প্রযুক্তির এই দিনে: ৫ আগস্ট
দেশে তৈরি হলো প্রথম ইউপিএস
দেশে প্রথমবারের মতো ১৯৮৮ সালে দ্য একসিস প্রাইভেট লিমিটেড ইউপিএস (আনইন্টারপটিবল পাওয়ার সাপ্লাই) করে।
আগস্ট ১৯৮৮
দেশেই তৈরি হলো দেশের প্রথম ইউপিএস
আজহারুল মান্নান অপু, মুনিম হোসেন রানা ও ইকবাল আহমেদ নুটু—গল্পটা এই তিন বন্ধুর। গত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আজহারুল মান্নান ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক। মুনিম ও ইকবাল তখনো ছাত্র পদার্থবিজ্ঞানের। এই তিন বন্ধুর আগ্রহ ইলেকট্রনিকস ও কম্পিউটারে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ৭/১ আওরঙ্গজেব রোডে তিনজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন দ্য একসিস প্রাইভেট লিমিটেড। ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি, কম্পিউটার বিপণন ও প্রশিক্ষণ পরিচালনার পাশাপাশি ইলেকট্রনিকসের নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলে এ প্রতিষ্ঠানে। দ্য একসিস প্রাইভেট লিমিটেডেই ১৯৮৮ সালে তৈরি হয় ইউপিএস (আনইন্টারপটিবল পাওয়ার সাপ্লাই)।
একসিস লিমিটেডের হাত ধরে দেশে তৈরি প্রথম ইউপিএস ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থা আশা। মুনিম হোসেন জানান, আশা তখন বড় এনজিও। প্রতিদিন কম্পিউটারে তাদের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির হিসাব করতে হয়। লোডশেডিংয়ে তাদের কাজে বড় সমস্যা হয়। অ্যাকসিসের অফিসে আশার একজন কর্মকর্তা এসে বলেন দ্রুত একটি ইউপিএস দিতে। ১৯৮৮ সালের এক বৃষ্টির দিনে মুনিম হোসেনসহ আশার কার্যালয়ে গিয়ে তাদের অ্যাপল মেকিন্টোশ কম্পিউটারের সঙ্গে ইউপিএস বসিয়ে দিয়ে আসেন।
একসিসের ইউপিএসের নাম ছিল ‘পাওয়ার প্রসেসর’। প্রথম ইউপিএসের ক্ষমতা ছিল ১০০০ ভিএ। এটি সাড়ে তিন ঘণ্টা ব্যাকআপ দিতে পারত। দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এই দেশি ইউপিএস। তখন বিদেশ থেকে যেগুলো আসত, সেগুলোর ব্যাকআপ সময় বেশি ছিল না, ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। সেই সময়ে ১০০০ ভিএর ইউপিএস অ্যাকসিস বিক্রি করত ১৬ হাজার টাকায়। এরপর ৭৫০ ভিএ থেকে ২ কেভিএ পর্যন্ত ক্ষমতার ইউপিএস বাজারজাত করে অ্যাকসিস। পরবর্তী একদশক ধরে তিন বন্ধুর ইউপিএস জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। মাসে গড়ে ৪০টির ইউপিএস বিক্রি হতো।
১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলীয় সরকারের আমন্ত্রণে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত প্রযুক্তি মেলা ‘পিসি শো ৯৫’–এ বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান—দি একসিস প্রাইভেট লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পিউটার্স লিমিটেড ও বেক্সিমকো কম্পিউটারস। এই মেলায় একসিসের ইউপিএস ‘পিসি ৯৫ আউটস্ট্যান্ডিং পারফরম্যান্স সার্টিফিকেট’ অর্জন করে।
নব্বই দশকের শেষ ভাগে সুন্দর প্যাকেজিংয়ে ছোট আকারের বিদেশি ইউপিএস যখন দেশের বাজারে আসে, তখন দেশের প্রথম ইউপিএসের বাজার পড়তে থাকে। যদিও আমদানি করা ইউপিএসগুলোর ব্যাকআপ কম ছিল। তবে তাদের ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ লাগত না। অ্যাকসিসের ইউপিএসের ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ করতে হতো প্রতিবছর একবার করে। আর প্যাকেজিং তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। আকারেও বড় ছিল।
বাজার হারালেও সেই সময় তিন তরুণের এই উদ্ভাবনী ভাবনায় দেশের প্রথম ইউপিএস কম্পিউটারে অনেকের কাজকে করে তুলেছিল নিরবচ্ছিন্ন।
৫ আগস্ট ১৯৬৭
রিড হফম্যানের জন্ম
পেশাজীবীদের মধ্যে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। রিড হফম্যান উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও লেখক হিসেবে পরিচিত। তবে লিংকডইনের জন্য তিনি বেশি পরিচিতি পেয়েছেন।
১৯৯৪ সালে অ্যাপল কম্পিউটারে যোগ দেন রিড হফম্যান। সেখানে তিনি ইওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করেন। এটি ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরির প্রথম দিককার একটি প্রচেষ্টা। ১৯৯৬ সালে আমেরিকা অনলাইন (এওএল) ইওয়ার্ল্ড অধিগ্রহণ করে।
১৯৯৭ সালে রিড হফম্যান তাঁর প্রথম কোম্পানি সোশ্যালনেট প্রতিষ্ঠা করেন। ‘অনলাইন ডেটিং’ ও কাছাকাছি আগ্রহের মানুষদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের দিকে নজর ছিল সোশ্যালনেটের। পেপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েল বলেন, সোশ্যালনেট ডটকম আক্ষরিক অর্থেই সময়ের আগে চিন্তা করা একটি ধারণা ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ৭–৮ বছর আগেই এটি তৈরি হয়েছিল।
২০০৩ সালের এরিক লি ও রিড হফম্যান লিংকডইন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এখন পেশাগত, ব্যবসায়িক এবং চাকরিপ্রার্থী ও নিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত লিংকডইনের ব্যবহারকারী সংখ্যা ৯৩ কোটি।
সূত্র: কম্পিউটার হোপ