ভবিষ্যদ্বাণী করা জিপসিদের সঙ্গে প্রযুক্তি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা মানুষদের বেশ মিল। তাঁরা কেউই ভবিষ্যৎ জানেন না। আবার বাণী দিতেও ছাড়েন না। তাঁরা যা করেন, বর্তমানটা দেখেন, অতীতটা জেনে নেন, এরপর নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের অনুমানটা বলেন।
নতুন এক বছর শুরু হলো আজ। গত মাসজুড়েই প্রযুক্তিবিদেরা বছরটা নিয়ে তাঁদের অনুমান জানিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করেছি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অনুমানটা জানানোর। উৎস হিসেবে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেলিনর রিসার্চ এবং সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, গত বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা প্রযুক্তি যেমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা এবং ক্রিপটোকারেন্সি মানুষের হাতের নাগালে আসবে।
অ্যাপে অগমেন্টেড রিয়েলিটি
অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) ব্যবহার যে শুধু স্মার্ট চশমায় সীমাবদ্ধ নয়, তা স্মার্টফোন গেম ‘পোকেমন গো’ দেখিয়েছে। নতুন বছরে সেই স্মার্টফোনের অ্যাপ ঘিরেই এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে বলে মত দিয়েছেন স্যান্ডবার্গ। আইফোনের নতুন আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে আগে থেকেই অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তির সমর্থন আছে। এতে অ্যাপ ডেভেলপারদের হাতের নাগালে এআর চলে এসেছে। তাই বছরটাতে আশা করতে পারেন, এআর প্রযুক্তির প্রচুর অ্যাপ দেখতে পাওয়া যাবে।
ফাইভজির চমক
পঞ্চম প্রজন্মের মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বা ফাইভজি প্রযুক্তি এবং সেই প্রযুক্তির স্মার্টফোন পাওয়া যেতে পারে। ফোরজির তুলনায় ফাইভজি ১০ গুণ বেশি গতির হবে। এতে ইন্টারনেটের সংজ্ঞা, সর্বোপরি মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বদলে যাবে।
‘সোশ্যাল’ কম, ‘মিডিয়া’ বেশি
২০১৮ সালজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কম পোস্ট করবে। নিউজফিডে প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু কমবে। বাড়বে পেইড কনটেন্ট বা বিজ্ঞাপন। গত বছর মার্কিন নির্বাচনের আগে ফেসবুকে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে পড়ায় ব্যবহারকারীরা বেশ সচেতন-সোচ্চার হয়ে ওঠেন। প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তুর অভাববোধ থেকে তারা হয়তো অন্য কোনো মাধ্যমে খবরের খোঁজ করবে, নিজেদের ডিজিটাল পরিচয় প্রতিষ্ঠা এবং আত্মীয়-বন্ধুদের খোঁজ নেবে অন্য কোনো মাধ্যমে। ফেসবুক তখন মেসেঞ্জার ও গ্রুপসের মাধ্যমে যোগাযোগ কিংবা সমন্বয়ের প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে বলে মনে করেন টেলিনর রিসার্চের প্রধান বিয়র্ন স্যান্ডবার্গ।
রোবট দেখা যাবে সব জায়গায়
এ বছর রাস্তায় নেমে আসবে রোবট। ভয়ের কিছু নেই। এখনই মানুষের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াচ্ছে না তারা। রেস্তোরাঁ কিংবা হাসপাতালে মানুষকে সাহায্য করতে বা খাবার সরবরাহের কাজে রোবট নিয়ে কাজ করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এই রোবটগুলো জিপিএস, সেন্সর ও ক্যামেরার সাহায্যে চলাচল করে। ২০১৮ সালে এমন রোবটের ব্যবহার বাড়বে।
হাতের নাগালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং, বিশেষ করে ডিপ লার্নিংয়ের বদৌলতেই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কিংবা মুখের অঙ্গভঙ্গি বোঝার প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই এই দুই প্রযুক্তি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, প্রযুক্তিপ্রেমীরা অপেক্ষা করেছে আগ্রহের সঙ্গে। ২০১৮ সালে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখা যাবে। ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ‘কবজা’ থেকে বেরিয়ে তখন অন্যান্য বাজারেও ডিপ লার্নিংয়ের প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে। ডিপ লার্নিং নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। ফলে মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আর্থিক খাতে বাড়বে প্রযুক্তির ব্যবহার
২০১৮ সালে, বিশেষ করে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাংকিং খাতে ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটির ব্যবহার বাড়বে। ইউরোপে লেনদেনসেবা নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হবে। এতে আর্থিক খাতের প্রযুক্তি বা ফিনটেক-ভিত্তিক স্টার্টআপগুলো ব্যাংক গ্রাহকদের তথ্য কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। এতে ব্যাংকিং খাতে নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বছরটাতে আমাদের ব্যবহার করা অনেক যন্ত্র যেমন চাবির রিং, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটে যুক্ত গাড়ি, স্মার্টঘড়ির মতো যন্ত্রগুলো লেনদেনের যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হবে।