জাকারবার্গের নতুন ব্যবসা
ফেসবুক এখন তাদের মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলোকে পুঁজি করে যোগাযোগের এ অ্যাপগুলোয় নতুন ব্যবসা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ মঙ্গলবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া ফেসবুকের বার্ষিক এফ ৮ সম্মেলনে অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফেসবুক।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ গত মার্চ মাসে ঘোষণা দেন, ফেসবুকের ভবিষ্যৎ ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর নির্ভরশীল। অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে ফিচার তৈরির বিষয়টি আগামী পাঁচ বছর ধরে ফেসবুকের অগ্রাধিকার থাকবে। এফ ৮ সম্মেলনে সে বিষয়টি দেখতে পাবেন ডেভেলপাররা।
বাজে সময় কাটিয়ে ব্যবসায়ে নতুন পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন জাকারবার্গ। সম্প্রতি তথ্য ফাঁসের কেলেঙ্কারি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও ভুয়া খবর ছড়ানো ঠেকাতে ব্যর্থতার মতো বিষয়গুলোয় সমালোচনার মুখে পড়েছে ফেসবুক। এ ছাড়া ফেসবুকের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসেতে দুই দিনের এফ ৮ সম্মেলনে এক ডজনের বেশি আলোচনা অনুষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ডিপ ডাইভ অন মেসেঞ্জার আপডেট’।
এফ ৮ সম্মেলন ঘিরে প্রতিবছর নতুন কিছু পণ্যের বা ফিচারের ঘোষণা আসে। গত বছর ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি হেডসেট অকুলাস গো বিক্রির ঘোষণা করেছিল ফেসবুক। এ ছাড়া ডেটিং ফিচার ও ক্লিয়ার ফিচারের ঘোষণা এসেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারে ফেসবুক ব্যবসাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। জাকারবার্গ জানেন, তাঁদের ব্যবসা বাড়াতে হলে মোবাইল মেসেজিং বাজারে শেয়ার বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষ এখনো ফেসবুকের সেবায় আস্থা রাখে না। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের আইমেসেজ।
ফেসবুকের মেসেজিং সেবাগুলো থেকে কীভাবে অর্থ আয় হবে, সেই নতুন মডেল নিয়ে কাজ করা ফেসবুকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। গত বছরে অনলাইন বিজ্ঞাপন থেকে ফেসবুক ৫ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে।
ফেসবুকের অর্থ আয়ের বড় পরিকল্পনার আরেকটি অংশ হচ্ছে কমার্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে একে গড়ে তোলা। মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে পণ্য কেনাবেচার সুযোগ করে দেবে ফেসবুক। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভানের তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক তাদের যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তার বাস্তব উদাহরণ এখন চীন। সেখানে মানুষ শিয়াওহংসু নামের সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটা করছে। ২০২২ সাল নাগাদ দেশটিতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেনাকাটার পরিমাণ ১৫ শতাংশ পৌঁছে যাবে, যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশ।
জাকারবার্গ এখন চীনের ওই অনলাইন কেনাকাটার ধরনটা চীনের বাইরে প্রয়োগ করে অর্থ আয় করতে চাইছেন।