ঢাবির স্নাতক, মাছ ব্যবসায়ী
মো. শামছুদ্দিন পাটওয়ারী চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পূর্ব রাজারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ছেলের সঙ্গে যুক্তিতে পেরে উঠছিলেন না তিনি। আবার ‘লোকে কী বলবে’ ভেবে মেনেও নিতে পারছিলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতক হয়ে ছেলে মাছ ব্যবসা করবে, এটা কি হয়! শেষ চেষ্টা হিসেবে ছেলে আহামেদউল্যাহকে বলেছিলেন, ‘বাবা, অন্য কিছু করা যায় না? আরও কত রকম কাজ আছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিষয়ের সদ্য স্নাতক তরুণ অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন—তিনি মাছের ব্যবসাই করবেন। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ফেসবুকে একটা পেজ খোলেন, নাম ‘ইলিশের বাড়ি’। এই পেজ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কেজি মাছ বিক্রি করেছেন আহামেদউল্যাহ।
করোনার সময়টা ঘরবন্দীই কাটছে। স্নাতকোত্তরের পড়ার চাপ থেকে রেহাই পেয়ে শুরুতে কিছুটা স্বস্তি পেলেও পরে আহামেদউল্যাহ অস্থির হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসে সবাই তাঁকে সিয়াম নামে চেনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসির ক্যাডেট সার্জেন্ট তিনি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধনের একনিষ্ঠ কর্মী৷ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক। এত কিছুর সঙ্গে যিনি যুক্ত, ঘরের বন্দী সময়টা মেনে নিতে পারছিলেন না।
ইলিশের দেশ চাঁদপুরে যেহেতু তাঁদের বাড়ি, আহামেদউল্যাহ ভাবলেন, ইলিশ নিয়েই কিছু করা যায় কি না। তখন থেকেই পরিকল্পনা শুরু। ছোটবেলা থেকে ইলিশ নিয়ে অন্য রকম একটা আগ্রহ কাজ করত। এলাকার ইলিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও ভালো পরিচয়। আহামেদউল্যাহ তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। কীভাবে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকা বা অন্যান্য এলাকায় ইলিশ পাঠানো যায়, খোঁজখবর নিলেন। নেমে পড়লেন ব্যবসায়।
অনেকের কটু কথা শুনেছেন, এখনো শুনতে হচ্ছে। আহামেদউল্যাহ লোকের কথায় কান দেননি। বললেন, ‘আমি জানি, যদি ব্যবসা করে সফল হতে পারি, আজকে যাঁরা বাঁকা কথা বলছেন তাঁরাই আমার প্রশংসা করবেন।’
‘ইলিশের বাড়ি’কে তিনি একটি ব্র্যান্ড বানাতে চান। আপাতত ব্যবসা করতে গিয়ে ইলিশ চেনার পাশাপাশি মানুষ চেনার সুযোগও তাঁর হচ্ছে। কাজ করতে করতে নতুন অভিজ্ঞতা ঝোলায় যোগ হচ্ছে। এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইলিশের বাড়িকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান আহামেদউল্যাহ।