চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ

তারুণ্যের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
তারুণ্যের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
>বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি সেবাদাতা কোম্পানি উবারের নিজের কোনো ট্যাক্সি নেই, সবচেয়ে বড় অনলাইন মাধ্যম ফেসবুক নিজে এক লাইনও কনটেন্ট তৈরি করে না, সবচেয়ে বড় দোকান আলিবাবার কোনো নিজস্ব গুদামঘর নেই, এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্যটন আবাসন উদ্যোগ এয়ারবিএনবির নেই নিজস্ব কোনো হোটেল বা ডরমিটরি! অথচ এই কোম্পানিগুলো প্রতিটিই এখন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে পৃথিবীর মানুষকে। কোটি কোটি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আর কম্পিউটারের ওপর চড়ে বসে রোবটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস এবং ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার বিশ্বজুড়ে সূচনা করেছে নতুন এক বিপ্লবের, যার নাম ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম আলোর উদ্যোগে ১১ জুন আয়োজন করা হয় ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বৈঠক।

কয়েক বছর ধরে আমাদের টিভি নাটক, সিনেমা, গল্প, উপন্যাস এমনকি সংবাদপত্রের কলামের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেটের কোনো অনুষঙ্গ। বিশ্বের প্রতি তিনজনের একজন ফেসবুক ব্যবহার করেন! আর কোনো পণ্য বা সেবার বেলায় এমনটি কিন্তু হয়নি। ‘নিছক’ একটি ওয়েবসাইট যার পণ্য বা সেবাকে ধরার উপায় নেই; কিন্তু বাজার মূলধন ৫০০ কোটি ডলারের বেশি! ফেসবুক বন্ধ থাকলে দেশে দেশে মন্ত্রীদের জবাবদিহিও করতে হয়! এ রকম নানা কিছু ঘটছে এখন তথ্যপ্রযুক্তি, ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট বা ইন্টারনেট অব থিংসকে কেন্দ্র করে। আর এসব ঘিরে পরিবর্তনকে এখন বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াইব ২০১৬ সাল থেকে প্রথম এই বিপ্লবের কথা বলতে শুরু করেছেন। এখন বিশ্বজুড়ে চলছে এ নিয়ে নানা চিন্তা, বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও একুশ শতকের চাহিদা নিরূপণ। ইতিহাসের হিসাবে প্রথম শিল্পবিপ্লব হচ্ছে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের উদ্ভাবন। পানি আর বাষ্পের ব্যবহার উৎপাদন বৃদ্ধি করে। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব হলো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গণ–উৎপাদন। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব হলো ইলেকট্রনিকস আর তথ্যপ্রযুক্তির নানামুখী ব্যবহার। আর এই তৃতীয় বিপ্লবের ওপর ভর করেই এখন একটি নতুন বিপ্লব—চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয়েছে। এ হচ্ছে প্রযুক্তির একধরনের মিথস্ক্রিয়া; যার ফলে ভৌত জগৎ, ডিজিটাল জগৎ আর জীবজগতের মধ্যে পার্থক্যটা হয়ে যাচ্ছে বায়বীয়।
কয়েক শ কোটি লোকের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকা, অকল্পনীয় প্রসেসিং আর স্টোরেজ ক্ষমতা এবং সহজে জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশাধিকারের ফলে কোথায় যে সভ্যতা যাবে, তা চিন্তা করাটাও কঠিন। কারণ, উন্মোচিত হয়ে গেছে এক নতুন দুনিয়া। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবে সবকিছুতে একটা ভ্যাবাচ্যাকা লেগে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, নিজে চলা গাড়ি, ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং, ন্যানোটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, শক্তি সঞ্চয় কিংবা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। অন্য তিন বিপ্লবের মতো এই বিপ্লব নয়। উবার আর পাঠাও এরই মধ্যে রাজধানীবাসীর দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ১০ হাজারের বেশি নারী উদ্যোক্তা ফেসবুকে খুলে বসেছেন তাঁদের ‘ছোট্ট দোকান’। তাঁদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে একাধিক কুরিয়ার কোম্পানি! দ্রুত ঘটছে এ পরিবর্তনগুলো। আর এই পরিবর্তনের সুফল বা কুফল দুটোই যাবে তরুণদের ওপর দিয়ে। এ নিয়ে কী ভাবছে বাংলাদেশের তারুণ্য? তা জানতে আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়কারী মুনির হাসান। তারপরই আলোচনা আগাতে থাকে পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে।

চ্যালেঞ্জ যত, সম্ভাবনা তত
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বৈঠকে ডিনেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল হোসেন বললেন, কীভাবে তাঁরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রসূতি ও গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়েছেন। এখন ভাবছেন কীভাবে সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটানো যায়। তিনি আরও বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দারিদ্র্য বিমোচনের দারুণ এক উপলক্ষ হতে পারে। এ জন্য স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে, বিভিন্ন আঙ্গিকের ব্যবহার আয়ত্ত করতে হবে আমাদের।’ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে মানুষের আয়ু বাড়বে আর তাতে স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ হতে পারে সবচেয়ে বেশি। সেই বিষয় সামনে রেখে তরুণদের স্বাস্থ্য খাতসহ নতুন নতুন উদ্যোগ ও নতুন দক্ষতার ওপর জোর দেওয়ার কথা জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান। তিনি বলেন, তরুণদের যেমন জানতে হবে, তেমনি তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে হবে।

সুযোগ না সংকট?
নানামাত্রিক দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পেলে তরুণেরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে করেন আলোচকেরা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য তরুণেরা নিজেরাই তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা করেন নতুন উদ্যোগে প্রাথমিক বিনিয়োগকারী এম আসিফ রহমান। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তরুণেরা এমনিতেই সচেতন, তারা নতুনকে দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারে। তরুণদের কাজ দেখানোর সুযোগ করে দিলে, উৎসাহ দিলে তারা ইতিবাচকভাবেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে গ্রহণ করবে। তরুণদের নানামাত্রায় সুযোগ আসবে সামনে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলির শিক্ষার্থী কাশফিয়া নেহরিন সম্ভাবনাকে বিস্তৃত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সৃজনী চিন্তাকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণদের চিন্তাশক্তি বিকাশের জন্য নানা সুযোগ তৈরি করা দরকার, যাতে তারা নিজেদের তৈরি করে নিতে পারে। বেশির ভাগ আলোচকই ভাবছেন ঝুঁকির চেয়ে সম্ভাবনাই বেশি।

যন্ত্র বনাম মানুষের যুদ্ধ
আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবে যন্ত্র দিয়ে মানুষ বদলে ফেলেছে নিজের দৈনন্দিন কাজ ও সভ্যতাকেও। যন্ত্র আর মানুষ নিজ নিজ অবস্থানে স্বতন্ত্র। কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এ বিভাজনের দাগটাকে মুছে ফেলছে। এখন প্রতিদিনই কোটি কোটি মানুষকে যন্ত্রের কাছে পরীক্ষা দিতে হয় ‘আমি রোবট নই’ বলে প্রমাণ করে। কারও কারও ধারণা, যন্ত্র বনাম মানুষের যুদ্ধে প্রযুক্তির নান্দনিকতায় মানুষ অনেকটাই পিছিয়ে পড়তে পারে। ইস্টার্ন টেকের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞ কাজী এম মুর্শেদ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। সমস্যা সমাধানকেন্দ্রিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রযুক্তি খুব দ্রুত জায়গা করে নেয়। প্রযুক্তিকে ইতিবাচক উপায়ে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন সমস্যার নান্দনিক সমাধানের জন্য সার্বিকভাবে সহায়ক পরিবেশের দরকার।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ
দক্ষিণ কোরিয়ায় তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য নানামাত্রিক সুযোগ আছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া নিজেকে বদলে ফেলেছে। সেই কোরিয়ার একটি স্টার্টআপ িবষয়ক উদ্যোগে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তালহা ট্রেনিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আলম। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবেশটিই উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর পরিবেশ। সেখানকার সরকার তরুণদের উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কেবল অর্থায়ন নয়; বরং মেন্টরিং, আইনি সহায়তা থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার জন্যও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে বিভিন্ন শিল্প খাতে নানামাত্রায় ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

বহুমাত্রিক সৃজনশীলতা
বৈঠকে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার কানিজ ফাতেমা ইন্টারনেটভিত্তিক সমাজের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে কথা বলেন। তাঁর ভাষ্য, ইন্টারনেটকে বহুমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। এখনকার পেশাজীবীদের আগামী দশকের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে এবং সেভাবে নিজের দক্ষতাকে বিকশিত করতে হবে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা রিসোর্স ব্যবহার করে নিজেকে গড়ে নিতে হবে। আবার আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো না জানলে নতুন ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা জানতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণেরা। এ কারণে সবার জন্য সাশ্রয়ী ব্রডব্যান্ডের দাবি তুললেন সবাই। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল শেপার্স ঢাকার কিউরেটর সোহারা মেহরোজ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ডাভোস সম্মেলনের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা বললেন। বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের জন্য নিজেকে তৈরি করতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে। তরুণদের দক্ষতা প্রমাণের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হওয়া চলবে না। বহুমাত্রিক উপায়ে তরুণদের ভাবনা তরুণদেরই প্রকাশ করতে হবে।

সামনে যত বাধা
ভবিষ্যতের কথা যেমন ভাবতে হবে, তেমনি বর্তমানের সমস্যাগুলোর সমাধানেও মনোযোগ দিতে হবে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, বিগ ডেটাসহ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে কেবল ভবিষ্যতের জন্য তুলে না রেখে বর্তমানের সমস্যা সমাধানেও তার ব্যবহারে জোর দিলেন ব্র্যাক সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাবের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জলি সরকার। তাঁর মতে, স্যানিটেশনের সুযোগ এখনো সবার কাছে পৌঁছায়নি। স্যানিটেশনসহ মানুষের নিত্যদিনের নানা সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। ইন্সপিরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসালটিংয়ের নির্বাহী পরিচালক মুনতাসির তাহমীদ তথ্য ও পরিসংখ্যানভিত্তিক সমাজ ও বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আবেগ ও অনুমাননির্ভরতার পরিবর্তে উপাত্ত-পরিসংখ্যানে আমাদের জোর বাড়াতে হবে।’

যত সম্ভাবনা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। এ সময় দক্ষ নেতৃত্ব ও গুণগত শিক্ষার ওপর জোর দেন ইনোভেশন ইন ডেভেলপমেন্ট পারস্যুটের নির্বাহী পরিচালক হামিদ এইচ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো জরুরি। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের। শিক্ষার বহুমাত্রিকতা আগামীর নেতৃত্ব গঠনে ভূমিকা রাখবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের বানানো স্যাটেলাইট “ব্র্যাক অন্বেষা” এখন মহাকাশে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা টেক্কা দিচ্ছে নামীদামি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।’ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণা, সরকার ও শিল্প খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকাটা জরুরি মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে করেই হোক গবেষণায় আরও অর্থ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোভালেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট তারিক আদনান বলেন, ‘আমাদের তরুণদের চিন্তা করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পড়াশোনায় বৈচিত্র্য বাড়ানো দরকার। আমাদের যেমন গণিত নিয়ে পড়তে হবে, তেমনি পড়তে হবে শিল্প–সংস্কৃতি নিয়ে। প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন প্রাথমিক দক্ষতা সবার মধ্যে থাকা এখন ভীষণ জরুরি।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অতন্দ্র আবরার আহমেদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হাসান।

মোকাবিলার ১০ দক্ষতা
* জটিল সমস্যা সমাধানে দক্ষতা
* ক্রিটিক্যাল চিন্তা
* সৃজনশীলতা
* জনব্যবস্থাপনা
* অন্যদের সঙ্গে সমন্বয়
* আবেগীয় বুদ্ধি
* বিচার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা
* সেবামুখিতা
* চুক্তির দক্ষতা
* খাপ খাওয়ানোর জ্ঞান

সুপারিশ
* সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা
* বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প খাতগুলোর মধ্যে গবেষণাকেন্দ্রিক সম্পর্ক স্থাপন, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি
* বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অধিক হারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য সুযোগ প্রদান
* সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুযোগ বাড়াতে হবে। অর্থায়নের পাশাপাশি মেন্টরিং, আইনি সহায়তা এবং মার্কেটে প্রবেশাধিকারের সহায়তাও তাদের দরকার
* শিক্ষার্থী ও তরুণদের ব্যবহারিক শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পলিটেকনিক ঘরানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি ও বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে
* বহুমাত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ রাখতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞান, লিবারেল আর্টস, নন্দনকলার বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ বাড়াতে হবে
* শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন খাতে বর্তমান সমস্যাগুলোকে প্রযুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে সমাধানে গুরুত্ব দিতে হবে
* প্রযুক্তিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে

যাঁদের অংশগ্রহণ
সিরাজুল হোসেন
প্রধান নির্বাহী, ডিনেট
হামিদ এইচ খান
নির্বাহী পরিচালক, ইনোভেশন ইন ডেভেলপমেন্ট পারস্যুট
খলিলুর রহমান
সহযোগী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
রাশেদুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কাজী এম মুর্শেদ
প্রধান বিপণন কর্মকর্তা, ইস্টার্ন টেক
কানিজ ফাতেমা
জেনারেল ম্যানেজার, রবি আজিয়াটা লিমিটেড
অঞ্জলি সরকার
জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক, ব্র্যাক সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাব
এম আসিফ রহমান
প্রাথমিক বিনিয়োগকারী
মুনতাসির তাহমীদ
নির্বাহী পরিচালক, ইন্সপিরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসালটিং
শফিউল আলম
প্রধান নির্বাহী, তালহা ট্রেনিং
কাশফিয়া নেহরিন
শিক্ষার্থী, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলি, যুক্তরাষ্ট্র
তারিক আদনান
প্রতিষ্ঠাতা, কোভালেন্ট
সোহারা মেহরোজ
কিউরেটর, গ্লোবাল শেপার্স ঢাকা
অতন্দ্র আবরার আহমেদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আবদুল্লাহ হাসান
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়