হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকড হয় যেভাবে
হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি করতে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করেন সাইবার জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমনই একটি সফটওয়্যারের নাম পেগাসাস। ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের তৈরি সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি করা যায়। ভারতে গত লোকসভা নির্বাচনে পেগাসাস সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে দুই ডজনের বেশি শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদের ওপর নজরদারি করা হয়েছে। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, গত নির্বাচনের আগে হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য নজরদারিতে ইসরায়েলি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়েছে। সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি বা নজরদারি প্রয়োজনে এনএসও গ্রুপ পেগাসাস নামের সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে। তবে এ সফটওয়্যার দিয়ে ঠিক কতজনের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে, সে তথ্য জানা যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীকে তাদের ডিভাইসে নজরদারির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলাও করেছে ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ। ওই মামলার পরের দিনই হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির তথ্য জানা গেল। মামলায় হোয়াটসঅ্যাপ অভিযোগ করেছে, পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বের ১ হাজার ৪০০ ব্যক্তিকে নজরদারি করেছে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠানটি।
মামলায় ফেসবুকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পেগাসাস সফটওয়্যার দিয়ে আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড ও ব্ল্যাকবেরি অপারেটিং সিস্টেমে চালিত স্মার্টফোনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। হোয়াটসঅ্যাপের ভিওআইপি স্টাকের ত্রুটি কাজে লাগিয়ে ডিভাইসে দূর থেকে কোড বসানো যায়।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রুয়ান্ডা থেকে ইংল্যান্ডের লিডসে নির্বাসিত জীবনযাপন করা ফস্টিন রুকুন্ডু তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকড হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন । তিনি বলেন, তাঁর কাছে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল আসে। তিনি কল ধরলে কেউ কথা না বলে তা রেখে দেওয়া হয়। তাঁর অজান্তে তাঁর ফোন হ্যাকড হয়ে যায় এবং সেখান থেকে ফাইল সরিয়ে ফেলতে দেখেন তিনি। তাঁর ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে মিস কল আসা শুরু হয়। তিনি পরিবারের নিরাপত্তার ভয়ে নতুন ফোন কিনে ফেলেন। কয়েক দিন পরে সেখানেও অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসা শুরু করে।
ফস্টিন অভিযোগ করেন, রুয়ান্ডার সরকারবিরোধী আরও অনেকের কাছেই এ রকম অপরিচিত নম্বর থেকে কল এসেছে বলে
তিনি জানতে পেরেছেন। গত মে মাসে তিনি জানতে পারেন হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকড হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ বছরের মে মাসে হোয়াটসঅ্যাপে ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে নেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আগস্ট মাসেও হোয়াটসঅ্যাপের ত্রুটি সামনে আসে। ওই সময় বিবিসি জানায়, হোয়াটসঅ্যাপে আপনি যা বলেননি বা যা লেখেননি, তা-ই দেখাতে পারে। চাইলে দুর্বৃত্তরা বিশেষ প্রোগ্রাম ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা বদলে দিতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপ প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর বার্তা বদলে দেওয়ার টুল সম্প্রতি উন্মুক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে, যা কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীর কোনো কথা বা শব্দ বদলে ফেলা যায়।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান চেকপয়েন্টের গবেষকেরা দাবি করেন, হোয়াটসঅ্যাপের ত্রুটি বের করার পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তা বদলে ফেলার টুল বা প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। হোয়াটসঅ্যাপের ত্রুটি কাজে লাগিয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো বা প্রতারণা করা যায়।
পেগাসাস কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপে আসে? বিশেষজ্ঞরা বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে সামান্য ভিডিও মিস কল দিয়েও পেগাসাস ডাউনলোড করে ফেলা যায়। ভিডিও কল দেওয়ার পর পেগাসাস ইনস্টল হলে তা পুরো স্মার্টফোনের কনটাক্ট লিস্টসহ পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। যাবতীয় বিষয়টি ব্যবহারকারীর অজান্তেই ঘটে যায়। ওই মেসেজিং অ্যাপ থেকেই পরে চাইলে ভিডিও কলের কথাবার্তা, বার্তাসহ নানা তথ্য বের করে নিতে পারেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
এনএসও গ্রুপের দাবি, তাদের তৈরি সফটওয়্যার শুধু সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিক্রি করে তারা। তবে এ সফটওয়্যার মানবাধিকার কর্মী বা সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি করার জন্য তৈরি বা অনুমোদন দেওয়া হয় না।