এক্স-রে মেশিনে এআই প্রযুক্তি, ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশেও

এআই প্রযুক্তিনির্ভর বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্তে বেশ সফলতা পাওয়া যাচ্ছেরয়টার্স

১৮৯৫ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ভিলহেল্ম কনরাড রন্টগেন উচ্চ মাত্রার তড়িৎ–চৌম্বকীয় (ইলেকট্রোম্যাগনেটিক) বিকিরণ এক্স-রে আবিষ্কার করেন। এক্স-রের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতিবেগুনি রশ্মির চেয়ে কম, তবে গামা রশ্মির চেয়ে বেশি। এক্স-রে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। আকারে বড় হওয়ায় এক্স-রে মেশিন সহজে বহন করা যায় না। ফলে রোগী যত অসুস্থ থাকুক না কেন, হাসপাতালের এক্স-রে কক্ষে নিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনও তৈরি করেছেন গবেষকেরা। বর্তমানে বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের ছবি দ্রুত প্রক্রিয়া করে রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সফটওয়্যার। এর ফলে এক্স-রের প্রতিবেদন দ্রুত সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্যাম পিলকিংটন বলেন, বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিন আক্ষরিক অর্থে জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করছে। এআই প্রযুক্তি সুবিধার বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্র, দুর্গম এলাকা ও দূরবর্তী স্থানের রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। চাকার ওপর রাখা বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনকে মোবাইল এক্স-রে মেশিন বলা হয়। একজন ব্যক্তি একাই এই মেশিন বহন করতে পারেন। বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিন হাসপাতালের বড় এক্স-রে মেশিনের মতো একই মানের চিত্র তৈরি করে।

আরও পড়ুন

জার্মানির ওআর টেকনোলজি ও নেদারল্যান্ডসের ডেলফের বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এসব মেশিন সহজে গাড়ি বা মোটরসাইকেলে বহন করা যায়। এ বিষয়ে ওআর টেকনোলজির বাণিজ্যিক কর্মকর্তা টিম থার্ন বলেন, বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের চাহিদা বেশি। ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহনযোগ্য এক্স-রে যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে যক্ষ্মা পরীক্ষার ক্ষেত্রে। স্টপ টিবি পার্টনারশিপের উপনির্বাহী পরিচালক সুভানন্দ সাহু বলেন, এক্স-রে মেশিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগের পরীক্ষা করতে সমস্যা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় এক্স-রে মেশিন নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। বর্তমানে বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ছবি দ্রুত প্রক্রিয়ার জন্য এআই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

এআই প্রযুক্তিনির্ভর বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্তকরণে বেশ সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইউএসএআইডির অ্যালায়েন্স ফর কম্বেটিং টিবি কর্মসূচির মাধ্যমে আইসিডিডিআরবি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এআই–নির্ভর এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করছে। সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর এলাকা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা–বাগানে বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করছে সংস্থাটি।

বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের বিকিরণের ক্ষতিকর দিক নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন অনেকেই। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন সিসার দেয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধী আবরণের মধ্যে ব্যবহার করা হয়। ফলে এক্স-রে মেশিনের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। কিন্তু বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিন ব্যবহারের সময় এমনটি করা হয় না। তবে বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের নিরাপত্তার বিষয়ে স্টপ টিবি পার্টনারশিপের ডিজিটাল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ঝি ঝেন কিন বলেন, এসব মেশিন বিকিরণবিষয়ক নিরাপত্তা–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা অনুসারে নকশা করা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি