আর্থিক সেবা বিভাগ চালু করছে ফেসবুক

ফেসবুক
ফেসবুক

ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে পেমেন্ট সিস্টেম একত্র করতে বিশেষ আর্থিক সেবা বিভাগ চালু করছে ফেসবুক। এ বিভাগের নাম ‘ফেসবুক ফিন্যান্সিয়াল’। এর নেতৃত্ব দেবেন ই-কমার্স বিশেষজ্ঞ ডেভিড মার্কাস। তিনি ছয় বছর আগে ফেসবুকে যোগ দেওয়ার আগে পেপ্যালের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ফেসবুকের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা নেটওয়ার্ক লিবরার অন্যতম উদ্যোক্তা মার্কাস। এ মুদ্রার জন্য নোভি ডিজিটাল ওয়ালেট নামের একটি সেবা তৈরির টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। লিবরা মুদ্রা চালু হলে নোভি ওয়ালেট থেকে নানা আর্থিক সেবা দিতে পারবে। এ ছাড়া নিজস্ব ই-কমার্স সেবা চালুর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

এএফপি জানিয়েছে, ফেসবুক ফিন্যান্সিয়াল থেকে তাদের প্ল্যাটফর্মের সব অর্থ পরিশোধ ও আর্থিক সেবার ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার কাজ করা হবে। বর্তমানে ফেসবুকে নানা রকম পেমেন্ট ফিচার রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত সেবাগুলো ফেসবুক ফিন্যান্সিয়ালের অধীনে এক হবে।

ফেসবুকের লিবরা নিয়ে নিরাপত্তার উদ্বেগ জানানো ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে নিজস্ব ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সেবায় আর্থিক সেবার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

গত বছর ফেসবুক তাদের লিবরা ক্রিপটোকারেন্সি চালুর পরিকল্পনার কথা জানালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক কর্মকর্তারা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ফেসবুককে এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কে আর্থিক সেবার নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

ফেসবুক ডিজিটাল মুদ্রা লিবরা আনার জোর প্রচেষ্টা চালালেও বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতাদের জন্য তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ফেসবুকের পাশ থেকে সরে গেছে লিবরার সহযোগীরা। লিবরা অ্যাসোসিয়েশন থেকে সরে গেছে ভিসা, মাস্টারকার্ড, স্ট্রিপ, মেরকাডো, পোগো ও ইবের মতো প্রতিষ্ঠান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপটোকারেন্সি লিবরা চালু করতে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান পেপ্যালের মতো সহযোগীকে যুক্ত করেছিল ফেসবুক। তবে লিবরা ঘিরে বিভিন্ন দেশ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেতে শুরু করে ফেসবুক।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমালোচনা করে বলেন, তিনি ক্রিপটোকারেন্সির ভক্ত নন। ফেসবুককে যদি লিবরা নামের ক্রিপটোকারেন্সি চালু করতে হয়, তবে তাদের ব্যাংকিং চার্টারের প্রয়োজন পড়তে পারে।

ফেসবুকের ভাষ্য, লিবরা সবাইকে একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেটের সুবিধা দেবে। আন্তর্জাতিক সব মুদ্রার মূল্যমানের সঙ্গে সংগতি রেখে এই মুদ্রার মূল্যমান ধরা হবে। প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে লিবরা কেনা যাবে। লিবরার সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের যোগসূত্র থাকবে না বলে তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হবে না। লিবরা পেমেন্টের সঙ্গে ফেসবুকের বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় ব্যাংক ডিপোজিট, স্বল্পমেয়াদি সরকারি নিরাপত্তার মতো বিষয় যুক্ত থাকবে। এতে অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির মতো মুদ্রাস্ফীতি হবে না।

লিবরার উন্নয়নকারী ফেসবুকের ক্যালিব্রা বিভাগের প্রধান ডেভিড মার্কাস বলেন, ভবিষ্যতে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় তাঁরা নানা আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে ঋণদানের মতো বিষয়ও রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টে যে লিবরা জমা রাখবেন, তার বিপরীতে ফেসবুক তাঁকে কোনো সুদ দেবে না।

ফেসবুকের আর্থিক উদ্যোগের সমালোচকেরা বলেন, ফেসবুক নানা কারণে ইতিমধ্যে অনাস্থার কারণ হয়েছে। সে কারণে ব্যাংকিং খাতে তার এই আবির্ভাবকে সহজভাবে আস্থার সঙ্গে নেওয়া কঠিন। ২৪০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত এ মুহূর্তে ফেসবুকের হাতে। অর্থ জালিয়াতিতে এই উপাত্ত ব্যবহৃত হবে না, ফেসবুক সে নিশ্চয়তা দিতে পারবে কি? এখন পর্যন্ত লিবরা প্রচলন করার বিষয়ে ফেসবুক যেসব তৎপরতা চালিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক খাত যেসব নীতিমালার আওতায় কাজ করে, ফেসবুককে একই নীতিমালার অধীনে আসতে হবে। ফেসবুক তার গ্রাহকদের জমা রাখা লিবরাকে প্রচলিত মুদ্রায় ভাঙিয়ে তা লগ্নি করবে না, সেই প্রতিশ্রুতি তাকে দিতে হবে।