পাট দিয়ে স্বপ্নপূরণ
নিজের গয়না বিক্রিসহ মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ইশরাত জাহান চৌধুরী। ঠিক করেছিলেন, বিশ্বের দরবারে বাংলার সোনালি আঁশ পাটকে পরিচিত করাবেন। ইশরাত জাহান বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘তুলিকা’ থেকে ইতালি, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম ও সুইডেনে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পাটের তৈরি ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন। মাস শেষে সব খরচ বাদে গড়ে লাখ তিনেক টাকা হাতে থাকছে। বললেন, ‘দেশীয় পাটের অপার সম্ভাবনা আছে। আর এ পাট দিয়েই আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গত তিন বছরে নিজস্ব একটি পরিচিতির পাশাপাশি বাংলাদেশকে, দেশের পাটকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারছি। সব মিলে আমি এখন বেশ ভালো আছি।’
রাজধানীর উত্তরায় তুলিকার কারখানায় বসে ইশরাত জাহান তাঁর স্বপ্নপূরণের কথাই বলছিলেন। হাসতে হাসতে বলেন, প্রথমবার বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান হয়। তবে ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে সব কাগজপত্র দালালকে না ধরে নিজেই করার কারণে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।
ইশরাত জাহান বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করতেন। মেয়ের জন্মের পর চাকরিটা ছাড়তে হয়। তবে নিজে একটি কিছু করতে চাইছিলেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে পণ্য আসে, নিজের দেশের এমন কোনো পণ্য নেই, যা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব, সে চিন্তা থেকেই পাট নিয়ে কাজ শুরু করেন। কাজ শুরুর আগে পাট বিষয়ে পড়াশোনা করেন। প্রশিক্ষণ নেন। বললেন, ‘হুট করে কাজ শুরু করলে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা বেশি।’
কুমিল্লার মেয়ে ইশরাত পলিটিক্যাল সায়েন্সে এমএ করেছেন। এমবিএ করেছেন। স্বাধীনচেতা ইশরাত বললেন, ‘বিশ্ববাজারে পাটের বিশাল চাহিদা আছে। পণ্য রপ্তানির কথা মাথায় ছিল বলে বিশ্বব্যাপী পণ্য বাজারজাতকরণের ওয়েবসাইট আলিবাবা ডটকমের গোল্ড মেম্বারশিপ শুরুতেই নিয়ে নিই। এতে আমার কাজটা সহজ হয়।’
ইশরাত বলেন, ‘ব্যবসার শুরুতে মা, বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা স্বামী তাওহীদুল হাসানসহ অনেকের মনেই খানিকটা দ্বিধা ছিল। এখন ব্যবসার প্রয়োজনে মানুষ টাকা দিতে আর দ্বিধা করেন না।
ইশরাত বললেন, নতুন উদ্যাক্তাদের ব্যবসাসংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাওয়া বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। আর নতুন উদ্যোক্তাদের সরকারকে বিশ্বাস ও ভরসা করতে হবে। সরকার ৪ শতাংশ সুদে ৫ বা ১০ লাখ টাকা দিলে একজন উদ্যোক্তা দাঁড়াতে পারবেন। পণ্যটা কোথায় বিক্রি করবেন, তাও বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। নতুন উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির জন্য জায়গা দিতে হবে।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পারিবারিক সহায়তা পাওয়া জরুরি বলে মনে করেন ইশরাত।