ফেসবুকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন 'দ্বিমুখী করাত'

সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন বাড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন বাড়ছে।

ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ খরচ করে বিজ্ঞাপন আকারে ভুয়া খবর প্রচারকারীদের নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা করে এসব যাচাই করে না করেই এসব প্রচার করে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এখন সবচেয়ে বেশি। তবে ভুয়া খবর ও বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে এখন কঠোর হয়েছে ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমআইটি সোলান স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদ ক্যাথরিন টাকার ও অক্সিডেন্টাল কলেজের লেসলি চাউ।

গবেষকেরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন এখন শক্তিশালী টুল। তবে এই টুল একদিকে যেমন ভালো, অন্যদিকে এর খারাপ ব্যবহারও লক্ষ্য করার মতো। এটি এখন দ্বিমুখী করাত।সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ালে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ভুয়া খবরে জনপ্রিয়তা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

অর্থনীতিবিদ ক্যাথরিন টাকার ও লেসলি চাউয়ের ভাষ্য, সোশ্যাল মিডিয়ার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বিজ্ঞাপন। কিন্তু ভুয়া খবর ছড়ানোর কাজে সাহায্য করছে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবসা মডেলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের কারণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নতুন এক যুগের শুরু হতে চলেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারবিধি প্রণয়ন এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

গবেষকেরা দেখেছেন, ফেসবুক তাদের নতুন বিজ্ঞাপন পদ্ধতি চালু করার পর থেকে ফেসবুকে ভুয়া খবর শেয়ার করার পরিমাণ ৭৫ শতাংশ কমেছে। এখানে ভুয়া খবর বলতে প্রতারণামূলক, মিথ্যা, বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে কয়েকটি উপায়ে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়। গ্রুপগুলো ‘ইকো চেম্বার্স’ হিসেবে কাজ করে। গ্রুপের সদস্যরা একে অন্যের পোস্টে লাইক দেন। ওই পোস্টে তাদের নানা দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতের প্রতিফলন থাকে। যখন কোনো গ্রুপে এসব পোস্ট করা হয় তখন তা প্রচারের টুল হিসেবে কাজ করে।

গবেষক ক্যাথরিন টাকার বলেন, বিজ্ঞাপন হিসেবে ভুয়া খবর নিষিদ্ধ করার নীতিমালা গ্রহণ করা সম্ভব হলেই কেবল অনলাইনে ভুয়া খবরের কার্যকারিতা কমবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভুয়া খবর ও নেতিবাচক বিজ্ঞাপনের প্রভাব কমাতে আরও ইতিবাচক বিজ্ঞাপন ও সত্য খবর আগ্রাসীভাবে প্রচার করা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ ওঠে। তাতে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, ট্রাম্পকে জেতাতে গোপনে কাজ করেছিল রাশিয়া। রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল ট্রাম্প শিবির। নির্বাচন ঘিরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অনলাইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টার চিত্র দেখতে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটি। ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি (আইআরএ) স্পনসর হয়ে হাজার হাজার বিজ্ঞাপন এক কোটি মানুষের কাছে পাঠিয়েছিল বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। সেসব বিজ্ঞাপন আইআরএর বিভিন্ন পেজে লাইক দিতে উৎসাহিত করত। রাশিয়ার পরিচালকেরা এমন কনটেন্ট তৈরি করেছিল যা সহজে শেয়ার করা যেত। ফেসবুকের মার্কেটিং টুল কাজে লাগিয়ে মানুষের নিউজ ফিডে তা বেশি বেশি দেখানো হয়। তথ্যসূত্র: এমআইটি সোলান, দ্য গার্ডিয়ান।