মধুপুরের গায়রা গ্রামে গতি পেল ইন্টারনেট

ঘরের চালে নয়, মডেম এখন জায়গা করে নিয়েছে ঘরের ভেতরেছবি : সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে রয়েছে গায়রা, গাছাবাড়ি, ইদিলপুরসহ অনেক গ্রাম। গ্রামগুলোতে বসবাস করে গারো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা। অবাক করা বিষয় হলো, এই এলাকার বেশ কিছু তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। অর্থাৎ এই বনাঞ্চলে বসেই তাঁরা বিদেশের গ্রাহকদের কাজ করে দিচ্ছেন। আয় করছেন ডলারে। কিন্তু তাঁদের কাজের প্রধান সমস্যা ধীরগতির ইন্টারনেট। এ নিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে ‘ধীরগতির ইন্টারনেট নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করেন গারো তরুণেরা’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঢাকার ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাম্বার আইটি মধুপুর উপজেলার গায়রা গ্রামে উচ্চ গতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছে।

৬ মার্চ ভিডিও কলে প্রতিবেদকের কাছে আনন্দ প্রকাশ করছেন সুবীর নকরেক এবং অপর দুই ফ্রিল্যান্সার
স্ক্রিনশট

৫ মার্চ অ্যাম্বারের ব্রডব্যান্স সংযোগ চালু হয় এই গ্রামে। ৬ মার্চ গায়রা গ্রাম থেকে কয়েকজন গারো তরুণ ফ্রিল্যান্সার ভিডিও কলে নিজেদের আনন্দের মুহূর্ত এই প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন।

গারো তরুণদের বেশিরভাগই ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এই গোষ্ঠীর তরুণ সুবীর নকরেক প্রতিষ্ঠিত নকরেক আইটি ইনস্টিটিউট থেকে। সুবীর নকরেক আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা হয়েছে, এখন আর অনলাইনে ফাইল জমা দিতে বনের ভেতরে নেটওয়ার্কের খোঁজে দৌড়াতে হবে না। গাছে উঠে মডেম ঝোলাতেও হবে না আমাদের। নিজেদের মাটির ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারব। যারা শহরে চলে গেছে, ইন্টারনেট সুবিধার জন্য আশা করি সবাই গ্রামে ফিরবে।’

গায়রা গ্রামে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চালু করতে পাঁচ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক তার বসিয়েছে অ্যাম্বার আইটি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বলেন, ‘এটা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে করা। আমি যখন প্রতিবেদনটা দেখেছি, তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে। প্রথম আলোতে টেলিফোন করে তাদের সম্পর্কে জেনেই আমরা ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছি। কারণ, শুধু ইন্টারনেটের জন্য পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা। তখন চিন্তা করলাম আমি ১০ বছর ধরে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএসবি) সভাপতি ছিলাম। আমরা যেখানে ব্যবসা দেখেছি, সেখানে পৌঁছে গেছি। কিন্তু যারা বনে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আনছে, তারা কি শুধু ইন্টারনেটের জন্য পিছিয়ে যাবে? পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আমরা যতটুকু পেরেছি ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যাতে করে তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারে।’