নজরদারির সুযোগ চায় ভারত সরকার, মামলা করল হোয়াটসঅ্যাপ

নতুন আইনে হোয়াটসঅ্যাপের মতো বার্তা আদান–প্রদানের সেবায় নজরদারির সুযোগ চেয়েছে ভারত সরকার। তবে তাতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার লঙ্ঘন হবে উল্লেখ করে মামলা ঠুকে দেয় হোয়াটসঅ্যাপ।

ভারতীয় সংবাদপত্রে হোয়াটসঅ্যাপের বিজ্ঞাপন। গত জানুয়ারির ছবি
রয়টার্স

ভারতের নতুন ইন্টারনেট আইন রুখতে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে আজ বুধবার মামলা করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। নতুন সে আইনে প্রয়োজনে সরকারকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের বার্তায় নজরদারির সুযোগ করে দেওয়ার বিধান আছে। দিল্লি হাইকোর্টে মামলাটি করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

ফেসবুকের মালিকানাধীন বার্তা আদান–প্রদানের সেবা হোয়াটসঅ্যাপে এনক্রিপ্টেড বার্তা পাঠানোর সুবিধা আছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি অনুযায়ী, কোনো বার্তা প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া আর কেউ দেখতে পাবে না। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপও না।

আজ বুধবার থেকে ভারতে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে মামলায় হোয়াটসঅ্যাপ বলছে আইনটি অসাংবিধানিক।

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়ার ঘটনা হোয়াটসঅ্যাপের ইতিহাসে বিরল। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বার্তায় নজরদারির সুযোগ দিলে তা কোটি কোটি ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার লঙ্ঘন হবে। সে সঙ্গে তাদের নিরাপত্তাও বিঘ্ন হবে।

হোয়াটসঅ্যাপের এক মুখপাত্র বিশ্বব্যাপী কারিগরি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ব্যবহারকারীর বার্তায় নজর রাখার সুযোগ করে দিলে তা প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে এনক্রিপশন সুবিধা ভেঙে দেবে এবং এতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা মানুষের ব্যক্তিগত বার্তার গোপনীয়তা রক্ষায় বদ্ধপরিকর এবং ভারতীয় আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু পারা যায় আমরা করে যাব।’

নতুন আইন ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তায় বাধা তৈরি করবে বলে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। প্রতীকী ছবি
রয়টার্স

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা খর্ব এবং অনলাইনে মতপ্রকাশের সুযোগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে তারা ইন্টারনেটে কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়ার প্রস্তাব করে। আর সরকারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান লড়াইয়ের সে-ই শুরু।

হোয়াটসঅ্যাপ যে আইনটির বিরোধিতা করছে, সেটি প্রস্তাব করেন ভারতের আইন ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ। আইনটিতে বলা হয়েছে, বেআইনি মনে হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কোনো পোস্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে ভারতীয় সরকার। সে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল এবং অন্যান্য বার্তা আদান–প্রদানের সেবা ব্যবহার করে পাঠানো সব বার্তার উৎস শনাক্ত করার পূর্ণ ডেটাবেইস ব্যবহারের সুযোগ থাকবে সরকারের হাতে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত বার্তা আর ‘ব্যক্তিগত’ রাখার সুবিধা থাকবে না তখন।

হোয়াটসঅ্যাপের সেবায় ব্যবহারকারীর তথ্যে নজরদারির সুযোগ নেই বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবহারকারীদের মধ্যে পাঠানো বার্তাও তারা সংরক্ষণ করে না বলে জানিয়েছে। এন্ড-টু-এন্ড অর্থাৎ প্রেরক থেকে প্রাপকের মধ্যে এনক্রিপশন সুবিধা দেওয়ার জন্যই এমনটা করতে হয়েছে।

ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তা প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না বলে দাবি করা হয়
রয়টার্স

হোয়াটসঅ্যাপে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত ও কাজের জন্য যোগাযোগ করে থাকে। এদের অনেকেই আছে ভারতে।

ভারতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া বহু পোস্ট সরিয়ে ফেলতে গত মাসে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারকে নির্দেশ দেয় দেশটির সরকার। সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তি ছিল, ওই পোস্টগুলো জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাধা তৈরি করবে।

সরকারের নির্দেশনা মেনে পোস্টগুলো ভারতীয় ব্যবহারকারীদের নিউজফিড থেকে সরিয়ে ফেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে আইন ভাঙেনি বুঝতে পেরে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সরিয়ে ফেলা পোস্ট আবার ফিরিয়েও আনে প্ল্যাটফর্মগুলো।

তা ছাড়া টুইটারে সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বেশ কিছু পোস্ট ভুল বার্তা হিসেবে শনাক্ত করায় চলতি সপ্তাহে টুইটারের নয়াদিল্লির কার্যালয়ে হানা দেয় পুলিশ। টুইটারের কার্যালয় সে সময় ফাঁকা ছিল। তবে এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

দায়ের করা মামলাটির ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপ যুক্তি দেখিয়েছে, ভারত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা বজায় রেখে বার্তায় নজরদারির সুযোগ তৈরি করা কারিগরি দিক থেকেও সম্ভব না।

এদিকে মজিলা ও ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতো ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো হোয়াটসঅ্যাপের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।