পৃথিবীর বুকে দৌড়ে বেড়ানো শেষ প্রজাতির ডাইনোসর এটি
আকাশে এখন অনেক রঙের ধূমকেতুর দৌড় কিংবা উল্কাপাতের দেখা মেলে। এমনই এক ধূমকেতুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিদায় নেয়। সেই ধূমকেতুর আঘাতের সময় পৃথিবীতে ছিল, এমন এক ডাইনোসরের হদিস মিলেছে। স্পেনের পালার্স হুস্সা নামের জায়গায় সন্ধান পাওয়া যায় তৃণভোজী ক্যালভ্যারিয়াস ডাইনোসরের জীবাশ্মের।
ইগুয়ানোডনশিয়ান অরনিথপড ডাইনোসরের প্রজাতি ছিল ‘ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস’। স্পেনের ইউনিভার্সিটাট অটোনোমা দ্য বার্সেলোনার দুই জীবাশ্মবিদ প্রথম এই জীবাশ্মের সন্ধান পান। ডাইনোসরের পায়ের একটি অংশ খুঁজে পান তাঁরা।
ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস নামের সেই প্রজাতি নিয়ে আলবার্ট প্রেইটো-মাকুইজ ও আলবার্ট সেলাস একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন সম্প্রতি। সেই নিবন্ধ ‘জার্নাল অব ভার্টিব্রাটাাটা প্যালেওনটোলোজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বহুকাল আগে ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস ইবেরো-আরমোরিকান দ্বীপাঞ্চলে বাস করত। সেই ইবরো-আরিমোরিকান দ্বীপ থেকেই এখনকার ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগালের ভূ-উৎপত্তি। পশ্চিম ইউরোপের সবুজ প্রাঙ্গণে সেই সময় দেখা মিলত ক্যালভ্যারিয়াসদের। ক্যালভ্যারিয়াস নামের লাতিন অর্থ দুঃখ। ধূমকেতুর আঘাতের স্মরণে এমন নাম দেওয়া হয়েছে। সেই ধূমকেতুর আঘাতের এলাকার নাম সেরাত দেল ক্যালভারি। অন্যান্য ডাইনোসরের চেয়ে গতি বেশি ছিল বলে পরের অংশ র্যাপিডাস রাখা হয়।
এসব ডাইনোসর প্রায় এক লাখ বছর আগে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ক্রেটাসিয়াস সময়ের আগেই হারিয়ে যায় তারা। ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস হচ্ছে নন-এভিয়ান অর্থাৎ আকাশে ওড়ার ক্ষমতাহীন ডাইনোসরের একটি প্রজাতি। ক্রেটাসিয়াস সময়ে অন্য সবার সঙ্গে বিলুপ্তি ঘটে সেগুলোর। ইগুয়ানোডনশিয়ান অরনিথপড ডাইনোসরের অনেক প্রজাতির মধ্যে একটি ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস। সেই সময়ে স্বজাতির সব ডাইনোসরের দেখা মিলত সব মহাদেশেই, আর ক্যালভ্যারিয়াস ছিল ব্যতিক্রম। ইবেরো-আরমোরিকান দ্বীপাঞ্চলের বাইরে তাদের যাতায়াত ছিল না। মধ্য জুরাসিক সময়ে সেগুলোর আবির্ভাব হয় বলে জীবাশ্ম পরীক্ষা করে জানা যায়।
গবেষকেরা ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাসের মধ্যে বিবর্তনের ধারা খেয়াল করেছেন। আবির্ভাবের সময়ে অন্যান্য ডাইনোসর তুলনামূলক খাটো ছিল, ১ থেকে ২ মিটার লম্বা। ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস আকারে তেমনি ছিল, আর শুরুর দিকে তাদের কম ক্ষমতাধর পা দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে বিবর্তনের ধারায় শক্তপোক্ত আকার ধারণ করে ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস। নিজের ওজনের চেয়ে ৩০ গুণ ভার বহন করতে পারত। আকারে খাটো হলেও অন্য ডাইনোসরগুলোর মতোই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয় তারা। সময়ের পরিক্রমায় ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাসের আকার বৃদ্ধি না পেলেও দৈহিক পরিবর্তন বেশ দেখা যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে তাদের গতিশীলতা। একই প্রজাতির অন্যদের অবশ্য দৈহিক বৃদ্ধি কম ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
২০১৯ সালে স্পেনে প্রথম ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাসের ফসিলের দেখা মেলে। দক্ষিণ–পশ্চিমের ক্যাটালনিয়াতে পাওয়া যায় এই ফসিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২৫ মিটার নিচের এলাকায় সন্ধান মেলে এই ফসিলের। গবেষকদের ধারণা, এই প্রজাতির ডাইনোসর দ্রুত চলাফেরা করতে পারত। তাঁরা মনে করছেন, ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস এককভাবে এই অঞ্চলেই দেখা মিলতো। সেই সময় ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস ছাড়াও স্টের্যাকোটেরিয়ান প্রজাতির ডাইনোসরের আধিপত্যও ছিল। ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে বাস ছিল তাদের। মেসোজোয়িক সময়ের শেষ দিকে বিলুপ্ত হয় তারা। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করা শেষ প্রজন্মের ডাইনোসর দলের একদল ছিল ক্যালভ্যারিয়াস র্যাপিডাস।
সূত্র: সাই নিউজ