মহাকাশে তৈরি হবে ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর
ভাবুন তো, মহাকাশে বিশাল স্থাপনা, তার মধ্যে চলছে পণ্য উৎপাদন। যন্ত্র থেকে একের পর এক ওষুধ বের হয়ে আসছে কিংবা তৈরি হচ্ছে স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির এসব দৃশ্য এবার সত্যি হতে চলেছে। বড় আকারে না হলেও মহাকাশে পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা শুরু করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
ব্যবসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকিনসের অংশীদার ইলান রোজেনকফ জানান, ওষুধশিল্প, সেমিকন্ডাক্টর, সৌন্দর্য, স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট পণ্যসহ সম্ভাব্য খাদ্য উৎপাদনের নতুন বাজার বাড়ছে। ২০৩০ সালে এই বাজারের আকার হবে প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার। গবেষণা ও পণ্য উৎপাদনের জন্য উচ্চমাত্রার বিকিরণ, মাইক্রোগ্র্যাভিটি আর প্রায় শূন্য বাতাসের আবহে নতুন পণ্য উৎপাদনের সুযোগ থাকায় মহাকাশ এই খাতে নতুন সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগে মহাকাশের বিশাল শূন্যতায় এমন পণ্য তৈরির ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) অনেক আগে থেকেই এমন কাজ করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান বা শিল্প খাতের জন্য মানব কোষ, সেমিকন্ডাক্টর, নতুন ওষুধ তৈরির গবেষণা সেখানে সব সময় চলে। সুযোগ থাকলেও আইএসএসের আকার বেশ ছোট আর প্রতিযোগিতামূলক বটে। এখন সেই সংকট মোকাবিলায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মহাকাশে রীতিমতো কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ভারদা স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজও রয়েছে।
এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রোটিন ক্রিস্টালস পৃথিবীর চেয়ে মহাকাশে বেশ ভালোভাবে বিকশিত হয়। তরলের বাষ্প থেকে নিরেট প্রোটিন কাঠামো তৈরি করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে গবেষকেরা বিভিন্ন রোগের সম্ভাব্য ওষুধের কার্যকারিতা বুঝতে পারেন। শীতল পরিবেশে এমন গবেষণা বেশ কার্যকর। মহাকাশে মূলত ওষুধের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলো তৈরি করা হবে। ভারদা স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেলিয়ান অ্যাসপারোভ জানান, ‘আমরা মহাকাশে পেনিসিলিন বা সাধারণ সব ওষুধ তৈরির কথা ভাবছি না।’
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে অবস্থিত স্পেস ফোর্জ মহাকাশে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের কৌশল নিয়ে গবেষণা করছে। সিলিকন ছাড়া অন্য উপায়ে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্যও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে স্পেস ফোর্জের প্রতিষ্ঠাতা জোশ ওয়েস্টার্ন বলেন, ‘আমরা স্ফটিক বা ক্রিস্টাল তৈরি করব মহাকাশে, তারপর তা পৃথিবীতে এনে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করব।’ প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রিউ পারলক বলেন, ‘আমরা সেমিকন্ডাক্টরের সক্ষমতা ১০ থেকে ১০০ গুণ বাড়ানোর জন্য গবেষণা করছি।’ ওষুধশিল্পের মতো সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সাফল্যের জন্য নিখুঁত স্ফটিক তৈরি করতে হয়, যা মহাকাশে তৈরির সুযোগ রয়েছে। নতুন চিপ দিয়ে ৫–জি ও ইলেকট্রিক গাড়ি শিল্পে দারুণ সব পরিবর্তন আনা যাবে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সেমিকন্ডাক্টর গবেষক নাদিম চৌধুরী প্রথম আলোকে হোয়াটসঅ্যাপে জানান, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এখন সিলিকনের বদলে উন্নত খনিজ ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টরের কার্যকারিতা আরও বিস্তৃত করার পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এককথায় বলা যায়, পৃথিবীতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য কাঁচামাল, শিল্প কারখানা নিয়ে প্রতিযোগিতা অনেক। মহাকাশ সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ভাবনার সুযোগ করে দিচ্ছে।
সূত্র: সিএনবিসি