অমিক্রন: যুক্তরাজ্যে বার–রেস্তোরাঁ বন্ধ করছেন মালিকেরা

অমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকেরাফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যজুড়ে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই দেশটিতে সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে। দ্রুত সংক্রমণশীল এই ভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও যুক্তরাজ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
কর্মীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছাড়াও একের পর এক রিজার্ভেশন বাতিল হতে থাকায় বড়দিনের আগে বার–রেস্তোরাঁ এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের ভেন্যুগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না বলে সিএনএন বিজনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পশ্চিম লন্ডনের মঙ্গল-২ রেস্তোরাঁর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফেরহাত ডিরিক বলেছেন, বুকিং বাতিলের পাশাপাশি অনিশ্চয়তার কারণে পরিকল্পনার এক সপ্তাহ আগেই তিনি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি কর্মীদের মনোবলের ওপর প্রভাব ফেলেছে। শুধু তা–ই নয়, এটি আমাদের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। কারণ, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান খুলে রাখার পক্ষে ভালো ব্যবসা হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’

প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারির মধ্যে আবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াটা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। পাশাপাশি এটি সরকারের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে জনগণ স্বেচ্ছায় বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে লাগাম টেনেছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জমায়েত না হতে দেশটির নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের চিফ মেডিকেল অফিসার ক্রিস হুইটি।

করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বর্তমানে ব্যবসা খাতে রাষ্ট্রীয় সহায়তা কমে গেছে। এর ফলে সংকটময় মুহূর্তে দেশটির পর্যটন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যুক্তরাজ্যের পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ‘ইউকে হসপিটালিটি’-র পূর্বাভাসে দেখা গেছে, বার্ষিক লাভের এক–চতুর্থাংশই বড়দিনের সময় হয়। ইউকে হসপিটালিটির প্রধান কেট নিকোলাস বলেন, অপারেটররা আগামী মাসে যদি লাভ করতে না পারেন, তাহলে অনেকেই টিকে থাকতে পারবেন না।

করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক গত বৃহস্পতিবার তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি তিনি বুঝতে পারছেন। সে কারণে পর্যটন খাতের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁর দলের সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করছেন এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে পর্যটন খাতের জন্য কোনো সুস্পষ্ট সহায়তার আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
এদিকে যুক্তরাজ্যের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সবাইকেই দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ইতিমধ্যে অনেকেই রেস্তোরাঁ বা পানশালায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। কারণ, ক্রিসমাসের মধ্যে তাঁরা নিজেদের অসুস্থ হওয়া কিংবা আইসোলেশনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চাইছেন না। এর চেয়ে বাড়িতে বসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো ভালো বলে মনে করছেন।

যুক্তরাজ্যে এবার বড়দিনের উৎসবে ভেন্যু সংরক্ষণ ২০১৯ সালের তুলনায় ২২-২৪ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ওপেনটেবিল’। একই সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে এই হার কমেছে ১৫-১৮ শতাংশ।
পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট কর্মীরা করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সহকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। দক্ষিণ লন্ডনের ফরজা ওয়াইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্যাশ রেডফোর্ড বলেন, ‘আমরা টিম নিয়ে উদ্বিগ্ন, আমরা চাই না টিমের কেউ অসুস্থ হোক।’ তিনি গত রোববার জানান, তাঁর ৩১ জন কর্মীর মধ্যে ইতিমধ্যে ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন বুধবার সকাল পর্যন্ত এমন আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বড়দিনের আগেই বুধবার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শুধু যে রেস্তোরাঁগুলো এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছে, তা নয়। লন্ডনের থিয়েটার সোসাইটিও গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, সারা দেশেই এমন চ্যালেঞ্জিং অবস্থা দেখা দিয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলেছে, সাধারণত বড়দিনে টিকিট বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু থিয়েটার–সংশ্লিষ্ট অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবার প্রদর্শনী বাতিল করতে হচ্ছে। এটি আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য ভেন্যুগুলোকে একধরনের সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

ওয়াল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১২ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৮ জন। অপর দিকে গত বৃহস্পতিবার এক দিনে যুক্তরাজ্যে ৮৮ হাজার ৩৭৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, করোনার ডেলটা ধরন তুলনামূলক স্থিতিশীল হলেও অমিক্রন খুব দ্রুত বাড়ছে। অপর দিকে লন্ডনে অমিক্রন ইতিমধ্যেই প্রভাব বিস্তারকারী ধরন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।