আবারও ফেসবুককে সিগারেটের সঙ্গে তুলনা
সুযোগ পেলেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে দু-চার কথা শুনিয়ে দিতে পছন্দ করেন ক্লাউড কম্পিউটিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক বেনিওফ। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের কথার প্রেক্ষিতে আরও একবার ফেসবুকের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রযুক্তি জগতে ঠোঁটকাটা হিসেবে পরিচিত মার্ক বেনিওফ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে ‘নতুন সিগারেট’ বলে সমালোচনা করেছেন তিনি। ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বেনিওফ বলেন, ফেসবুক সিগারেটের মতোই শিশুদের আসক্ত করে তুলছে।
এর আগেও গত বছরের নভেম্বরে তিনি ফেসবুকের সমালোচনা করেছিলেন। ওই সময়েও তিনি ফেসবুককে সিগারেটের সঙ্গে তুলনা করেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘ফেসবুক হলো নতুন সিগারেট। আপনারা জানেন, এটা আসক্তি সৃষ্টি করে। এটা আপনার জন্য ভালো নয়। আপনাকে অনেক মানুষ এটা ব্যবহার করার জন্য টেনে আনবে। কী ঘটবে, আপনি বুঝতেই পারবেন না। তাই সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কী ঘটছে, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।’
গত বুধবার এক টুইটে বেনিওফ আবার বলেছেন, ‘ফেসবুক এক ধরনের প্রকাশক হিসেবে কাজ করে। তাই ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে ছড়ানো অপপ্রচারের জন্য ফেসবুককেই দায় নিতে হবে। ফেসবুক সিগারেটের মতো যা আসক্তি সৃষ্টিকারী, আমাদের জন্য ক্ষতিকর এবং শিশুরা এর প্রতি ঝুঁকে পড়ছে।’
সম্প্রতি ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে একটি বক্তব্য রাখার ঘোষণা দেন। বেনিওফ এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ফেসবুক ঘিরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির জন্য ফেসবুককেই দায়ী করা উচিত।
পরে বার্তা সংস্থা সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেনিওফ ফেসবুক ভেঙে দিতে চাপ প্রয়োগ করার পক্ষেও কথা বলেন।
জাকারবার্গ বলেছেন, ‘ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের কারণে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বড় হুমকি মোকাবিলা করার সুযোগ পাচ্ছে মানুষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর কমলা হ্যারিস এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনসহ একাধিক আইনপ্রণেতা ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতী। ওয়ারেন ফেসবুকে সফলভাবে একটি ভুয়া বিজ্ঞাপনও প্রচার করেছিল যেখানে দাবি করা হয়—মার্ক জাকারবার্গ এবং ফেসবুক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচনের জন্য সমর্থন জানিয়েছে। ওই বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর ফেসবুক ঘিরে আরও বেশি সমালোচনা হচ্ছে।
গত মার্চে প্রথম অসম প্রতিযোগিতা এবং ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস রোধে ফেসবুক, আমাজন এবং অন্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দেওয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান এলিজাবেথ ওয়ারেন। এরপর থেকে প্রায়ই সে প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। এমনকি বিলবোর্ডও টাঙিয়েছেন। প্রায় সাত মাস পর, গত মঙ্গলবার ফেসবুকের কর্মীদের সঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের বৈঠকের ধারণকৃত অডিও ফাঁস করে সংবাদ পোর্টাল ‘দ্য ভার্জ’।
গত জুনের সেই বৈঠকে কর্মীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন জাকারবার্গ। সেখানে ফেসবুক ভেঙে দেওয়ার এলিজাবেথ ওয়ারেনের প্রস্তাবের প্রসঙ্গও ওঠে। উত্তরে জাকারবার্গ আইনি লড়াইয়ের কথা বলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রত্যাশী এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ হবে, যদি আমরা এমন কোনো দুর্নীতির সমাধান না করি, যা ফেসবুকের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধ অসম প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।’
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ‘যদি তিনি (এলিজাবেথ ওয়ারেন) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে আমরা আইনি লড়াইয়ে যাব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সে লড়াইয়ে জিতব।’