আইফোনের গতি কমানোর মামলার সমঝোতা করছে অ্যাপল
যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন ৬, ৭ মডেল ব্যবহার করছেন, তাঁরা অ্যাপলের কাছ থেকে অর্থ পেতে পারেন। পুরোনো মডেলের আইফোনে অ্যাপল গতি কমিয়ে দিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্লাস অ্যাকশন মামলা হয়েছিল। ওই মামলা সমঝোতা করতে সম্মত হয়েছে মার্কিন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। মামলাটি সমঝোতা হলে অ্যাপল ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দাবিদারের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক আইফোন ব্যবহারকারী ২৫ মার্কিন ডলার করে পেতে পারেন। অ্যাপলের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে মামলা চালানোর খরচের চেয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে যুক্তিপূর্ণ মনে হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে মামলাটি চলছে।
আইফোনের হার্ডওয়্যার যন্ত্রের স্থায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদি হলেও কয়েক বছরের মধ্যে এর কার্যক্ষমতা ধীরগতির হতে শুরু করে—স্মার্টফোনটির ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ করে আসছেন। বেশির ভাগেরই ধারণা, নতুন সংস্করণের আইফোন বাজারে এলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলই পুরোনো আইফোনের সফটওয়্যারগত কার্যক্ষমতা ধীরগতির করে দেয়। এ কারণে ব্যবহারকারীরা বাধ্য হতেন নতুন সংস্করণের আইফোন কিনতে।
বেশ পরে হলেও অ্যাপল ২০১৭ সালে এ অভিযোগ স্বীকার করে নেয়। ওই সময়ে আইফোন ৬ ও ৬এস এবং ৭-এর গতি হুট করে কমে যাচ্ছে—এমন অভিযোগ আসতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া এক বিবৃতিতে পুরোনো মডেলের আইফোনের গতি ধীর হওয়ার কথা স্বীকার করে এর পেছনের কারণও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
অ্যাপল কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি আইফোন কয়েক বছর ব্যবহৃত হলে ইচ্ছাকৃতভাবেই এর প্রসেসরের ক্লক স্পিড কমিয়ে দেওয়া হয়। আইফোনের অ্যালগরিদম এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরও ফোনের ব্যাটারি সন্তোষজনক কার্যক্ষমতা দেখাতে পারে। তবে প্রযুক্তির নতুন নতুন সংস্করণ ও সফটওয়্যার হালনাগাদের ফলে একসময় ফোনের ব্যাটারি এবং প্রসেসর নতুনের মতো আর কার্যক্ষম থাকে না। তাই আইফোন ব্যবহারকারীদের যেন কোনো বাজে অভিজ্ঞতা না হয়, তাই নতুন সংস্করণের আইফোন নিতে ধীরগতি করে দেওয়ার কাজটি করে থাকে অ্যাপল।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রাহকদের সবচেয়ে ভালো কার্যক্ষমতার আইফোন দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। এর মধ্যে সার্বিক কার্যক্ষমতা ও যন্ত্র দীর্ঘস্থায়ী করার বিষয় রয়েছে। শীতল আবহাওয়ায় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চাহিদার চেয়ে কম শক্তি সরবরাহ করে। অনেক দিন ব্যবহারের পর ব্যাটারির চার্জ কম থাকে। যার কারণে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশগুলো রক্ষা করতে যন্ত্রটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে আইফোন ৬ ও ৬এস এবং ৭-এ ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের কোনো কিছুই করা হয়নি।
অ্যাপলের ওই স্বীকারোক্তির পর ব্যবহারকারীরা সমালোচনা শুরু করেন। এর ফলেই কম খরচে ব্যাটারি বদলে দিতে সম্মত হয় অ্যাপল। তবে এতে শেষ রক্ষা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে অ্যাপলের বিরুদ্ধ তদন্ত ওই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিবিসি জানিয়েছে, সমঝোতার পর যাঁদের নাম অ্যাপলের বিরুদ্ধে ওই মামলায় রয়েছে, তাঁরা ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার করে পাবেন। যাঁরা সাক্ষী দিয়েছেন, তাঁরা পাবেন ৩ হাজার ৫০০ ডলার করে।