ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে।’ আজ থাকছে ১৪তম পর্ব।
পর্ব-১৪
যেকোনো মার্কেটপ্লেসেই আপনার প্রোফাইলের তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এ কারণে প্রোফাইল লেখার সময় অবশ্যই সময় নিয়ে আপনার বিস্তারিত তথ্য ও দক্ষতা তুলে ধরতে হবে। আপনি যে মার্কেটপ্লেসেই কাজ করেন না কেন, আপনাকে অবশ্যই ক্লায়েন্টদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নিজের প্রোফাইল সাজাতে হবে। অর্থাৎ ক্লায়েন্টরা আপনার সম্পর্কে কোন কোন তথ্য জানতে চায়, তা পর্যায়ক্রমে যুক্ত করে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আমরা আজকের পর্বে ক্লায়েন্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম ভালোমানের প্রোফাইল তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
হেডশট ছবি
প্রোফাইলের প্রথমেই যে অংশটিতে সবার চোখে পড়ে, সেটি হলো ছবি। ছবি কেমন হবে তা নিয়ে আমরা আগের পর্বগুলোয় আলোচনা করেছি। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আবারও বলছি, ছবি অবশ্যই ফ্রন্ট ফেসিং বা সোজা হতে হবে। স্টুডিওতে তোলা পাসপোর্ট আকারের ছবি, সেলফি বা বাঁকা হয়ে তোলা ছবি দেওয়া যাবে না। ক্যামেরার দিকে সরাসরি তাকানো হালকা হাসিমুখের ছবি দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
শিরোনাম বা টাইটেল
প্রোফাইলের হেডিং বা টাইটেল এক লাইনে লিখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই এক লাইনের মধ্যেই আপনার দক্ষতার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে দক্ষতা বা স্কিল নিয়ে কাজ করছেন, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি টাইটেল হতে হবে। যেমন ‘এক্সপার্ট ইন লোগো ডিজাইন’, ‘এক্সপার্ট ইন ইউআই ডিজাইন ইউজিং ফিগমা’ ইত্যাদি। প্রোফাইলের হেডিং বা টাইটেল লেখার পর বিস্তারিত বিভাগে ক্লায়েন্টরা আপনার সম্পর্কে যেসব তথ্য জানতে চায়, সেগুলো পর্যায়ক্রমে যুক্ত করতে হবে।
প্রোফাইলের হেডিং বা টাইটেলের প্রথমেই নিজের সেবা বা কাজের ধরন দুই লাইনের মধ্য লিখতে হবে। পাশাপাশি আপনি কীভাবে ক্লায়েন্টকে সেবা দিতে পারবেন, তা সহজ ভাষায় লিখতে হবে। খুব অল্প শব্দে লেখার কারণ হচ্ছে, সার্চ অপশনে সাধারণত প্রোফাইলের প্রথম দুই লাইনের বেশি ক্লায়েন্টরা দেখতে পারে না। ফলে আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে এই দুই লাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো ধারণা পেলেই ক্লায়েন্টরা আপনার প্রোফাইল ভিজিট করবে এবং আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হবে।
আপনার সেবা ব্যবহার করে কোন ধরনের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপকার পাবে, তা প্রোফাইলে উল্লেখ করে দিলে ভালো হয়। কারণ, একজন লোগো ডিজাইনার সচরাচর সব ধরনের লোগো তৈরি করতে পারেন না। আর তাই আপনি যদি ফ্যাশন ও প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সেবার লোগো তৈরিতে দক্ষ হন, তবে প্রোফাইলে বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। ফলে ক্লায়েন্টরা আগে থেকেই আপনার কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে এবং তাদের চাহিদামতো আপনাকে কাজের অর্ডার দেবে। এতে অন্য বিষয়ে কাজ করাতে আগ্রহী ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আপনাকে বারবার যোগাযোগ করতে হবে না। ফলে সময়ও বাঁচবে।
ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়ার পর কাজের ক্ষেত্রে সচরাচর যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা তুলে ধরার পাশাপাশি সেগুলো সমাধানের কৌশলও লিখতে হবে। যেমন আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপার হোন, ক্লায়েন্টের উদ্দেশে লিখতে পারেন, ‘ওয়েবসাইট থেকে সেলস জেনারেট না হওয়া খুবই হতাশাজনক। আমি তোমার ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে সমস্যা সমাধানে তোমাকে কী কী কাজ করতে হবে তা জানাব।’ এ ধরনের কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর এ অংশে লিখবেন। এর পাশাপাশি আগে করা কোনো কাজের বিষয়ে অন্য ক্লায়েন্টদের প্রশংসাপত্রও যুক্ত করে দিতে পারেন। ফলে ক্লায়েন্টরা কাজ দেওয়ার আগেই আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে এবং কাজ দিতে আগ্রহী হবে।
নিজের সম্পর্কে তথ্য জানানোর সময় আপনার কাজ করার পদ্ধতি, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা লেখার পাশাপাশি কাজের পরিধির তথ্যও বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে।
কল টু অ্যাকশন বিভাগে ক্লায়েন্টদের আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহী করতে বিভিন্ন তথ্য লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি লিখতে পারেন,‘কাজ করতে আগ্রহী? মেসেজ বাটনে ক্লিক করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারো এবং তোমার প্রকল্প নিয়েও আলোচনা করতে পারো। আমি খুব শিগগিরই তোমাকে উত্তর দেব।’ এ অংশটি অনেকটা ই–কমার্স সাইটের বাই নাও বাটনের মতো কাজ করে।
দক্ষতার কি–ওয়ার্ড বা তালিকা বিভাগে আপনি যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করেন, সেগুলোর নাম কি–ওয়ার্ড আকারে যুক্ত করে দেবেন, এটি সার্চের ক্ষেত্রে আপনার প্রোফাইল খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
পোর্টফোলিও বিভাগে নিজের করা কাজগুলো যুক্ত করতে হবে। অবশ্যই কাজগুলো সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হবে। কমপক্ষে তিনটি কাজের তথ্য ছবি আকারে দিলে ভালো হয়। আপনি চাইলে একই ধরনের কাজ করা অন্য ব্যক্তিদের পোর্টফোলিও দেখে নিজের পোর্টফোলিও সাজাতে পারেন।
প্রোফাইল সাজানোর এ পদ্ধতির ফলে ক্লায়েন্টরা প্রথমেই আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারবে। এরপর ক্লায়েন্টকে নিজেদের প্রোফাইল দেখতে উৎসাহী করার পাশাপাশি আপনি কোন ধরনের কাজ করে, তা জানানো যাবে। পরের ধাপে আপনি কোন কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেন, সে বিষয়ে জানতে পারবে ক্লায়েন্টরা। পরে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আপনার পারদর্শিতা এবং কাজের প্রশংসাপত্র দেখে ক্লায়েন্টরা আপনার ওপর নির্ভর করে কাজের অর্ডার দিতে উৎসাহী হবে।
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: পোর্টফোলিও তৈরির পদ্ধতি