ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী গরিব দেশের তরুণেরা: জরিপ
দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশের তরুণেরা মনে করেন, আজকের শিশুরা তাদের মা–বাবার তুলনায় ভালো থাকবে। পরবর্তী প্রজন্ম তুলনামূলক সফল জীবন যাপন করবে বলেই তাঁদের বিশ্বাস।
অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান তরুণ মনে করেন, বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা তাদের মা–বাবার তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে কম সফলতা পাবে। বেশির ভাগ ধনী দেশের মানুষেরই এমন ধারণা। পক্ষান্তরে, দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশের তরুণেরা মনে করেন, আজকের শিশুরা তাদের মা–বাবার তুলনায় ভালো থাকবে। পরবর্তী প্রজন্ম তুলনামূলক সফল জীবন যাপন করবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
* ইউনিসেফের গ্লোবাল ইনসাইট অ্যান্ড পলিসি ও গ্যালাপ একসঙ্গে এ–সংক্রান্ত একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। * ২১ হাজার মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। * মধ্যম আয়ের দেশে ৫৭ শতাংশ মনে করেন, বিশ্ব প্রতিটি প্রজন্মের সঙ্গে একটি ভালো জায়গা হয়ে উঠছে।
বিশ্বের ২১টি দেশে করা একটি সাম্প্রতিক জরিপের তথ্যমতে, ধনী দেশগুলোর তরুণদের কাছে ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতার স্বপ্ন আধুনিক দিনের বাস্তবতার তুলনায় অতীতের গল্পের মতো বলে মনে হয়। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর তরুণেরা মনে করছেন, এখনো আশা করা যায় যে তরুণদের জীবন তাঁদের মা–বাবার জীবন থেকে ভালো হবে এবং পৃথিবী একটি ভালো বাসযোগ্য জায়গা হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত।
‘অনেক উন্নয়নশীল দেশে, কিছুটা বেশি আশাবাদ রয়েছে যে হ্যাঁ, প্রতিটি প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে,’ ইউনিসেফের গ্লোবাল ইনসাইট অ্যান্ড পলিসি অফিসের পরিচালক লরেন্স চ্যান্ডি এমনটা মনে করেন। তাঁর সংস্থা গ্লোবাল ইনসাইট অ্যান্ড পলিসি ও গ্যালাপ একসঙ্গে এ–সংক্রান্ত একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ যুবক ও ৬৪ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মনে করেন, আজকের শিশুরা তাদের মা–বাবার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তাঁরা এমন মতামত দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ হাজার মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বয়সের ভিত্তিতে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ব্যক্তিদের এক শ্রেণিতে আর ৪০ ও এর ওপরের বয়সী ব্যক্তিদের আরেক শ্রেণিতে রেখে জরিপ করা হয়। অপেক্ষাকৃত তরুণদের দল বলছে, আজকের শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও শারীরিক সুরক্ষার দিক থেকে উন্নত। মধ্যম আয়ের দেশে ৫৭ শতাংশ মনে করেন, বিশ্ব প্রতিটি প্রজন্মের সঙ্গে একটি ভালো জায়গা হয়ে উঠছে।
জরিপে অংশ নেওয়া স্পেনের ২৪ বছর বয়সী আঙ্গেলা বাহামোন্দে বলেন, ‘আমাদের সময়ে কোনো কিছু শেখার এবং খুঁজে বের করার স্বাধীনতা ছিল। আজকাল আমরা শিশুদের এমনভাবে দেখি যেন তারা কাচের তৈরি।’
জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে তরুণদের কাছে সর্বোত্তম জিনিসটি হচ্ছে প্রযুক্তি। ২৪ বছর বয়সী ব্রাজিলের এক তরুণ বলেন, বর্তমানে তরুণদের কাছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সুবিধা রয়েছে। আগের প্রজন্মের মানুষের এসবের কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে শোয়ার ঘরে থেকেই আলাদা আলাদা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।
আমার মা–বাবা এতটা শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাননি। তবে তাঁরা আমাকে শিক্ষিত করেছেন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে।বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মো. রাফায়াত উল্লাহ
জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মো. রাফায়াত উল্লাহ (২৪) বলেন, তিনি মনে করেন, শিক্ষার কারণে তিনি তাঁর মা–বাবার চেয়ে ভালো আর্থিক অবস্থানে থাকবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মা–বাবা এতটা শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাননি। তবে তাঁরা আমাকে শিক্ষিত করেছেন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে।’
তবে বর্তমান যুগের তরুণেরা বেশির ভাগই উদ্বেগের মধ্যে থাকেন বলে জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বলেছেন, তাঁরা কখনো কখনো বা প্রায়ই উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। ১০ জনের মধ্যে ছয়জন বলেছেন, শিশুরা তাদের মা–বাবার চেয়ে সফল হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে বেশি চাপের শিকার হয়। ১০ জনের মধ্যে ৭ জন বলেছেনে, তাঁদের মা–বাবার প্রজন্মের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মহামারি সম্পর্কে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়নি। তবে তরুণেরা বলেছেন, দেশগুলো কোভিডের মতো হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হবে, যদি তারা একে অন্যকে সহযোগিতা করে। তবে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাঁরা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে লড়াই করছেন। চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের ওপর তাঁরা সর্বোচ্চ আস্থা রেখেছেন।
হাওয়াইয়ের বাসিন্দা ১৬ বছরের এক কিশোর বলে, ‘ভবিষ্যতের কথা যখন ভাবি, তখন করোনা মহামারির কথা মাথায় আসে। যা হয়েছে, আমরা সেই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেয়ে চলার চেষ্টা করছি।’
জরিপে ছয়টি ধনী দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, আজকের শিশুরা তাদের মা–বাবার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে ভালো থাকবে। তবে বিশেষ করে জাপান, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও স্পেনের যাঁরা জরিপে অংশ নেন, তাঁরা তুলনামূলক হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।
অন্যদিকে, স্বল্প আয়ের দেশগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, আজকের শিশুরা তাদের মা–বাবার চেয়ে আর্থিকভাবে ভালো করবে, বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের এমন বিশ্বাস। তাঁরা উচ্চ বা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি আশাবাদী ছিলেন। তাঁরা মনে করছেন, জীবনযাপনের জন্য বিশ্ব প্রতিনিয়ত একটি ভালো জায়গা হয়ে উঠছে।
তরুণ আমেরিকানরা মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জরিপে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ বলছে, এটি পারিবারিক সম্পদ ও সংযোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক ব্যক্তিরা (যুবকদের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি) বলেছেন, কঠোর পরিশ্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অর্ধেক মনে করছেন, এটি পারিবারিক সম্পদ বা সংযোগ।
উন্নয়নশীল দেশগুলোয় উন্নয়নের উপায় হিসেবে শিক্ষার ওপর অগ্রাধিকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল আর্লি অ্যাডলসেন্ট স্টাডির প্রধান অনুসন্ধানকারী রবার্ট ব্লাম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বজনীন শিক্ষা দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষা একটি বিভাজনরেখায় পরিণত হয়েছে।
রবার্ট ব্লামের মতে, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় এটি দেখা হয়—ভালো করার জন্য আমার টিকিট কী? আমার কাছে অনেক টিকিট নেই। আমার বিত্তশালী পরিবার নেই, আমার সামাজিক মূলধন সীমিত। তাই আমার টিকিট হবে শিক্ষা। আমার যদি কিছু থাকে, সেটা হবে শিক্ষা।’