ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে ১৭তম পর্ব।
পর্ব–১৭
কভার লেটার লেখার সময় অজ্ঞতার কারণে বা ভুল করে এমন অনেক কিছুই আমরা লিখি যা ঠিক নয়। আজকে এমন কিছু ভুল নিয়ে আমরা আলোচনা করব, যা কভার লেটারের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি ক্লায়েন্টের কাছে আপনার দেওয়া প্রস্তাবকে গুরুত্বহীন করে তোলে।
তাড়াহুড়ো করা
অনেকেই জব পোস্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ক্লায়েন্টের কাছে প্রস্তাব পাঠান। তাঁদের ধারণা, অন্য কেউ আবেদন করার আগে ক্লায়েন্টের কাছে নিজের প্রস্তাব পাঠাতে পারলে মনে হয় কাজ পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে ঠিক উল্টো ঘটনা। কারণ, দ্রুত প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বেশির ভাগ সময়ই কাজের বিস্তারিত তথ্য না পড়েই টেম্পলেট কপি পেস্ট করে প্রস্তাব পাঠান তাঁরা। ফলে ক্লায়েন্ট কাজের বর্ণনায় যেসব তথ্য জানতে চেয়েছেন, তার বেশির ভাগ তথ্যই লিখতে ভুলে যান তাঁরা। ফলে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে, ক্লায়েন্টরা জব পোস্ট করার পর সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন ভালো মানের কাজের প্রস্তাব আসার জন্য। ফলে তাড়াহুড়ো করে দ্রুত কাজের প্রস্তাব পাঠিয়ে খুব একটা লাভ হয় না।
নিজের বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় তথ্য
কাজের প্রস্তাবের শুরুতেই ‘আমি এত বছর ধরে কাজ করছি, এই বিষয়গুলোতে আমি খুবই দক্ষ’ কখনো লিখবেন না। মনে রাখতে হবে, আপনি কীভাবে বা কোন পদ্ধতিতে কাজটি করবেন, তাই কেবল জানতে চান ক্লায়েন্টরা। ফলে আপনার ১০ বছরের অভিজ্ঞতার বদলে আপনি কীভাবে কাজটি করবেন, তা ক্লায়েন্টদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনুরোধ
কভার লেটারে ক্লায়েন্টকে কাজ দেওয়ার জন্য কোনোভাবেই অনুরোধ করা যাবে না। অনেকে আবার নিজের বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখে ক্লায়েন্টের কাছে কাজ করার জন্য সুযোগ চান। এ ধরনের অনুরোধ ভুলেও করতে যাবেন না। কারণ, ক্লায়েন্টরা সব সময় দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিকে দিয়ে ভালো মানের কাজ করাতে চান। ফলে নিজের দক্ষতা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
এক জায়গায় সব তথ্য নয়
অনেকেই এক জায়গায় নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে ক্লায়েন্টের কাজ কীভাবে করা হবে, তা লিখে থাকেন। এটা ঠিক নয়, কারণ ক্লায়েন্টরা সাধারণত কাজের প্রস্তাব পাওয়ার পর নিজের উপযোগী বিভিন্ন তথ্য বা বিভাগগুলো পড়ে থাকেন। ফলে এক জায়গায় সব তথ্য থাকলে ক্লায়েন্টরা প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সহজে খুঁজে পান না। আর তাই কাজের প্রস্তাব পাঠানোর সময় একাধিক বিভাগে উল্লেখযোগ্য অংশগুলো লিখতে হবে।
কিওয়ার্ড
অনেক সময় ক্লায়েন্টরা তাঁদের কাজের বর্ণনার জায়গায় নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড লিখে দেন। তাঁরা চান কাজের প্রস্তাব দেওয়ার সময় ফ্রিল্যান্সাররা যেন সেই বিষয়টির তথ্য সবার আগে উল্লেখ করেন। কিন্তু দ্রুত কাজের আবেদনের সময় বিষয়টি অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়। ফলে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড ছাড়া কাজের প্রস্তাবগুলো শুরুতেই বাদ পড়ে যায়।
অপ্রাসঙ্গিক তথ্য
আপনি যে কাজের জন্য প্রস্তাব পাঠাবেন, শুধু সে কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ই কেবল কভার লেটারে লিখতে হবে। কাজের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক দক্ষতা, আগের করা কাজের উদাহরণ কোনোভাবেই লেখা যাবে না।
ভুল বানান
ইংরেজিতে কাজের প্রস্তাব পাঠানোর সময় কোনোভাবেই বানান বা ব্যাকরণগত ভুল করা যাবে না। বানান বা ব্যাকরণগত ভুল হলে ক্লায়েন্টরা বিরক্ত হওয়ার পাশাপাশি আপনার কথার অর্থও বদলে যেতে পারে। তাই শব্দচয়নের আগে বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ করতে হবে।
মার্কেটপ্লেসের নীতিমানা অনুসরণ
আপনি যে মার্কেটপ্লেসেই কাজ করেন না কেন, সেখানের নীতিমালার পরিপন্থী কোনো কাজ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, সব মার্কেটপ্লেসেই নিজস্ব বেশ কিছু নিয়ম থাকে, যা ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্ট উভয়কেই মেনে চলতে হয়। সমস্যা সমাধানে ক্লায়েন্টদের কাছে কখনোই নিজের ব্যক্তিগত ই–মেইল ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি এবং অর্থ পরিশোধের তথ্য বিনিময় করা যাবে না।
লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার
পরের পর্ব: নতুন ক্লায়েন্ট নিয়ে গবেষণা