সরকার পতনের পর কোন পথে বেসিস, উই ও ই-ক্যাব
সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম অ্যাজেন্ডা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ ও সম্প্রতি স্মার্ট বাংলাদেশ। সে কারণেই আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের সংগঠন ও এগুলোর নেতাদের সঙ্গে সরকারের একধরনের সখ্য ছিল। তাই ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কয়েকটি সংগঠন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ট্রাস্ট ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সংগঠনগুলোর সদস্যরাও এসব আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
সংগঠনগুলোর বর্তমান নেতারা বলছেন, সদস্যদের মধ্যে মতের অমিল হতেই পারে। তবে এই সংকটময় সময়ে সদস্যদের নিয়েই কাজ করে যাবেন তাঁরা। তিন সংগঠনের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমাদের আরও একটু প্রতিবাদী হতে হবে। সংগঠনের নেতাদের আওয়াজ আরও স্পস্ট আওয়াজ হতে হবে। যাতে সদস্যদের কথাটা তাদের মাধ্যমে সরকার শোনে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের ইন্টারনেটসহ ব্যবসা করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে আইসিটি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, এটা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’ ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো বেকায়দা অবস্থায় আইসিটি খাত না পড়ে, সেটা নিশ্চত করার কথাও বলেছেন সদস্যরা। সদস্যদের অনেকেই বলেছেন, ‘আমরা ক্ষোভ থেকে কথা বলছি। কারণ, কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় আমাদের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আমাদের একটাই চাওয়া, সুন্দর আইসিটি-বান্ধব একটি বাংলাদেশ গড়া।’
বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, বেসিস কাজ করে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তিশিল্প নিয়ে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত বেসিসের প্রতিটি কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়েছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এটাই বেসিসের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই ধারাবাহিকতায় বিগত মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেসিসের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটা বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে সদস্যদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে দর–কষাকষি করার ক্ষেত্রেও বেসিসের সুনাম সব সময়।
বেসিস বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতাও করেছে বলে জানান রাসেল টি আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এটুআই আইন করার বিরুদ্ধে বেসিস ছিল উচ্চকণ্ঠ। পরবর্তী সময়ে আমরা পুরো আইনটি বাতিল করতে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারা বাদ দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা নতুন সরকারের কাছেও এটুআই আইন বাতিলের জন্য সুপারিশ করব। আমরা ডেটা প্রাইভেসি আইন সম্পর্কে একাধিকবার মতামত দিয়ে সেটাকে গ্রহণযোগ্য জায়গায় নিয়ে এসেছি। আমরা বিভিন্ন সময় সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়েও কথা বলার চেষ্টা করেছি। নতুন সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি থাকবে, জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার স্বার্থে আইনটি বাতিল হোক। বেসিস থেকে নতুন সরকারের কাছে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হবে।’
উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আকতার বলেন, ‘উই একটি ট্রাস্ট, আমরা নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। কারণ, আমরা সম্মেলন (সামিট) করলে সহযোগীতা পেতাম। এখন সরকারের পতন হয়েছে, কেউ কেউ আমাদের সমালোচনা করছেন। কিন্তু এগুলো তো বোকার মতো কথা। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে, সেটা আমরা জানি। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, আমরা তাদের সঙ্গেই তো কথা বলব, তাদের সঙ্গেই কাজ করব। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের উদ্যোক্তাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়, এখন আমরা সরকারের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করব।’
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ই-ক্যাব অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন, আমাদের ২ হাজার ৭৭৫ জন সদস্য রয়েছেন। আমরা এই সদস্যদের জন্যই কাজ করে থাকি। এখন নতুন সরকারের কাছে আমরা আমাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করব। কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারে ই-ক্যাব, সেটা নিয়েই কাজ করছি। তবে হ্যাঁ, আমাদের অনেক সদস্যের মত ভিন্ন হতে পারে। সেটাও আমরা বসে ঠিক করে ফেলব। সদস্যদের জন্যই ই-ক্যাব।’