করোনার চিকিৎসা ও টিকার জন্য যত তৎপরতা চলছে
বিশ্বজুড়ে অর্ধশতাধিক ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা প্লাজমা ও স্টেম সেল থেরাপির মতো চিকিৎসাপদ্ধতিতে নিদান খুঁজছেন। আর নিরাপদ ও কার্যকর টিকার খোঁজে এক শর মতো উদ্যোগ জারি রয়েছে।
গত চার মাসে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বা কোভিড-১৯ নামের রোগটি পৃথিবীর মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা আর সমাজ ও রাজনীতির ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। ঝড়ের মুখে দ্রুত গবেষণা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
গবেষণাধীন ওষুধপত্রের সব কটিই অন্য রোগের ওষুধ হিসেবে অনুমোদিত। কোভিড-১৯–এ সেগুলোর কার্যকারিতা খোঁজা হচ্ছে। মহামারি প্রতিরোধের চেষ্টায় বিপর্যস্ত মানুষের কাছে এখন বড় প্রশ্ন তিনটি—ওষুধ কি পাওয়া গেল? টিকা কবে আসবে? এগুলো সবার কাছে দ্রুত পৌঁছাবে তো?
যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য একটি ওষুধ গুরুতর ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক জরুরি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশেও ওষুধটি তৈরির উদ্যোগ রয়েছে। রক্তরস বা প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসায় কিছু সাফল্যের তথ্য পেয়ে সরকার পদ্ধতিটি খতিয়ে দেখতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে টিকা পেতে বিশ্বকে আরও অন্তত দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। যদিও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে করোনার টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
গত ২৮ এপ্রিল বিশ্ব সাহায্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চলমান পরীক্ষামূলক কোভিড-১৯ চিকিৎসার তালিকা দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ৩৩টি সুনির্দিষ্ট ধরনের এবং ‘অন্যান্য’ ওষুধ ব্যবহার করে চিকিৎসার কথা আছে। এগুলোতে সব মিলিয়ে একক ওষুধ বা ওষুধের সমন্বয়ে দুই শর কাছাকাছি ধারার চিকিৎসা চলছে। তালিকায় প্লাজমা ও স্টেম সেলসহ অনেকগুলো পরীক্ষামূলক থেরাপির কথাও আছে।
ডব্লিউএইচও অবশ্য এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ বা চিকিৎসাকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে সংস্থাটি এবং এর সহযোগীরা কয়েকটি ওষুধ ব্যবহার করে চারটি চিকিৎসাপদ্ধতি বা ধারা রোগীদের সম্মতিক্রমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) একটি উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাওয়া ওষুধটি এগুলোর মধ্যে পড়ে।
ওষুধগুলো রোগের প্রকোপ আর মৃত্যু কমায় কি না, সেটা দেখাই লক্ষ্য। ‘সলিডারিটি’ বা সংহতি নামের এই ট্রায়ালের সুবিধা হচ্ছে, এটা কম সময়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে নানা ধরনের বহু রোগীর ওপর ওষুধগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারবে। ২১ এপ্রিল নাগাদ শতাধিক দেশ এতে শামিল হয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলছে, সব রোগী একই পরীক্ষাভুক্ত হলে এই পদ্ধতিগুলোর তুলনামূলক কার্যকারিতা বোঝা যাবে। এভাবে বিশ্ব পরিসরে জোরালো প্রমাণের ভিত্তিতে সেরা চিকিৎসাটি নির্ণয় করা সম্ভব হবে। সংস্থাটি টিকা-সংক্রান্ত উদ্যোগেরও খসড়া হিসাব দিচ্ছে। এখন এক শর মতো টিকা নিয়ে কাজ চলছে।
সংহতি উদ্যোগটি আসে গত মার্চের মাঝামাঝি। সে মাসেরই শেষ সপ্তাহে ফরাসি রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থা ইনসার্মের সমন্বয়ে শুরু হয় ইউরোপীয় উদ্যোগ ডিসকভারি ট্রায়াল, একই চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো নিয়ে। তবে ডিসকভারি ট্রায়াল সেবা–যত্নের বিষয়টিকেও খতিয়ে দেখছে। দুটি ট্রায়ালই খাপ খাইয়ে এগোবে (অ্যাডাপটিভ), আলামত দেখে অন্য ওষুধপত্র যোগ করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফারমাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিজ্ঞানীরা এই দুটি ট্রায়ালের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন। করোনার ওষুধ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে বিভ্রান্তি আছে। দূর করতে হলে জোরালো প্রমাণ লাগবে।
অধ্যাপক সায়েদুর বলেন, মহামারি মোকাবিলার তাগিদে বিজ্ঞানীরা অন্য রোগের ওষুধ নিয়েই গবেষণার মাঠে নামছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের (এনএলএম) ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত তথ্য পর্যালোচনা করে তিনি দেখেছেন, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০টি ওষুধ নিয়ে হাজারখানেক গবেষণা চলছে। তবে অধিকাংশই অল্পসংখ্যক রোগীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত গবেষণা। ফলে এগুলো থেকে এত বড় মহামারিতে প্রয়োগের উপযোগী ও ঝুঁকিমুক্ত পরামর্শ না-ও আসতে পারে।
এনএলএমের ওয়েবসাইটের তালিকা ঘাঁটলে বিভিন্ন থেরাপি, দেশজ চিকিৎসা (ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন), ভিটামিন সি ও খাদ্যগুণের প্রভাব নিয়ে গবেষণার হদিসও পাওয়া যায়। এদিকে সংহতি উদ্যোগের চারটি চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, পর্যাপ্ত প্রমাণ না আসা পর্যন্ত এগুলো যেন চিকিৎসকেরা সুপারিশ অথবা রোগীরা নিজেরা ব্যবহার না করেন।
সংহতি ট্রায়ালের ওষুধ ও চিকিৎসা
পরীক্ষাগার, প্রাণী ও মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রমাণ দেখেশুনে ডব্লিউএইচও সংহতি ট্রায়ালের জন্য প্রস্তাবিত চারটি চিকিৎসাপদ্ধতির ওষুধ বাছাই করেছে। প্রথমেই আছে রেমডেসিভির। এটা ইবোলার ওষুধ। এ ছাড়া মার্স ও সার্স রোগে প্রয়োগের জন্য প্রাণিদেহে পরীক্ষা করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। শেষ দুটি রোগের উৎসও দুই ধরনের করোনাভাইরাস।
১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীর গুরুতর শ্বাসকষ্টে রেমডেসিভির প্রয়োগ করার জন্য জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন চূড়ান্ত নয়। কোভিড-১৯–এ এটা পরীক্ষামূলক ওষুধ। ওষুধটি তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি গিলিয়েড সায়েন্স।
যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কোভিড-১৯–এর ক্ষেত্রে এটার কার্যকারিতা দেখা যায়। পরে অবশ্য চীনের একটি ছোট ট্রায়াল উল্টো কথা বলেছিল। প্রথম আলোকে বাংলাদেশের একটি ওষুধ কোম্পানির দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, দেশে চারটি বড় কোম্পানি রেমডেসিভির উৎপাদনের প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে রেখেছে। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিপণনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে।
দ্বিতীয় চিকিৎসাপদ্ধতিটি হচ্ছে, এইচআইভির নিবন্ধিত ওষুধ লোপিনাভির ও রিটোনাভিরের সমন্বিত প্রয়োগ। মার্স বা সার্সের উপকারিতার প্রমাণ নেই। পরীক্ষাগারের ফলাফল বলছে, কোভিড-১৯ সারাতে এর কার্যকারিতা থাকতে পারে। তবে এ যাবৎ রোগীদের ওপর প্রয়োগের ফলাফল অনিশ্চিত।
এইচআইভির জন্য ওষুধ দুটি সমন্বিত মাত্রায় কালেট্রা নামে তৈরি করে অ্যাবভি কোম্পানি। মার্কিন বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকানে গত ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, মানবদেহে কোভিড-১৯–এর জন্য এ ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক কার্যকারিতা দেখা গেছে।
তৃতীয় চিকিৎসাপদ্ধতিতে লোপিনাভির-রিটোনাভিরের সঙ্গে ইন্টারফেরন বেটা-ওয়ানএ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারফেরন মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুর অসুখ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের ওষুধ।
চতুর্থ পদ্ধতিটিতে কাছাকাছি দুটি ওষুধ ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রথমটি ম্যালেরিয়ারি এবং দ্বিতীয়টি বাতের ওষুধ। চীন আর ফ্রান্সে ছোট পরিসরের গবেষণায় ক্লোরোকুইন ফসফেটের কার্যকারিতার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তবে বড় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সুনিশ্চিত হতে হবে।
বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাসবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, রেমডেসিভির আর লোপিনাভির-রিটোনাভির ভাইরাসের জীবনরক্ষা ও বংশবিস্তারের জন্য জরুরি সুনির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরিতে বাধা দেয়। ভাইরাস প্রতিরোধী আরেক ওষুধ ইন্টারফেরন বেটা-ওয়ানএ প্রোটিন তৈরিই করতে দেয় না। তবে অধ্যাপক নজরুল কোভিড-১৯–এ ম্যালেরিয়ার ওষুধ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর মিত্ররা ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পর ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পালে বাতাস লাগে। গত ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের ওপর এ দুটি ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিনসহ বিভিন্ন ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগের অনেক ট্রায়াল চলছে। ওষুধ দুটির গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
পরীক্ষায় অন্যান্য ওষুধ
ডব্লিউএইচওর ২৮ এপ্রিলের প্রতিবেদনে ৩৩ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে প্রায় দেড় শ পরীক্ষামূলক চিকিৎসাপদ্ধতির তালিকা আছে। ‘অন্যান্য’ বিভাগে আরও ৩৩টি ওষুধের নাম আছে।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে গত ১৮ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানের ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ ফাভিপিরাভির (এভিগন) চীনে ভালো ফল দিয়েছে। কিছুটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও উহান ও শেনজেনের ৩৪০ জন কোভিড-১৯ রোগীর ওপর ওষুধটির ট্রায়ালকে চীনা কর্তৃপক্ষ সফল।
রাশিয়াও এটা ব্যবহার করার কথা বলেছে। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা আছে।
মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো গত ২৭ এপ্রিল লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র আর জাপানেও ফাভিপিরাভিরের ট্রায়াল চলছে। ওই প্রতিবেদনে মোট ৭২টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলার কথা আছে। ওষুধগুলোর মধ্যে আছে গেঁটেবাতের ওষুধ টসিলিজুমাব। সুইজারল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানি রোশে এটা অ্যাকটেমরা বা রোঅ্যাকটেমরা নামে তৈরি করে। আছে ক্যানসারের ওষুধ এবং কর্টিকোস্টেরয়োডস আর ডেক্সামেথাসোনসহ কয়েক ধরনের স্টেরয়েডের কথা।
স্টেম সেল ও প্লাজমা
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির প্রধান মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শরীরে ভাইরাস বেড়ে গেলে রাসায়নিক প্রদাহে ফুসফুসের ক্ষতি হয়। অক্সিজেন কমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো অকেজো হতে থাকে। স্টেম সেল থেরাপিতে সুস্থ মানুষের কোষকে চৌকস কোষে পরিণত করে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সুই ফুঁড়ে ঢোকানো হয়। সেগুলো নষ্ট কোষগুলো হটিয়ে দিয়ে সুস্থ কোষ তৈরি করে। রোগী সেরে ওঠে।
কোভিড নিরাময়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র স্টেম সেল থেরাপির একাধিক সফল ট্রায়ালের কথা বলেছে। একইভাবে প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই থেরাপির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গত ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে।
কমিটির প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম এ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্লাজমা থেরাপিতে বিভিন্ন দেশে কোভিড রোগীরা ভালো হয়েছেন। কমিটি পরীক্ষামূলক গবেষণার জন্য একটি প্রটোকল তৈরি করে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের কাছে (বিএমআরসি) জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের প্রস্তাবের নৈতিক দিক খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেয়।
রোগীর শরীরে ভাইরাসের সঙ্গে লড়ার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। প্লাজমা বা রক্তরস থেরাপিতে সদ্য সেরে ওঠা রোগীর রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশটি নিয়ে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীরে ঢোকানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুধীর কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, তখন রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘প্লাজমা থেরাপিতে ঝুঁকি কম, কিন্তু সুফলের আশা উচ্চ।’
টিকার জন্য অপেক্ষা
গত ৬ এপ্রিল ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছিলেন, নতুন করোনাভাইরাসের টিকার গবেষণা অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। ৩০ এপ্রিল নাগাদ সংস্থাটির খসড়া তালিকায় ১০২টি উদ্যোগের তথ্য ছিল। আটটি মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে আছে।
এগুলোর সাতটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপে আছে। নিরাপত্তা ও কার্যকর প্রয়োগ-মাত্রার পরীক্ষা চলছে। আর ক্যানসিনো বায়োলজিক্যাল ইনক. ও বেইজিংয়ের বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউটের টিকাটি দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় পৌঁছেছে। এখন কয়েক শ মানুষের ওপর পরীক্ষা হওয়ার কথা। তৃতীয় ধাপে সংক্রমণের ঝুঁকির স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার মানুষকে টিকা দিয়ে লম্বা সময় অপেক্ষা করে দেখতে হবে।
গত জানুয়ারি মাসেই প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করেছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট। গবেষণা দলটি গত ২৪ এপ্রিল প্রথম ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে। দ্বিতীয় ধাপে ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না আর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) টিকাটি গত মার্চে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় যায়। আগামী মাসে এর দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার কথা।
প্রথম ধাপে থাকা টিকাগুলোর আরও তিনটি চীনা উদ্যোগ। আছে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও ইনোভিও আর জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক। তা ছাড়া এর আগে ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল, কোভিড-১৯–এ বিসিজি টিকার কার্যকারিতা দেখতে দুটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
সাধারণত টিকা উদ্ভাবনে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। এখন কোভিড-১৯–এর তাড়া খেয়ে হুড়মুড়িয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে টিকা মাঠে আসতে ৮ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।
এরপর রইল বাংলাদেশের মানুষের কাছে তা পৌঁছানোর বিষয়। তদুপরি টিকার কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করতে এ দেশে আসা করোনাভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য জানার জন্য জিনোম সিকোয়েন্স করার গুরুত্বের কথাও উঠেছে—এখনো যার কোনো উদ্যোগের কথা আলোতে আসেনি।