মানুষের বিপদঘণ্টা বাজিয়ে বিদায় নিচ্ছে কীটপতঙ্গ
দুনিয়াজুড়ে কীটপতঙ্গ ‘নাটকীয় হারে’ কমে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, পোকামাকড় যা আছে, পরবর্তী দশকে ৪০ শতাংশ কমে যাবে। সম্প্রতি ‘বায়োলজিক্যাল কনজারভেশন’ সাময়িকীতে এ নিয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তুলে ধরে বলা হয়, মৌমাছি, পিঁপড়া ও গুবরেপোকার মতো কীটপতঙ্গ স্তন্যপায়ী, পাখি ও সরীসৃপের চেয়ে আট গুণ হারে কমে যাচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোট চারটি বিষয়কে কীটপতঙ্গ বিলুপ্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। তবে বাড়িঘরে থাকা মাছি ও তেলাপোকা বাড়ছে। পাশাপাশি গবেষণায় বিদ্যমান কীটপতঙ্গের এক-তৃতীয়াংশকে বিপন্নপ্রায় বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই পর্যালোচনার প্রধান লেখক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফ্রান্সেসকো সানচেজ-বেয়ো এসব পোকামাকড় হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলো বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রধান কারণটি হলো একই জমিতে বারবার চাষপ্রবণ কৃষিব্যবস্থা, নগরায়ণ এবং বন উজাড়ের কারণে পোকামাকড় আবাস্থল নষ্ট হওয়া। দ্বিতীয় কারণ, কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং রাসায়নিক দূষণ। তৃতীয় কারণ, জৈবিক। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক খাদ্যচক্র ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (প্যাথোজেন)। চার নম্বর কারণ, জলবায়ুর পরিবর্তন। বিশেষ করে গ্রীষ্মপ্রবণ এলাকা।
মূলত, এটি একটি পর্যালোচনামূলক গবেষণা। ওই সাময়িকীতে ১৩ বছর ধরে প্রকাশিত ৭৩টি গবেষণাকর্মের ওপর ভিত্তি করে এই পর্যালোচনামূলক গবেষণা প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, হারিয়ে যাওয়া কীটপতঙ্গের মধ্যে প্রথম দিকেই আছে মৌমাছি, পিঁপড়া ও গুবরেপোকার মতো প্রাণীগুলো। এগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি বা সরীসৃপের চেয়ে আট গুণ হারে কমে যাচ্ছে। তবে বাসাবাড়িতে থাকা মাছি বা তেলাপোকা এই কাতারে নেই। কারণ, সেখানে তারা অপেক্ষাকৃত অনুকূল পরিবেশ পায়। ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের অধ্যাপক গুলসন বলেন, মানুষের আবাস্থলে মাছি ও তেলাপোকা সহজে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু এর বাইরে থাকা পতঙ্গগুলো উষ্ণ আবহাওয়া ও বিভিন্ন প্রতিকূল কারণে তা পারে না।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, পোকামাকড়ের এই হ্রাস মানুষসহ পরিবেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, এসব কীটপতঙ্গ পাখি, সরীসৃপ ও অনেক ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকে। পাশাপাশি শস্য উৎপাদনে এসব কীটপতঙ্গের ভূমিকা অনেক। কারণ, ফসলের ৭৫ শতাংশ পরাগায়ণ কীটপতঙ্গরা করে থাকে। ফলে, এর নেতিবাচক প্রভাব মানুষের ওপরও পড়বে।
তবে গবেষণাটির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেসব গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে এই পর্যালোচনা করা হয়েছে, সেসবের ৯৯ শতাংশ তথ্যই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকে নেওয়া। সেই অনুপাতে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উপস্থিতি শূন্যের কোঠায়।