বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকার উদ্যোগে থাকছে না যুক্তরাষ্ট্র
সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। কোভিড-১৯–এর টিকা প্রস্তুত, উৎপাদন ও সমবণ্টন নিয়ে বৈশ্বিক উদ্যোগে থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগের সহনেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বৈশ্বিক উদ্যোগে না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটি। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিকল্পনা করা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, তাদের উদ্যোগ কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশ আলোচনা করছে।
মহামারি কোভিড-১৯–এর টিকা কেনার জন্য ডব্লিউএইচও ‘কোভ্যাক্স’ নামে যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে, এতে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জাড ড্রি এক বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে টিকা ও থেরাপি গবেষণা, উন্নয়ন ও পরীক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে কার্যকর ও উদ্ভাবনী ওষুধ পাওয়া যাবে। এটি সরকারি কোনো লাল ফিতায় আটকে থাকবে না। ভাইরাসকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশে থাকবে তবে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন দ্বারা প্রভাবিত বহুপক্ষীয় সংস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে না।
গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেশটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় সবচেয়ে বেশি দাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের অভিযোগ, চীনা প্রভাবে পরিচালিত হয় সংস্থাটি।
এর আগে গত জুলাই মাসে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ টিকা কিনতে অনাগ্রহ দেখায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা এ প্রক্রিয়াকে গতিহীন ও ব্যয়বহুল হিসেবে তুলে ধরে। এর বদলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪০ মার্কিন ডলারেরও কমে প্রতি ডোজ টিকা পেতে সরাসরি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে।
কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে টিকা কেনার যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে, এতে সম্পদশালী দেশগুলোকে প্রতি ডোজ টিকার জন্য আগাম ৪০ মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়।
ইউরোপের কয়েকটি দেশ সবার জন্য টিকা উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। তারা বৈশ্বিক তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগকেও প্রচার করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তহবিল সংগৃহীত হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই এসেছে ইউরোপের দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। এ অর্থ কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদন ও সমবণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
করোনার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ওষুধ ও টিকা উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার টিকা আগেভাগে পেতে অনেক দেশ আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বুধবার টিকা পেতে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা পেতে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার ও বায়োএনটেকের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বাধা আছে। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট করোনা টিকা উৎপাদনের কাজ চলছে এবং সেগুলো উন্নত পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র একাই টিকা পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে ‘টিকা জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, দ্রুত বিশ্বকে পুনরুদ্ধার করার জন্য একত্রে কাজ করতে হবে। এটা এটা বৈশ্বিক সমস্যা এবং অর্থনীতি এর সঙ্গে পরস্পর সংযুক্ত।
দ্রুত টিকা তৈরির উদ্যোগ হিসেবে হোয়াইট হাউসের গৃহীত ‘র্যাপ স্পিড প্রজেক্ট’ কর্মসূচির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি টিকার ওপর বিনিয়োগ করেছে, যাতে টিকা উৎপাদন ও উদ্ভাবনের সক্ষমতা বাড়ানো যায়।
বিশ্বজুড়ে কয়েকটি টিকা পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। অক্টোবর নাগাদ কয়েকটি টিকার পরীক্ষার ফল আশা করছেন গবেষকেরা। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড, ফাইজার, সিনোফার্ম, সিনোভেকের টিকা প্রভৃতি।
বিশ্বজুড়ে ১৫০টির বেশি টিকা তৈরি ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বর্তমানে ২৩টি টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে।