ডানা মেলা ইন্টারনেট ও রিমোট ছাড়া টিভির ধারণার পর এবার আসছে তারহীন বিদ্যুৎ! তার ছাড়াই নাকি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে যাবে বিদ্যুৎ! ভাবতে পারেন?
সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দূর-দূরান্তে জ্বলতে পারবে আলো, এমনকি চার্জও দেওয়া যাবে মোবাইলে! এমন সব অসম্ভবকে সম্ভব করার আশাবাদই ব্যক্ত করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একদল গবেষক। তাঁরা জানাচ্ছেন এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবনের কথা, যা ওয়াই-ফাই সংকেতকে শক্তিতে রূপান্তর করবে এবং তা ব্যাটারির বদলে ব্যবহার করা যাবে বিদ্যুৎশক্তির উৎস হিসেবে!
যেমন হবে যন্ত্রটি, যেভাবে কাজ করবে
গবেষকদের দাবি, ওয়াই-ফাই হতে পারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত বিদ্যুতের নতুন উৎস। তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি দ্বিমাত্রিক। যার ভেতর দিয়ে ওয়াই-ফাই তরঙ্গ অতিক্রম করলে তা পরিবর্তনশীল বিভিন্ন দিকমুখী বিদ্যুৎকে (এসি) একমুখী বিদ্যুতে (ডিসি)-রূপান্তর করবে, ফলে সেই যন্ত্রে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এখানে ব্যবহৃত হবে নতুন একধরনের ‘রেকটেনা’(সংকেত গ্রহণকারী একধরনের রিসিভার অ্যানটেনা)। রেকটেনাতে থাকছে আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর, যা ওয়াই-ফাই তরঙ্গকে ধরে ফেলবে এবং তাকে ব্যবহারযোগ্য একমুখী বিদ্যুতে রূপান্তরিত করবে।
বিস্তর কারসাজি
ওয়াই-ফাইয়ের এসি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গকে ধরার জন্য এই যন্ত্রের রেকটেনা একধরনের ‘বেতার তরঙ্গ অ্যানটেনা’ ব্যবহার করে। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় একধরনের দ্বিমাত্রিক নমনীয় ও সুলভ সেমিকন্ডাক্টর, যা বিশ্বের অন্যতম পাতলা সেমিকন্ডাক্টরগুলোর একটি। এসি তরঙ্গ সেমিকন্ডাক্টরের ভেতর দিয়ে যায় এবং ডিসিতে রূপান্তরিত হয়; যা তারপর বিদ্যুৎ বর্তনীতে, এমনকি বারবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারিতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এতে যে রেক্টিফায়ার ব্যবহার করা হয়, তা বিশেষভাবে প্রস্তুত অত্যন্ত পাতলা ও ঘাতসহ মলিবডেনাম ডাইসালফাইড দিয়ে তৈরি। ‘এমন একটা বিশেষ নকশার জন্যই ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, সেলুলার এলটিইসহ আমাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির সবগুলোতে ব্যবহারের উপযুক্ত প্রায় সব বেতারতরঙ্গই এর আয়ত্তের ভেতর আসে’, বলেন আরেক সহগবেষক জু ঝ্যাং।
বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে ‘বুদ্ধিমত্তা’
গবেষক দলটির দাবি, এই যন্ত্র দিয়ে অনেক বড় এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়া যাবে; পরিধেয় যন্ত্রে, এমনকি এই বিদ্যুৎ দিয়ে ডাক্তারের যন্ত্রপাতিতেও আলোকরশ্মি ফেলে শক্তি ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। দলটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক টমাস প্যালাসিওস বলেন, ‘ওয়াই-ফাই তরঙ্গের শক্তিকে সহজেই বড়সড় পরিসরে রূপান্তরের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোতে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক নতুন পদ্ধতি আমরা নিয়ে এসেছি, যা আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তুতে বুদ্ধিমত্তা এনে দেবে।’
চিকিৎসাক্ষেত্রেও আনবে বিপ্লব
গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ যন্ত্রটি প্রায় ১৫০ মাইক্রোওয়াটের ওয়াই-ফাই সিগন্যালের থেকে শক্তি নিয়ে প্রায় ৪০ মাইক্রোওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা একটি মোবাইল ফোনের পর্দায় আলো জ্বলার জন্য যথেষ্ট। জেসুস গ্রাজাল নামের আরেকজন সহগবেষক, যিনি মাদ্রিদ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন, জানালেন এটা দিয়ে নাকি ডাক্তারি যন্ত্রপাতিতেও বিদ্যুতায়ন সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকেরা এমন ধরনের ওষুধ উদ্ভাবন করছেন, যা গলাধঃকরণ করলে রোগীর শরীর থেকে বাইরের কম্পিউটারে রোগ নির্ণয়ের দরকারি নানা তথ্য পাঠাতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে ড. গ্রাজাল বলেন, ‘আদর্শগতভাবে তুমি নিশ্চয়ই ব্যাটারি ব্যবহার করতে চাইবে না এসব ক্ষেত্রে, কারণ যদি ছিদ্র হয়ে শরীরের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে লিথিয়ামের বিষক্রিয়ায় রোগী মারাও যেতে পারে’। তাই পরিবেশ থেকেই শক্তি নিয়ে সেটাকে ব্যবহার করে শরীরের ভেতর এমন ছোট ছোট পরীক্ষাগার বানিয়ে ফেলা এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনা ভালো বলে মত দেন তিনি।