সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের ১৮ গুণ বড় ছাতা পাঠানো হবে মহাকাশে
রোদ ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা অনেকেই নিয়মিত ছাতা ব্যবহার করি। সূর্যের তাপ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে এবার সূর্যের তাপ প্রতিরোধ করতে সক্ষম বিশাল ছাতা মহাশূন্যে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। সূর্যের রশ্মির কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব কমাতে পৃথিবী থেকে ৯০ লাখ মাইল দূরে মহাকাশে এই ছাতা স্থাপন করা হবে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সূর্যের আলো প্রতিরোধী ছাতাটির আকার হবে প্রায় ২৭ লাখ বর্গ কিলোমিটার, যা আর্জেন্টিনার আয়তনের প্রায় সমান। বাংলাদেশের আয়তন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গকিলোমিটার হওয়ায় এই ছাতা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ১৮ গুণ বড়। এই বিশাল ছাতা স্থাপনের দুই বছরের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ বর্গ ফুট আকারের ছাতা তৈরির জন্য দুই কোটি মার্কিন মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ করছেন।
টেকনিওন-ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা ২০২৭ সালের মধ্যে এই ছাতা মহাকাশে স্থাপন করতে চান। ছাতা যেমন বন্ধ বা খোলা যায়, বিশাল এই ছাতাও খোলা বা বন্ধ করা যাবে। তবে বিজ্ঞানীদের এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সমালোচনাও করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বিশাল আকারের এই ছাতা স্থাপন করতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হবে। ছাতায় হালকা ওজনের সৌর প্যানেল থাকবে, যার মাধ্যমে ছাতাটি খোলা বা বন্ধ করা যাবে। এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আভি লোয়েব বলেন, মহাকাশে এমন বিশাল স্থাপনা স্থাপন করা খুব ব্যয়বহুল হবে।
পৃথিবীর উষ্ণতা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সূর্যরশ্মি ঠেকানোর কৌশল আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন গবেষকেরা। ২০২১ সালে এমনই এক উদ্যোগে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ৩০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেন। তবে সে উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। নতুন এ উদ্যোগের বিষয়ে ফ্রান্সের ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভান্সড ট্রেনিং ইন সায়েন্টিফিক কম্পিউটেশনের গবেষক সুজান বাউর বলেন, এই বিশাল ছাতা জ্যোতির্বিদ্যার দৃষ্টিতে বেশ ব্যয়বহুল। সময়মতো বাস্তবায়ন করা যাবে না। সৌর ঝড় বা গ্রহাণুর কারণে ছাতাগুলোর ক্ষতি হয়ে নতুন করে উষ্ণতা–সংক্রান্ত বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। সূর্যরশ্মি ঠেকাতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করার তুলনায় পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কাজ করা সহজ।
পৃথিবীর উষ্ণতা কমানোর জন্য ছাতার মতো বিশাল আবরণ স্থাপনের জন্য আগামী তিন বছরের মধ্যে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করা হবে। ছাতা তৈরির দলের প্রধান ইয়োরাম রোজেন বলেন, সূর্যের ছায়া প্রতিরোধী বিশাল ছাতাটি রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট বা এলওয়ান স্থানে স্থাপন করা হবে। ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে সূর্য ও পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তির আকর্ষণ ও বিকর্ষণের মাত্রা সমান। পৃথিবী থেকে পাঠানো ছাতাটি পৃথিবীর একটি বিশাল অংশের ওপর ছায়া দেবে। পুরো পৃথিবীকে ছায়া দিতে মহাকাশের আলাদা স্থানে ছাতা স্থাপন করা হবে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস