যত্নে রাখুন প্রযুক্তিপণ্য

ল্যাপটপ হোক বা ইয়ারফোন, যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। মডেল: নাজিফা তুশি, ছবি: অধুনা
ল্যাপটপ হোক বা ইয়ারফোন, যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। মডেল: নাজিফা তুশি, ছবি: অধুনা

প্রযুক্তিপণ্য এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। সারা দিনই আমরা কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির সংস্পর্শে থাকি। অনেক সময় নিত্যব্যবহৃত প্রযুক্তিপণ্যগুলোর যত্ন নিয়মিত নেওয়া হয় না। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্মার্ট ঘড়ি, হেডফোন, ডিজিটাল ক্যামেরার মতো পণ্য সঙ্গেই থাকে। নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে এ পণ্যগুলোতে ধুলাবালু বা পানি লাগতে পারে ও ময়লা হতে পারে। এখন করোনাভাইরাসের কারণে এসব পণ্য পরিষ্কার রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এসব পণ্যের যত্ন নিতে হবে। নাহলে অতিদ্রুত এসব জিনিস নষ্ট হয়ে যাবে। 

মুঠোফোন

মুঠোফোনের মতো দরকারি যন্ত্র বিকল হয়ে গেলে ঝামেলার শেষ থাকে না। বসুন্ধরা শপিং মলের নিক্বণ টেলিকমের বিক্রয় ব্যবস্থাপক নুরে আলম জানান, মুঠোফোনে ঘন ঘন চার্জ দেওয়ার দরকার নেই। অর্ধেক চার্জ শেষ হলে তবেই দিন চার্জ। অনেকে সারা রাত ফোনে চার্জ দেন। এটা ঠিক নয়। চার্জ পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুইচ খুলে রাখুন। অন্য সেটের চার্জার দিয়ে কখনো ফোন চার্জ দেওয়া উচিত না। 

মুঠোফোনে অন্য প্রস্তুতকারকের ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাটারির চার্জ কম দেখালে দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলা উচিত না। মুঠোফোনে পানি ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারি খুলে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। তারপর সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিত। মুঠোফোন হাত থেকে পড়ে গেলে ব্যাটারি খুলে আবার লাগান। ঠিক না হলে বিশেষজ্ঞ কারও সাহায্য নিন। কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস থেকে মুঠোফোনে গান বা অন্যান্য ফাইল নেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যেন ফোনে ভাইরাস আক্রমণ না করে। সরাসরি রোদ পড়ে, এমন জায়গায়ও দীর্ঘ সময় মোবাইল রাখা উচিত নয়। 

অনেক সময় ধুলাবালু ঢুকে ফোনের পর্দা ঝাপসা হয়ে যায়। মুঠোফোনের স্পিকার বা ক্যামেরায় ধুলা পড়লেও সমস্যা হয়, তাই এসব জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। স্মার্টফোন কখনো ভেজা হাতে ধরা উচিত নয়। জোরে চাপ দিয়ে কমান্ড দেওয়াও ঠিক নয়। 

ল্যাপটপের যত্নে

ল্যাপটপের আয়ু ও কর্মক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি ল্যাপটপের কতটা যত্ন নিচ্ছেন, তার ওপর। ল্যাপটপ কীভাবে ভালো রাখা যায়, বহুদিন কর্মক্ষম রাখা যায়, সে সম্পর্কে কিছু টিপস দিয়েছেন মাস্টার কম্পিউটারের ব্যবসায় ব্যবস্থাপক শাহীন মোল্লা। 

● ল্যাপটপ সব সময় হালকা নরম কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে ধুলাবালু বা ময়লা না লাগে। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার না করাই ভালো। 

● কি–বোর্ড পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। অসাবধানতায় ধাক্কা বা চাপ লেগে মনিটরের পর্দা ভেঙে যেতে পারে, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ডেরও ক্ষতি হতে পারে। তাই ল্যাপটপ বহনের জন্য বিশেষ ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। 

● সময়ের সঙ্গে ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু কমতে থাকে। কত দ্রুত আয়ু কমবে, তা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। সুযোগ থাকলে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে ল্যাপটপ চালানো উচিত। তবে মাসে অন্তত একবার ব্যাটারির চার্জ সম্পূর্ণ শেষ করে নতুন করে চার্জ করা ভালো। 

● ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাইসেন্স করা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। পেনড্রাইভ বা যেকোনো ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ব্যবহারের আগে তা স্ক্যান করে নিতে হবে। ল্যাপটপ ব্যবহারের পর চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ ঠান্ডা হওয়ার পর তা ব্যাগে ভরতে। ব্যবহারের সময় অসাবধানতায় কি–বোর্ডের ওপর যদি পানি পড়ে, সে ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যাটারি খুলে ফেলতে হবে এবং সার্ভিস সেন্টারে দিতে হবে। তা নাহলে বড় রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

স্মার্ট ঘড়ি

ময়লা হাতে স্মার্ট ঘড়ি (ওয়াচ) ব্যবহার করলে হাতে থাকা ময়লা ঘড়িতে ঢুকে যেতে পারে। এ জন্য স্মার্ট ঘড়ি ব্যবহারের আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে পারেন। অনেকেই খাওয়ার সময় স্মার্ট ঘড়ি হাতে রাখেন। এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত। খাওয়ার সময় স্মার্ট ঘড়ি খুলে রাখাই ভালো। এতে খাবারের ছোট ছোট টুকরা বা গুঁড়া স্মার্ট ঘড়ি লেগে যেতে পারে। ভারী বা গরম বস্তুর ওপর স্মার্ট ঘড়ি রাখা উচিত না। স্মার্ট ঘড়িতে ঘন ঘন চার্জ দেওয়ার দরকার নেই। চার্জ শেষ হয়ে এলে তবেই চার্জে দিন। চার্জ পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে রাখুন। 

হেডফোন ও ইয়ারফোন

গান শোনা, সিনেমা দেখা কিংবা কথা বলার জন্য জুড়ি নেই হেডফোনের। হেডফোনেরও দরকার বাড়তি যত্ন। নাহলে দ্রুতই নষ্ট হতে পারে শখের জিনিসটি। মোবাইল, আইপড, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের সঙ্গে জুড়ে ইয়ারফোন বা হেডফোন বেশি ব্যবহার করা হয়। ফোন বা আইপ্যাডের সঙ্গে শক্ত করে হেডফোন জড়াবেন না। এতে হেডফোনের তার কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে খুব সাবধানে গুছিয়ে রাখতে হবে হেডফোন। যদি অনেক দিন হেডফোন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে এবং সেই হেডফোন যদি ব্যাটারি চালিত হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যাটারি খুলে রাখুন। ট্রাভেলের সময় অবশ্যই একটি প্যাকেট বা ছোট্ট ব্যাগে ভরে রাখুন ইয়ারফোন। অফিস বা বাড়িতে হেডফোন রাখার জন্য স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন। ইয়ারফোনের ভেতরে অনেক সময় ধুলোবালু জমে যায়। তাই সাউন্ড কম শোনা যায়। ইয়ারফোন নরম ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। তবে পানি বা তরল জাতীয় কিছু দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত না। এতে স্পিকার ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, নিয়মিত ইয়ারফোন ও হেডফোন পরিষ্কার রাখলে এর লাইফ টাইম ঠিক থাকে। তেমনি সাউন্ড কোয়ালিটিও ঠিক থাকে। ইয়ারফোনের তারে দ্রুত ময়লা পড়ে, তাই নরম হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে সাবধানে তারটা মুছে নিলে পরিষ্কার থাকবে। 

ডিজিটাল ক্যামেরা

ডিজিটাল ক্যামেরার সবচেয়ে বড় শত্রু পানি। বৃষ্টিতে ভিজে বা পানিতে ডোবালে ক্যামেরা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ক্যামেরার ভেতরে পানি ঢুকলে এর মাদারবোর্ডে মরিচা পড়ে। পানি ঢোকামাত্র শুকনো কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মোছা উচিত। ক্যামেরা যেহেতু ব্যাটারিচালিত যন্ত্র, তাই পানি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারি খুলে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ। নোনা পানি দ্রুতই ক্যামেরার যন্ত্রাংশের ক্ষতি করে। তখন মেরামত করেও কাজ হয় না। বর্ষা মৌসুমে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে ক্যামেরা ও লেন্সের ভেতরে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস পড়তে পারে। তাই ক্যামেরা রাখার জন্য স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ পরিহার করা উচিত। খোলা জায়গা বা ধুলা ওড়ে এমন জায়গায় লেন্স পরিবর্তন করা ঠিক নয়। অন্তত চার মাস পরপর সেন্সর পরিষ্কার করা উচিত। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি রাখা উচিত। অতিরিক্ত ঠান্ডা জায়গায় বেশিক্ষণ ক্যামেরা রাখা ঠিক নয়। তাই বলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায়ও ক্যামেরা রাখা ঠিক নয়। নিয়মিত ব্যাটারি চার্জ করুন। চার্জ সম্পূর্ণ হলে খুলে ফেলুন। বেশি চার্জ অনেক সময় ব্যাটারিকে দুর্বল করে দেয়। প্রতিদিন ব্যবহারের পর ক্যামেরা পরিষ্কার করে রাখা উচিত। কাজ শেষে না পারলে অন্তত পরের দিন বা ছবি তুলতে যাওয়ার আগে পরিষ্কার করা দরকার।