীর্ষ অগ্রাধিকারে নেই। খবর রয়টার্সের।
জি–৭–এর পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। অবশ্য তিনি বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় আরও টিকার দরকার। সতর্ক করে তিনি বলেন, যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণকে দ্রুত টিকা দেওয়া না যায়, তবে করোনাভাইরাসের আরও রূপান্তর ঘটতে পারে এবং এ ভাইরাস নতুন টিকা প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।
জি–৭–এর পরিকল্পনার বিষয়ে গুতেরেস বলেন, ‘তারা যে পরিমাণ টিকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার কথা জানিয়েছে, আমাদের দরকার তার চেয়েও বেশি। আমাদের বৈশ্বিক টিকা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত টিকাদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয় মাথায় রেখে যুক্তিসংগত কাজ করতে হবে। যুদ্ধকালীন অর্থনীতির কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা এখনো এসব থেকে অনেক দূরে রয়েছি।’
ইংল্যান্ডে জি–৭ শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দরিদ্র দেশগুলোকে যথাক্রমে ৫০ কোটি ও ১০ কোটি ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। কানাডা দিতে পারে ১০ কোটি ডোজ টিকা। বৈঠকে বরিস জনসন বিশ্বের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষকে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই টিকা দেওয়ার কাজে সহায়তা করতে জোটের নেতাদের আহ্বান জানান। তাঁর এ আহ্বান জানানোর পর বাকি দেশগুলোর কাছ থেকেও ৩০ কোটি ডোজের মতো টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়।
তবে স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার কর্মীরা বলেন, করোনা সংকটে টিকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার এ ঘোষণা একটি সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু করোনা মহামারি থেকে কাটিয়ে উঠতে যে ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা গ্রহণ করা দরকার, পশ্চিমা নেতারা তা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। টিকা বণ্টনকাজে সহায়তা করাও এ মহামারি থেকে উত্তরণে জরুরি।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকাদান কার্যক্রমে ধনী দেশগুলোকে আরও বেশি সহায়তা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের একজন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। জি-৭ নেতাদের এ প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে রয়টার্সকে তিনি বলেন, এটি প্রকৃত সমাধানের পথে না হেঁটে ‘ভিক্ষার পাত্র একজন থেকে আরেকজনের কাছে চালান করে দেওয়ার’ সঙ্গেই বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।
লন্ডনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়েলকামের কর্মকর্তা অ্যালেক্স হ্যারিস বলেন, ‘বিশ্ববাসীর এখনই টিকা দরকার; এ বছরের শেষে নয়। আমরা জি–৭ নেতাদের প্রতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ানোর আহ্বান জানাই।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এ মহামারি বিশ্বের ২১০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৩৯ লাখ (৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন) মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন আরও অনেকে।