২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি করা ল্যাপটপ কম্পিউটার, প্রিন্টার ও প্রিন্টারের টোনারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ইন্টারনেটের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রযুক্তি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলো। প্রথম আলোর কাছে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রযুক্তিপণ্য ও ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ও কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের পাঁচ সংগঠন বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্য ও ই-ক্যাবের সভাপতিরা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এই সময় ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, প্রিন্টার ও প্রিন্টারের টোনারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ডলারের মূল্য বাড়ায় এমনিতেই প্রযুক্তিপণ্যের দাম গড়ে ৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। আরও ১৫ শতাংশ বেড়ে গেলে সাধারণ ল্যাপটপের দাম ৫০ হাজার টাকা হবে। আমরা যেসব ব্যান্ডের ল্যাপটপ ও প্রিন্টার আমদানি করি, সেগুলো কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি হয় না। অপরদিকে প্রিন্টারের টোনারের দামও বাড়বে। আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতাই তরুণ। ফলে তাঁদের পক্ষে বাড়তি অর্থ খরচ করে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারসহ প্রিন্টার কেনা সম্ভব হবে না। তাই ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, প্রিন্টার ও প্রিন্টারের টোনারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।’
দেশের সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘ইন্টারনেট, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের ওপর হঠাৎ করে ভ্যাট ও কর আরোপ করা হয়েছে, যা ঠিক হয়নি। বাজেটে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হয়নি। স্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি না করে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা ঠিক হয়নি। আমাদের দাবি ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের ভ্যাট এবং ইন্টারনেটের ওপর কর প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা দিতে হবে।’
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘বাজেটে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল আমদানিতে আরও ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইন্টারনেট সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সে হিসাবে আমদানি করা কেবলের ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো মানে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে গ্রাহক পর্যায়েও খরচ বাড়বে। দেশে যে কেব্ল তৈরি হয়, তা মানসম্পন্ন নয়। আমাদের দাবি, আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইটিএস খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর এবং অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল আমদানির করও প্রত্যাহার করতে হবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, বাজেটে ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে আমাদের বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) খাতে সমস্যা হবে। কারণ, ভ্যাট আরোপ হলে খরচ বাড়বে, ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের কাজ করাতে চাইবে না। সমস্যা সমাধানে ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘বাজেটে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু এই উদ্যোক্তারা যখন সেবা দিতে যাবেন, তখন ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমস্যায় পড়বে। কেননা একজন উদ্যোক্তার কাজ করার সময় সবচেয়ে প্রয়োজন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। সেগুলোতেই যদি ভ্যাট আরোপ করা হয়, তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবে। বর্তমানে দেশে ই-কমার্স খাত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে যদি ল্যাপটপ, কম্পিউটারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ইন্টারনেটের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয় তবে উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়বেন। আমাদের এখন এগোনোর সময়, কিন্তু ভ্যাট বা কর আরোপ হলে পিছিয়ে যাব।’