সংবাদমাধ্যম হতে চায় না ফেসবুক, বিতর্কিত 'ট্রেন্ডিং' সেকশন বাদ

ফেসবুকের ট্রেনিং সেকশন বাদ যাচ্ছে
ফেসবুকের ট্রেনিং সেকশন বাদ যাচ্ছে


সংবাদমাধ্যম হতে চায় না ফেসবুক। তাই সাইটের বিতর্কিত ‘ট্রেন্ডিং’ ফিচারটিকে আগামী সপ্তাহ থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি। আজ শনিবার ফেসবুক এ ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যতে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা দিতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

প্রশ্ন থাকতে পারে, নতুন কী আসবে ফেসবুকে? ফেসবুক বলছে, তারা নিউজ ভিডিওর জন্য নির্দিষ্ট ফিচার ‘ফেসবুক ওয়াচ’কে গুরুত্ব দেবে। এটি মূলত ইউটিউবের মতো ফেসবুকের ভিডিও হাব। এ ছাড়া পোস্টে ব্রেকিং নিউজের লেবেল লাগাতে পারবেন সংবাদ প্রকাশকেরা। এ ছাড়া ‘টুডে ইন’ নামে ফেসবুকে একটি নির্দিষ্ট সেকশন থাকবে। ওই সেকশনে স্থানীয় সংবাদ প্রকাশকেরা তাঁদের শহরের বিভিন্ন মানুষকে তথ্য ও খবরের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন। এ ছাড়া এখানে বিভিন্ন স্থানীয় কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আপডেট রাখা হবে।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ বলছে, বর্তমানে ৮০টির বেশি সংবাদ প্রকাশক প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের ‘ব্রেকিং নিউজ’ লেবেল নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এতে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল, মোবাইল ও ওয়েল লিংক ও ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে ব্রেকিং নিউজ ফ্ল্যাগ লাগানোর সুযোগ থাকবে বলে ফেসবুক তাদের জানিয়েছে।

ফেসবুকের ভাষ্য, ব্রেকিং নিউজ ট্যাগ লাগানোর পরীক্ষায় দেখা গেছে, লিংকে ক্লিক করার হার ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া লাইক বেড়েছে ৭ শতাংশ, শেয়ার বেড়েছে ১১ শতাংশ। অবশ্য এ পরীক্ষাটি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে।

‘টুডে ইন’ ফিচারটির যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩টি শহরে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

ফেসবুকের ভাষ্য, টুডে ইন সেকশনে যাদের তুলে ধরা হবে, তাদের আউটবাউন্ড ক্লিক ৮ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে।

অবশ্য ফেসবুকের খবরকে গুরুত্ব দিয়ে চালু করা ভিডিও হাবটি কবে নাগাদ চালু হবে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি ফেসবুক। শিগগিরই চালু করার কথা বলছে তারা। ফেসবুকের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এ ভিডিও হাবটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ থেকে ১২টি সংবাদ প্রকাশক খবরের অনুষ্ঠান চালাবে। এতে কোনো ঘটনা সরাসরি দেখানো, দৈনন্দিন অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান দেখানো হবে। তবে ওই প্রকাশকদের তালিকা দেয়নি ফেসবুক।

সম্প্রতি ভুয়া খবর প্রচার ঠেকানোর অভিযোগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে বঠোর সমালোচনার মুখে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানায় ফেসবুক। এ পরিবর্তন তারই অংশ। এর আগে ফ্যাক্ট চেকিং, প্রকাশকের তথ্য প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট খবর, ভুয়া খবর নিউজ ফিডে দেখানো বন্ধ করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বেশ কিছুদিন ধরেই ‘ট্রেন্ডিং’ সেকশন নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে ফেসবুক। এর অ্যালগরিদমে বিভিন্ন খবর নির্বাচন নিয়েই এ বিতর্ক। অ্যালগরিদম নিখুঁতভাবে সংবাদ বাছাই করতে পারে না বলে প্রায়ই ভুয়া খবর ট্রেন্ডিং হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভুয়া খবরের সমালোচনার মুখে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গকে এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। সম্প্রতি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির ঘটনায় শুনানিতে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ফেসবুক সংবাদমাধ্যম নয়, এটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তথ্য ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট তৈরিতে অর্থ পরিশোধের কথা স্বীকার করেন তিনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুকের মতো সাইট যেখানে সার্চ সুবিধা আছে, সেখানে ট্রেন্ডিং না থাকাটা অস্বাভাবিক। কারণ, গুগলের ট্রেন্ডিং বিষয়ক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন পণ্য আছে। এমনকি টুইটারেও এ সুবিধা আছে।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে ট্রেন্ডিং আর ফেরানো হবে না বলেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরের সপ্তাহ থেকে ফেসবুকসহ থার্ড পার্টি এপিআইগুলোতে এটি আর পাওয়া যাবে না।

ফেসবুকের নিউজ প্রোডাক্টসের প্রধান অ্যালেক্স হার্ডিম্যান বলেছেন, ‘চারপাশে কী ঘটছে, মানুষ সে সম্পর্কে জানতে চায়। মানুষ ফেসবুকে যেসব খবর দেখে তা যেন উচ্চমানসম্পন্ন হয়, আমরা তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ব্রেকিং নিউজের ক্ষেত্রে মানুষের আকর্ষণ ধরে রাখতে বিনিয়োগ করছি।’