ভেবেছিলেন নেই, খুঁজে পেলেন ১৮০ কোটি গাছ
পশ্চিম আফ্রিকার শুষ্ক ও মরু অঞ্চল দেখতে উদ্ভিদশূন্য মনে হতে পারে। তবে একদল গবেষক সেই বিরানভূমিতেও ১৮০ কোটি বৃক্ষ কিংবা কাঁটাঝোপ খুঁজে পেয়েছেন। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উদ্ভিদ খোঁজার কষ্টসাধ্য কাজটি তাঁরা করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন ‘নেচার’ সাময়িকীতে।
কাজটি কেন গুরুত্বপূর্ণ
পৃথিবীর জন্য বনভূমি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বনভূমির বাইরের উদ্ভিদগুলোর গুরুত্বও কিন্তু কম নয়। প্রাণ রক্ষায় বলুন কিংবা পত্রপল্লবে সুশোভিত যে বসুন্ধরার স্বপ্ন আমরা দেখি, সে জন্যও এই উদ্ভিদগুলো প্রয়োজন। কারণ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয়ের অন্যতম উৎস এটি। আর পরিবেশ থেকে কার্বন শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে।
তবে পরিবেশ রক্ষায় বনভূমির বাইরের এই উদ্ভিদগুলোর অবদান সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি এত দিন। একটা কারণ হলো, এমন উদ্ভিদের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা নেই। কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে বনভূমি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও উদ্ভিদগুলো আলাদা করে শনাক্ত করার মতো পর্যাপ্ত রেজল্যুশনের ছবি পাওয়া যায় না।
‘আমরা এখানে পদ্ধতির বিবরণসহ প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছি যে প্রতিটি উদ্ভিদ আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব।’
যেভাবে করলেন
ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের মারটিন ব্রান্ট সহকর্মীদের সঙ্গে ১১ হাজার ১২৮টি স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে। পশ্চিম আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি, সাহেল এবং দক্ষিণের তুলনামূলক আর্দ্র অঞ্চলের পাঁচ লাখ বর্গমাইলে উদ্ভিদের পরিমাণ নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। ছবি বিশ্লেষণ করে ওই অঞ্চলে মোট ১৮০ কোটি আলাদা উদ্ভিদ পান তাঁরা।
গবেষণাপত্রে তাঁরা জানিয়েছেন, মরুভূমিতেও এমন উচ্চ ঘনত্বে উদ্ভিদ থাকতে পারে, তা তাঁদের জানা ছিল না। মোট কথা, মরুভূমি সম্পর্কে বিদ্যমান ধারণা বদলে দিয়েছে। লিখেছেন, ‘আমরা এখানে পদ্ধতির বিবরণসহ প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছি যে প্রতিটি উদ্ভিদ আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব।’
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
ব্রান্ট জানিয়েছেন, এবার পরবর্তী কাজ হলো, আরও বড় অঞ্চল পরীক্ষা করে বনভূমির বাইরের উদ্ভিদগুলোর বৈশ্বিক ডেটাবেইস তৈরি করা। তবে কাজটা সহজ নয়। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে নমুনা ছবি দেখিয়ে ৯০ হাজার গাছের গড়ন আলাদা করে চিহ্নিত করে দেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য।
একই কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির নিয়াল হানান এবং জুলিয়াস আনচ্যাং। আরেকটি নিবন্ধে তাঁরা লিখেছেন, ‘স্যাটেলাইটের ছবি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনার আরও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি না হলে বড় পরিসরে এই পদ্ধতি অচল।’