‘অক্সফোর্ডের টিকা নেওয়ার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার যোগসূত্র নেই’

অক্সফোর্ডের তৈরি টিকা
প্রতীকী ছবি: এএফপি

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা নেওয়ার সঙ্গে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো যোগসূত্র সেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আজ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।


ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদনে এ কথা  বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কয়েক দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে অক্সফোর্ডের টিকা গ্রহণ করার পর কারও কারও শরীরে রক্ত জমা বাঁধছে।  কিন্তু অক্সফোর্ডের টিকা নিলে মানুষের শরীরের রক্ত জমা বাঁধবে—এমন কোনো আভাস মেলেনি।


ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ চলতি সপ্তাহে অক্সফোর্ডের টিকার ব্যবহার স্থগিত করে দেয়। টিকা নেওয়ার পর কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটে বলেও জানানো হয়।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছেন। পরে বলেছেন, অক্সফোর্ডের টিকা রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য দায়ী বর্তমানে এমন কোনো প্রমাণ নেই। অক্সফোর্ডের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এ ধরনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি।  

বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে। কিন্তু এখনই এ টিকা বন্ধ করার কোনো কারণ তারা দেখছেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অক্সফোর্ডের টিকার ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া উচিত। আমরা যা দেখব তা আমরা সব সময় দেখে থাকি—যেকোনো নিরাপত্তা সংকেত অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রশংসা করে মার্গারেট বলেন, এটি ‘চমৎকার টিকা’। টিকা দেওয়ার সঙ্গে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যার কোনো কার্যকর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরতি দেওয়ার বিষয়টি সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ।


গবেষক মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা নিরাপত্তা সংকেত শুনছি। কারণ, আমরা নিরাপত্তা সংকেত না শুনলে তখন কথা উঠবে যে এ নিয়ে যথেষ্ট পর্যালোচনা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি।’


ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, টিকা নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউরোপে ৩০ টি রক্ত জমাট বাধার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা রক্ত জমাট বাধার এ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে। তবে পর্যালোচনার এই পর্যায়ে যেন টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ না থাকে সে আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, টিকার যে সুবিধা, তা ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি।

এখন পর্যন্ত ইউরোপে ৫০ লাখের বেশি মানুষ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন। যুক্তরাজ্যে এ টিকাটি নিয়েছে এক কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ।
যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির (এমএইচআরএ) পক্ষ থেকেও মানুষকে টিকা গ্রহণ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে রক্তে জমাট বাধার কোনো প্রমাণ নেই। রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটতে পারে। এটা অপরিচিত কোনো ঘটনা নয়।


এর আগে জার্মানির একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও টিকাটিকে নিরাপদ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জার্মানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্প্যান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি তাতে এতে ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাই বেশি।’ জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশাস ডিজিজের প্রধান অধ্যাপক লোথার ওয়েলার বলেন, করোনার টিকা নেওয়ার পর অতিরিক্ত মৃত্যু বাড়ার কোনো পরিসংখ্যাগত প্রমাণ নেই।


জার্মানির মতোই পর্তুগাল ও অস্ট্রেলিয়াও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুটি দেশই টিকাদানে ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাই বেশি দেখছে।
গতকাল শুক্রবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের এক কোটির বেশি মানুষের নিরাপত্তা তথ্যের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপ, লিঙ্গ, ব্যাচ বা দেশে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ার কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ ঘটনার তুলনায় টিকা নেওয়ার পর পর্যবেক্ষণে এ ধরনের ঘটনায় সংখ্যা খুব কম।