যে কারণে জেমস বন্ডের হাতে আইফোন দেখা যায় না

জেমস বন্ড সিরিজের ‘নো টাইম টু ডাই’ সিনেমার একটি দৃশ্যএমজিএম

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ‘নো টাইম টু ডাই’ এই এল বলে। আগামী ৮ অক্টোবর মুক্তির কথা রয়েছে জেমস বন্ড সিরিজের নতুন সিনেমা। অপেক্ষা তো থাকবেই। বন্ড বলতে পাগল যাঁরা, তাঁরা কেবল সিনেমার শৈল্পিক দিক দেখে ক্ষান্ত হন না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন ডাবল-ও সেভেনের ব্যবহৃত অনুষঙ্গগুলোও। আজ দেখা যাক, বন্ড আইফোন ব্যবহার না করে অ্যান্ড্রয়েড-নির্ভর স্মার্টফোন হাতে তোলেন কেন, সেটা হোক না পর্দায়।

বাস্তব জীবনে একজন স্পাইয়ের কেমন গ্যাজেট ব্যবহার করা উচিত, তা দেখার আগে চলুন দেখি আসন্ন সিনেমায় জেমস বন্ড সঙ্গে কী রাখছেন। মুঠোফোনের কথা বললে নকিয়া ৩৩১০, নকিয়া ৭.২ ও নকিয়া ৮.৩ ফাইভ–জি। অবাক হওয়ার কিছু নেই। দিন শেষে এটা তো সিনেমা। আর সিনেমায় বিজ্ঞাপনের ব্যাপার তো থাকেই। কিন্তু তাই বলে পুরোনো ফোন? ফোন তিনটি বাজারে আসার কথা ছিল যথাক্রমে ২০০০ সালে, ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে ও ২০২০-এর অক্টোবরে। করোনায় বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে ‘নো টাইম টু ডাই’-এর মুক্তির দিন। শুটিংয়ের সময় হয়তো সেগুলো হালের ফোন ছিল, এখন আর নেই।

সে না হয় মানা গেল। তবে ব্রিটেনের কাল্পনিক স্পাই কেন নকিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধতে গেলেন? বিশেষ করে যে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বাজারে নিবুনিবু। সেটার কারণ হয়তো ওই বিজ্ঞাপন।

সিনেমায় জেমস বন্ডের পুরোনো স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ে ওয়্যার্ড সাময়িকী কথা বলেছে জেমস হ্যাডলির সঙ্গে। তিনি সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও দক্ষতাবিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ইমার্সিভ ল্যাবসের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা। আগে কর্মরত ছিলেন যুক্তরাজ্যের গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টার্সে। তিনি বলেন, যদি পুরোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন দেওয়া হয়, তবে বন্ডের দেখা উচিত, নতুন সফটওয়্যার–ত্রুটির ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে কিউ (কাল্পনিক জিনিয়াস চরিত্র) সেটার অপারেটিং সিস্টেম হালনাগাদ করেছে কি না।

আধুনিক স্পাইয়ের জন্য পুরোনো ফোন ঠিক মানানসই না হলেও জেমস হ্যাডলি কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা দেখেন না। তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছেন ‘আনস্মার্ট’ ফোন ব্যবহারে বিশ্বাসী। কারণ, স্মার্টফোন না হলে সে ফোন সফটওয়্যারের ওপর কম নির্ভরশীল হয়ে থাকে। তাতে অবশ্য বন্ডের ইন্টারনেট-নির্ভর অ্যাপগুলোর ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন
জেমস বন্ড চরিত্রে ড্যানিয়েল ক্রেইগ
এমজিএম

ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ইসেটের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জেক মুর ওয়্যার্ড সাময়িকীকে বলেন, পুরোনো ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তাঝুঁকি সচরাচর বেশি হয়ে থাকে। তবে কোনো ডিভাইস যদি ঠিকঠাক সেটআপ করা হয়, তবে অ্যান্টিট্র্যাকিং ও অ্যান্টিসারভেইলেন্স ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য ত্রুটি কমিয়ে আনতে পারে।

এবার আসা যাক, জেমস বন্ড যদি সবশেষ প্রযুক্তির স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন, তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াত। জেক মুরের মতে ডাবল-ও সেভেনের জন্য আইফোন কোনো ভালো অপশন হতো না।

জেমস বন্ডের ফোনে অ্যান্টিসারভেইলেন্স, অ্যান্টি-ইন্টারসেপশন ও অবস্থান গোপন রাখার প্রযুক্তি আবশ্যক। আইফোনের সফটওয়্যার যেভাবেই সম্পাদনা করা হোক না কেন, এই সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে না। সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য আইফোনের নিরাপত্তা চমৎকার। তবে পেগাসাসের মতো নজরদারির স্পাইওয়্যারের সামনে সেটা নস্যি। একজন স্পাইয়ের জন্য এমন ফোন নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।

ইসরায়েলি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার স্মার্টফোনে ঢুকে ব্যবহারকারীর ওপর নজর রাখতে পারে। বার্তা কপি করতে পারে, কল রেকর্ড করতে পারে, এমনকি না জানিয়ে ফোনের ক্যামেরাও ব্যবহার করতে পারে। অ্যাপল এরই মধ্যে ত্রুটি সারানোর জন্য নিরাপত্তা হালনাগাদ করেছে।

জেক মুর আরও বলেন, জেমস বন্ড যদি আইফোন ব্যবহারকারী হতেন, তবে প্রতিপক্ষরা নিশ্চিতভাবেই তাকে লক্ষ্য করে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করত। বিস্ফোরণ ও গাড়ি ধ্বংসের ছবি ধারণের জন্য আইফোন ভালো হতে পারে, তবে গোপন নথি নামানোর জন্য নয়।

কেবল পেগাসাস নয়, নিরাপত্তাত্রুটির সুযোগ নিয়ে তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে, এমন অনেক স্পাইওয়্যারের খবর ইদানীং শোনা যাচ্ছে। এদিকে হ্যাডলি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার শতভাগ বাদ দিলেই কেবল এ ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

আইফোন ১৩ সিরিজের নতুন চারটি স্মার্টফোন
অ্যাপল

সেসব গেল কল্পকাহিনিনির্ভর ব্যাপার। হ্যাডলি বলেন, বাস্তব জীবনে যাঁরা সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা তথ্যের নিরাপত্তার জন্য আপাতত দুটি কাজ করতে পারেন। প্রথমত, সব সময় সব ধরনের সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অস্বাভাবিক যেকোনো কিছু চোখে পড়লেই তা খতিয়ে দেখতে হবে। আর ফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যত কম রাখা যায়, ততই ভালো। চাইলে সাংকেতিক ভাষায় কিংবা এনক্রিপশনযুক্ত তথ্য রাখা যেতে পারে।

মুর বলেন, সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ করা মানুষের জন্য সেরা অপশন হলো অ্যান্ড্রয়েড-নির্ভর স্মার্টফোন। কারণ, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে ফোনগুলোর ওপর ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক বেশি থাকে।

আরও পড়ুন