পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের নানা সূত্র কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন উদ্ভাবন করে তা মেলায় নিয়ে আসার সেই আনন্দময় দিন নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায় তো বটেই, আন্তর্জাতিক পরিসরে বিস্তৃত হবে সেই উৎসবের পরিধি। দি সিটি ব্যাংক-প্রথম আলো বিজ্ঞান জয়োৎসব সেই আয়োজনই করতে যাচ্ছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রংপুর ও কুষ্টিয়া থেকে শুরু হচ্ছে এ আয়োজন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে সিটি ব্যাংক সেন্টারে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার সেই উৎসবের জানান দিলেন আয়োজকেরা। জনপ্রিয় কার্টুন টম অ্যান্ড জেরির বিখ্যাত রুব গোল্ডবার্গ মেশিনের মাধ্যমে উৎসবের লোগো উন্মোচন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একটি মার্বেল ছোড়ার পর তা একের পর এক চমক লাগানো পথ পেরিয়ে অবশেষে লোগোর ওপরের পর্দা সরিয়ে ফেলে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিমাণগত উন্নতির উদাহরণ টেনে বলেন, এবার আমাদের গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য শুধু ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে ঝুঁকলেই হবে না, বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়ের দিকেও নজর দিতে হবে। এই বিজ্ঞান জয়োৎসব সেই মৌলিক জ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলবে।
সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল আর কে হুসেইন নিজের শৈশবে স্কুলে বিজ্ঞান উৎসবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বিজ্ঞানের সেই চর্চা এখন আর আগের মতো নেই। বিজ্ঞানচর্চা কমে গেলে আমাদের অনেক সম্ভাবনার মৃত্যু হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিজ্ঞানকে সেই উৎসবের আমেজে ফিরিয়ে আনতেই প্রথম আলোর সঙ্গে যৌথভাবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, ইন্টারনেট উৎসবসহ বিভিন্ন উৎসবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এসব উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানচর্চার একটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এক যুগ ধরেই দেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ কমে আসছে। এই জয়োৎসবের মধ্য দিয়ে গণিতের মতো বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়েরও চর্চা বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
এই আয়োজনে দেশের খুদে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। ২০০৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী জন সি মাহের তাঁর ভিডিও বক্তব্যে বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের এই আনন্দ আয়োজনে অংশ নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আবিষ্কার আর উদ্ভাবনের চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি ও বিজ্ঞান জয়োৎসবের সমন্বয়ক মুনির হাসান। তিনি জানান, এই বিজ্ঞান জয়োৎসবে থাকছে আঞ্চলিক বিজ্ঞান প্রকল্প প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান কুইজ ও দুই দিনের জাতীয় প্রতিযোগিতা। সারা দেশের ১৫টি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে আঞ্চলিক উৎসব। একজন বিজ্ঞান ফেলোর বছরব্যাপী কার্যক্রমের আওতায় এ জয়োৎসবে গণগবেষণা, বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ, পাইলট শিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
পুরো জয়োৎসবের অংশ হিসেবে আরও থাকবে একজন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীর বাংলাদেশ সফর। সফরের সময় তিনি বিজ্ঞানবিষয়ক পাবলিক বক্তৃতা দেবেন এবং তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি সমাবেশে অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান প্রকল্পে বিজয়ী খুদে বিজ্ঞানীরা তাঁর সঙ্গে নৈশভোজের সুযোগ পাবে।
অনুষ্ঠানে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশের খুদে শিক্ষার্থী সাবিত পুলকের ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। তাহবিদ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ইন্টেল বিজ্ঞান মেলায় চূড়ান্ত পর্বে যোগ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ আর খান, বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ দেন সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন।
এ আয়োজনের বিস্তারিত জানা যাবে প্রথম আলো পত্রিকায়। এ ছাড়া পাওয়া যাবে জয়োৎসবের ফেসবুক পেজ www.facebook.com/CarnivalofScience ঠিকানায়।