দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরাও জানবেন ছবির তথ্য
দৃষ্টিহীন বা কম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজে চোখে না দেখলেও স্ক্রিন রিডার যন্ত্রের মাধ্যমে চাইলেই নিজেদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন লেখা শুনতে পারেন। জানতে পারেন ছবির বিষয়বস্তুর তথ্যও। কিন্তু আমাদের সামান্য অসচেতনতার কারণে অনলাইনে থাকা বিশাল তথ্যভান্ডার রয়ে যায় তাঁদের অগোচরে। কারণ আর কিছুই নয়, অনলাইন বা অফলাইনে থাকা সব তথ্য পড়ে শোনাতে পারে না স্ক্রিন রিডার। বেশ কিছু পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে স্ক্রিন রিডারের উপযোগী পোস্ট তৈরি করতে হয়। এর মাধ্যমে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরাও সামাজিক যোগাযোগের সাইটসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে থাকা আপনার লেখা ও ছবির বিষয়বস্তু সহজেই জানতে পারবেন। আর তাই ইনস্টাগ্রাম থেকে শুরু করে ফেসবুক, টুইটার বা টিকটকের জন্য ছবি বা ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সময় সেগুলো দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের উপযোগী করে পোস্ট করা প্রয়োজন।
সামাজিক যোগাযোগ সাইট বা ওয়েবসাইটে দৃষ্টিহীনদের উপযোগী ছবি দিতে হলে পোস্ট করার আগেই ছবির বর্ণনায় অল্টারনেটিভ টেক্সট (অল্ট-টেক্সট) যুক্ত করতে হবে। কারণ, ছবির বর্ণনা অল্টার টেক্সট লেখা হলে তা ওয়েবসাইটের এইচটিএমএলে যুক্ত হয়। এতে স্ক্রিন রিডাররা সহজে ছবির বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি শব্দ নিয়ন্ত্রণ বা তথ্যগুলো সরাসরি ব্রেইলে যুক্ত করতে পারেন।
সাধারণত ওয়েবসাইটের বিভিন্ন তথ্যে কোডিংয়ের মাধ্যমে অল্ট-টেক্সট যুক্ত করা হয়। এ জন্য বিভিন্ন কোডিং ব্যবহার করেন ওয়েবসাইট ডিজাইনাররা। অল্ট-টেক্সট ব্যবহারের জন্য সময়ও কম প্রয়োজন হয়। ফলে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে যাঁরা নিয়মিত ছবি বা বিভিন্ন তথ্য দেন, তাঁরা নিজেরাই অল্ট-টেক্সট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
ছবিতে অল্ট-টেক্সট ব্যবহার করতে তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এগুলো হচ্ছে ছবির উদ্দেশ্য, স্বয়ংক্রিয় বিবরণ ও লেখার বিষয়।
ছবির উদ্দেশ্য
বেশির ভাগ অল্ট-টেক্সট বর্ণনা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ কনসোর্টিয়ামের (ডব্লিউ থ্রিসি) নির্ধারিত মানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। এ মানগুলো মূলত ওয়েবসাইট নির্মাতা, প্রতিষ্ঠান এবং স্বতন্ত্র ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ছবির গুরুত্ব অনুযায়ী অল্টার-টেক্সট যুক্ত করতে পারবেন। অর্থাৎ, ছবিটি কি টুইট বার্তায় না প্রোফাইলে ব্যবহার করা হয়েছে, তা মাথায় রেখে ছবির জন্য বর্ণনার অল্টার-টেক্সট নির্ধারণ করতে হবে।
স্বয়ংক্রিয় বর্ণনা
ছবিতে অল্ট-টেক্সট যোগ করার পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে কোন সাইটে আপনার ছবি পোস্ট করবেন তার ওপর। কিছু সাইট সম্পাদনা করার ক্ষমতা না দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিত্রের বিবরণ তৈরি করে। কিছু সাইট ব্যবহারকারীদেরই প্রয়োজনীয় অল্ট-টেক্সট যোগ করতে দেয়।
টুইটার
টুইটারের সেটিংস অপশনেই ছোট আকারে ছবির বর্ণনা লেখার সুযোগ আছে। এর অর্থ টুইটে আলাদা করে ছবির বর্ণনা যুক্ত করতে হয় না। ২০১৬ সালে ইমেজ ক্যাপশন টুল যুক্ত হয় টুইটারে। পরে ২০২০ সালে মাইক্রোব্লগিং সাইটটিতে যোগ করা হয় জিআইএফ সুবিধাও। ছবিতে জিআইএফ বর্ণনার জন্য ডেস্কটপ সংস্করণ থেকে টুইটার ফর ওয়েব সংস্করণ ব্যবহার করতে হবে। সেখানে ‘কম্পোজ টুইট’ অপশন থেকে ‘অ্যাড ইয়োর ইমেজ’ থেকে ‘অ্যাড ডেসক্রিপশন’ নির্বাচন করতে হবে। টুইটারের অল্টার-টেক্সটে এক হাজার অক্ষরসীমা নির্ধারণ করা আছে। টুইটারে অল্টার-টেক্সট বর্ণনা লিখতে প্রয়োজনে টুইটার বট@AltTxtReminder ও@AltTxtCrew এর পরামর্শগুলো দেখে নিতে পারেন।
ফেসবুক
ফেসবুকে ছবি পোস্টের জন্য ব্যবহারকারীরা তাঁদের নিজস্ব অল্ট-টেক্সট কাস্টমাইজ করতে পারেন। একটি পোস্টে একটি ছবি বা ভিডিও যোগ করার সময় পোস্টের ওপরে থাকা এডিট মেনুতে ক্লিক করুন। ছবির বাঁ দিকে আপনি ফেসবুকের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামিং দ্বারা তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি অল্ট-টেক্সট বর্ণনা দেখতে পাবেন। সেটি পছন্দ না হলে ‘ওভাররাইড জেনারেটেড অল্ট টেক্সট’ নির্বাচন করুন এবং আপনার নিজের অল্ট-টেক্সট যোগ করুন। ইতিমধ্যে পোস্ট করা ছবির অল্ট-টেক্সট পরিবর্তন করতে, পোস্টের ওপরের ডান দিকে তিনটি বিন্দুতে যান এবং ‘চেঞ্জ অল্ট-টেক্সট’ নির্বাচন করুন। কাস্টমাইজড অল্ট-টেক্সট যুক্ত করতে আগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।
ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রামে মূলত অবজেক্ট রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট করা ছবির বর্ণনা দেওয়া হয়। কিন্তু কম্পিউটার সব সময় সঠিকভাবে সবকিছু বর্ণনা করতে পারে না। আপনার ইনস্টাগ্রাম বিবরণের নিচে আপনার নিজের বিবরণ যোগ করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
অল্ট-টেক্সট লেখার কৌশল
অল্ট-টেক্সটে সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থপূর্ণ বর্ণনা লিখুন। তবে অল্ট-টেক্সটের বিবরণে অবশ্যই স্পষ্টভাবে বিষয়বস্তু এবং ছবির অর্থ উভয়ই বোঝাতে হবে। এ জন্য ছবিতে থাকা প্রতিটি দৃশ্যের তথ্যের পরিবর্তে ছবির বিষয় লিখতে হবে। এক বা দুই বাক্যে ছবির বিষয় তুলে ধরলে ভালো হয়। এর পাশাপাশি ছবিটি কেন ও কার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে তাও নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। ইংরেজিতে ছবির বর্ণনা লেখার সময় ‘এ ফটো অব’ বা ‘অ্যান ইমেজ অব’ শব্দগুলো বাদ দিতে হবে। কারণ, সোজাসাপটা ছবির বর্ণনা লিখলে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা স্বচ্ছন্দে সেটি অনুধাবন করতে পারবে।
সতর্কতা
প্রয়োজন না হলে ছবির বর্ণনায় কোনো ব্যক্তির লিঙ্গ, জাতি বা শারীরিক অক্ষমতার বিষয়গুলো তুলে না ধরাই ভালো। কোনো মিম প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অল্ট–টেক্সটে যথাসম্ভব সেটি কতটা মজার তার বর্ণনা দিন। কারণ, স্ক্রিন রিডাররা কেবল তা স্থির ছবি হিসেবেই পড়বে। তাদের জন্য মিমে কী নড়াচড়া করছে, তা বোঝানোর চেষ্টা করুন।
অনেক স্ক্রিন রিডারই ইমোজির সঠিক ভাব ভালোভাবে বোঝাতে পারে না। এ জন্য শব্দে ইমোজি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন এবং প্রশ্নে থাকা ইমোজির সহজ, প্রাসঙ্গিক বর্ণনা দিতে হবে। যদি ছবির বর্ণনায় হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে হয়। তবে হ্যাশট্যাগের প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষর বড় করে লিখতে হবে। এতে স্ক্রিন রিডার সহজে বার্তাটি পড়াতে পারবে।
সূত্র: ম্যাশেবল