ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ফাইভ-জির অভিজ্ঞতা
যে ফাইভ–জি বা পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ঘিরে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে, তারই যেন মেলা বসেছে বাংলাদেশে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া তিন দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তিসহ দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে।
গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’ উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফাইভ–জি প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকবে না, সারা বিশ্বের সঙ্গেই এটি দেশে চালু হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদেই এটি চালু করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে এখন রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, স্মার্টযন্ত্র মানে হার্ডওয়্যারের রপ্তানিও দ্রুত বাড়ছে।
‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রযুক্তির মহাসড়ক’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে টেলিটক প্রধানতম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এখন বিএসসিসিএল, বিসিএসসিএল, বিটিসিএল, টেশিস নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়, এগুলো এখন সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এ মেলাতেই দেশে প্রথমবারের মতো পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ-জি) মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক দেখানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহ, ডাক বিভাগের সচিব নূর উর রহমান, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেংজুন বক্তব্য দেন।
মেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মহাসড়ক বিনির্মাণে অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং পরিবর্তিত বিশ্বে নতুন সভ্যতার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবটিকস বিগডেটা, ব্লকচেইন এবং ফাইভ–জির বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শন করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
গতকাল প্রথম দিনে মেলায় ঢুকতেই হুয়াওয়ের স্টলে ফাইভ–জি নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করতে দেখা গেল। এখানে গতি পরীক্ষা করছেন দর্শনার্থীরা। রিয়েল টাইমে ফাইভ–জির গতিতে মুগ্ধ দর্শনার্থী। এয়ার ভিআর রোবটেও ফাইভ-জি কেমন হবে তার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
মেলায় ১৩টি বিষয়ের আলোচনা সভায় সরকারের মন্ত্রী ও দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নিচ্ছেন। আলোচনার মধ্যে রয়েছে ট্যালেন্ট গ্যাপ, ডিজিটাল অর্থনীতি, ডিজিটাল গ্রোথ, স্মার্ট সিটি, এসডিজির অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে। ২৫টি স্টল, ২৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২৮টি প্যাভিলিয়ন নিয়ে হচ্ছে এই মেলা। যেখানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের ডিজিটাল অগ্রগতি তুলে ধরছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রয়েছে পৃথক কর্নার। সেই কর্নারে প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা হয়েছে।
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি মো. আমিনুল হাকিম বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রথমবারের মতো এই আয়োজন করল। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে আইএসপিএবি। গত মাসে আমরা গ্রাহকদের যে পরিমাণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার দেখেছি, এ মাসে ৪-৫ শতাংশ হারে তা বেড়েছে।
মেলার আয়োজক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সহযোগিতায় রয়েছে বিটিআরসি, বিটিসিএল, টেলিটক, বিএসসিসিএল, বিসিএসসিএল, ডাক বিভাগ ও আইএসপিএবি। মেলায় বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ও আইএসপিসহ ৮২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় ২৫টি স্টল, ২৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২৮টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। (www.digitalbangladeshmela.org.bd) ওয়েবসাইটে বিনা মূল্যে নিবন্ধন করে মেলা দেখার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। মেলায় প্রবেশমুখেও নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। মেলায় যাওয়া-আসার সুবিধার্থে দর্শনার্থীদের জন্য শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ঢাকার উত্তরা, মালিবাগ, মতিঝিল, আজিমপুর ও মিরপুর থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা ও বেলা ১টায় বাসগুলো মেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।