ফেসবুকের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
তথ্য কেলেঙ্কারি আর সমালোচনার মুখে পড়া ফেসবুকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঢেলে সাজাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তিনি আর প্রচলিত বিখ্যাত নিউজ ফিডে আস্থা রাখছেন না। এখন তাঁর বাজি ভিডিও এ স্টোরিজ নামের ফিচারটিতে। বিনিয়োগকারীদের ফেসবুকের নতুন এ দুটি লক্ষ্যের কথাই বলছেন জাকারবার্গ।
জাকারবার্গ সতর্ক করেছেন, ফেসবুকে ভিডিও ও নির্দিষ্ট সময় পর মুছে যাওয়া পোস্ট বা স্টোরিজ থেকে অর্থ কম আসতে পারে এবং ফটোজ, কমেন্ট ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন থেকে মানুষের আকর্ষণ দূর করতে পারে। এখনো নতুন এ ফরম্যাটে গ্রাহকেরা স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাই ২০১৯ সাল বিনিয়োগের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে এক সম্মেলনে তিনি ফেসবুকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ কথা বলেন।
মার্ক জাকারবার্গ বলেন, সময়ের সঙ্গে নিউজ ফিডের তুলনায় নতুন ফিচারগুলোয় আয়ের সুযোগ বেশি থাকবে।
ফেসবুকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ডেভিড ওয়েনার আগামী বছর ফেসবুকের প্রান্তিক আয় ও খরচ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারি ও প্রাইভেসি লঙ্ঘনের ঘটনায় তাঁদের ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছে।
এ বছর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পাশাপাশি নিরাপত্তাত্রুটি কাজে লাগিয়ে ফেসবুক থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফেসবুক থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার এবং তা নির্বাচনে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ফেসবুক থেকে তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলার অভিযোগ ওঠে। তারা ফেসবুক থেকে নেওয়া তথ্য ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের কাছে বিজ্ঞাপন দেখায়। ওই ঘটনার জের ধরে মার্চ মাসে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে হাজির হতে হয়। মে মাসেই বন্ধ হয়ে যায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।
এ ঘটনার পর ফেসবুকের ওপর আরও বড় এক ধাক্কা এসেছে। ফেসবুক প্রথমে জানায় যে তাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। ফেসবুকের নিরাপত্তাত্রুটি কাজে লাগিয়ে ওই তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফেসবুকের ‘ভিউ অ্যাজ’ নামের একটি ফিচারের মাধ্যমে এই হামলার সুযোগ পেয়েছে হ্যাকাররা। ব্যবহারকারীরা ভিউ অ্যাজের মাধ্যমে অন্যদের কাছে তাঁদের অ্যাকাউন্টটি কেমন দেখায়, তা দেখতে পান। এই সুবিধার মাধ্যমে একজনকে ফেসবুক বন্ধুরা কীভাবে দেখেন, তা জানা যায়। আক্রান্ত ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট আপনা-আপনি লগ আউট হয়ে যায় এবং আবার লগ ইনের নির্দেশ পায়।
এ বছরের শুরুর দিকে ফেসবুক বলেছে, তাদের আয়ের প্রবৃদ্ধির হার তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে কমে যাবে।
বাজার বিশ্লেষকেরা জানান, প্রবৃদ্ধির হিসাব ধরলে ফেসবুক প্রায় তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ফেসবুকের আয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপনে আকর্ষণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এ কারণে ফেসবুককে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
তাই ফেসবুকের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বাজারে আকর্ষণ সৃষ্টির নতুন দিকের ওপর নির্ভর করছে। ফেসবুক সে পথেই হাঁটছে। তারা মেসেঞ্জারের মধ্যে নতুন বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করেছে। এর বাইরে তারা ইনস্টাগ্রাম ও স্টোরিজে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে।
জাকারবার্গ বলেছেন, ‘আমরা যেখানে পৌঁছাতে চাই, সেখানে যাওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করব। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগবে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমতে পারে।’
এর মধ্যে গুগলের ইউটিউবকে টেক্কা দিতে ফেসবুক ওয়াচ ও ইনস্টাগ্রাম টিভি নামে দুটি ভিডিও সেবা চালু করেছে ফেসবুক। জাকারবার্গ বলেন, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে স্টোরিজ ফরম্যাট জনপ্রিয়। ফেসবুকে কেবল এটি ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মানানসই বিজ্ঞাপন তৈরি কঠিন। ভবিষ্যতে এভাবেই মানুষ তথ্য বিনিময় করবে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ফেসবুকের আয় নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় ফেসবুকের রাজস্ব ৩৩ শতাংশ বেড়েছে এবং শেয়ারপ্রতি ১ দশমিক ৭৬ মার্কিন ডলার মুনাফা হয়েছে।
ই–মার্কেটারের বিশ্লেষক ডেবরা আহো উইলিয়ামসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার গুরুত্বপূর্ণ বাজারে ফেসবুকের রাজস্ব বাড়ার হার ভালো। গত প্রান্তিকের তুলনায় এ দুটি দেশে ব্যবহারকারী কিছুটা বেড়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, বিজ্ঞাপনদাতারা ফেসবুক ছাড়েননি। তাঁরা ইনস্টাগ্রামের দিকেও ঝুঁকছেন।
বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ২২৭ কোটিতে। ব্যবহারকারীদের মধ্যে এখন আস্থা ফেরাতে নানা রকম পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মার্ক জাকারবার্গ।
ব্লুমবার্গ ইনটেলিজেন্সের বিশ্লেষক জিতেন্দ্র ওয়ারাল বলেন, ‘২০১৯ সাল হবে ফেসবুকের আরও এগিয়ে যাওয়ার বা পুরোপুরি ধসে যাওয়ার বছর। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে তাদের আয় আরও বেড়ে যাবে।’