কোন স্মৃতি কেন বেশি দিন স্থায়ী হয়
গত মাসে কোথায় গিয়েছিলেন, তা হুট করে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারেন না অনেকেই। আবার বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ দিনে কী হয়েছিল, তা গড়গড় করে বলে দিতে পারেন অনেকেই। কোনো কোনো ঘটনা বেশি দিন মনে থাকে, আবার কোনো ঘটনা আমরা দ্রুত ভুলে যাই। কেন স্মৃতি এমন ছল করে, তা নিয়ে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে গবেষণা করছেন। গত কয়েক দশকের গবেষণায় জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন আমাদের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা রাতে ঘুমের সময় মস্তিষ্কে স্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। নতুন একটি গবেষণায় সেই প্রক্রিয়া নিয়ে জানা গেছে। কোন স্মৃতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মস্তিষ্কে থাকে, তা নির্ভর করে ঘুমের প্রকৃতির ওপর। ঘুমের কারণেই নির্ধারিত হয় কোন স্মৃতি কেমন স্থায়ী হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকেরা স্মৃতি নিয়ে কাজ করছেন। বিজ্ঞানী জিওর্গি বুজসাকি বলেন, আমাদের মস্তিষ্কে কিছু ভিন্ন নিউরন কোষ থাকে। এসব কোষ ইতিবাচক ও নেতিবাচক চার্জের ভারসাম্যের মাধ্যমে স্মৃতিকে সংরক্ষণ বা এনকোড করতে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করে। মস্তিষ্কে যে নিউরন থাকে, তার বড় অংশকে হিপোক্যাম্পাস ফায়ার বলে। এসব নিউরন একে অপরের সঙ্গে মিলিসেকেন্ডের মধ্যে সংকেতের ধারাবাহিকতা বা ক্রম তৈরি করে জটিল তথ্য এনকোড করতে পারে। শার্প ওয়েব রিপলস পদ্ধতিতে দলবদ্ধ নিউরন মস্তিষ্কের বাকি অংশের নিউরনকে আলোড়িত করে। এভাবেই স্মৃতি গভীর হয়। শার্প ওয়েভ-রিপলস বিশেষ ধরনের ইলেকট্রোফিজিওলজিক্যাল ঘটনা, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কে ঘুমের সময় বা জেগে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। সায়েন্স জার্নালে নতুন গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা দেখেছেন, দিনের বেলার ঘটনা ঘুমের সময় বেশি বেশি মস্তিষ্কে টিভির বিজ্ঞাপনের মতো বারবার প্রচার হতে থাকে। যে কারণে বিশেষ বিশেষ স্মৃতি বেশি স্থায়ী হয়। যেসব ঘটনার সময় শার্প ওয়েভ-রিপলস কম হয়, সেই ঘটনা নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরি হয় না। বিজ্ঞানী জিওর্গি বুজসাকি বলেন, শার্প ওয়েভ-রিপলস বা তীক্ষ্ণ তরঙ্গ—তরঙ্গ এমন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নেয় কোথায় কী রাখতে হবে ও কী বর্জন করতে হবে। নতুন গবেষণা আমাদের পরিচিত প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছি। মানুষসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা কয়েক মুহূর্তের জন্য চারপাশে কী হচ্ছে, তা প্রথমে অনুভব করে তারপর বিরতি নেয়। তারপর আরও কিছু অভিজ্ঞতা বা বাস্তবতায় ব্যস্ত থাকে, তারপর আবার বিরতি নেয়। আমরা কোনো কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার পর আবার অলস হয়ে যাই। এ ধরনের ক্ষণস্থায়ী বিরতি সারা দিন ঘটে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অলস থাকি ঘুমের সময়। যখন আমরা ঘুমাচ্ছি, তখন প্রতি রাতে হাজার হাজারবার বিশেষ বিশেষ স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কে চলতে থাকে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিউরন কোষের মধ্যে সংযোগ শক্তিশালী হয়। যে ঘটনা বেশি আলোড়ন তৈরি করে, সেই ঘটনা তত বেশি মনে থাকে আমাদের।
সূত্র: সায়েন্স ডেইলি