নভোচারীদের ওপর মহাকাশ বিকিরণের প্রভাব নিয়ে নাসার গবেষণা

মানবশরীরের ওপরে মহাকাশ তরঙ্গ ও বিকিরণের প্রভাব কেমন হতে পারে, তা জানতে পরীক্ষা চালিয়েছে নাসা (প্রতীকী ছবি)এএফপি

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা—নাসা হেলগা ও জোহার নামের ম্যানিকুইনের (পুতুল) মাধ্যমে সম্প্রতি মহাকাশ বিকিরণ নিয়ে একটি পরীক্ষা চালিয়েছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে মানুষের চন্দ্রজয় আর মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হবে। মানবশরীরের ওপরে মহাকাশ তরঙ্গ ও বিকিরণের প্রভাব কেমন হতে পারে, তা জানতে এমন পরীক্ষা চালানো হয়েছে। দুটি ম্যানিকুইন মহাকাশযানের ভেতরে রেখে বিভিন্ন সেন্সরের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বাইরে নভোচারীদের ওপর বিকিরণের প্রভাব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। মঙ্গল গ্রহে যেতে দীর্ঘ মহাকাশযাত্রায় কীভাবে নভোচারীদের সুরক্ষা দেওয়া যায়, তার উপায় বের করা হচ্ছে।

গবেষকেরা ২০২২ সালে চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা যাত্রীবিহীন আর্টেমিস–১ অভিযানের অধীনে ওরিয়ন মহাকাশযানের মাধ্যমে এই পরীক্ষা পরিচালনা করেন। মহাকাশযানের ভেতরে বিভিন্ন সেন্সর স্থাপন করে বিকিরণের মাত্রা নিয়ে প্রাথমিক তথ্যাদি প্রকাশ করা হয়েছে। মহাকাশযানের ওপরে বিকিরণ যে প্রভাব তৈরি করে, তা নাসার হেরা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ইএডি সেন্সর যন্ত্র দিয়ে বের করা হয়েছে।
বিকিরণ নিয়ে অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। মহাকাশচারীরা পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি মিশনে গেলে এই বিকিরণ বিপত্তি ঘটাতে পারে। নাসার নতুন মিশন আর্টেমিস কর্মসূচির লক্ষ্য চলতি দশকের মধ্যে নভোচারীদের চন্দ্রপৃষ্ঠে পাঠানো। মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতের মানবঘাঁটি স্থাপন করার লক্ষ্যে নাসার আর্টেমিস কর্মসূচিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

গ্যালাকটিক মহাজাগতিক রশ্মি ও সৌর অগ্নিশিখার কারণে মহাকাশচারীদের বিকিরণজনিত অসুস্থতা, আজীবন ক্যানসারের ঝুঁকি, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ও অবক্ষয়জনিত রোগের উচ্চ ঝুঁকি দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন মহাকাশ গবেষকেরা। হেলগা ও জোহার ম্যানিকুইনের মাধ্যমে বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওরিয়ন ক্যাপসুলে তাদের রেখে সেন্সরের মাধ্যমে মানব ত্বক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গে বিকিরণ কেমন প্রভাব তৈরি করবে তা জানার কাজ চলছে। জোহরকে একটি বিকিরণ সুরক্ষা জ্যাকেট পরানো হয়। আর হেলগাকে কোনো সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হয়নি।
নেচার জার্নালে বিকিরণের প্রভাব নিয়ে নতুন এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের স্পেস রেডিয়েশন বিশ্লেষণ গ্রুপের পদার্থবিদ স্টুয়ার্ট জর্জ বলেন, হেলগা ও জোহর অত্যাধুনিক ম্যানিকুইন। বিকিরণের প্রতি মানবদেহের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য সেন্সর দিয়ে সজ্জিত করা হয়। নারী দেহের ওপরে বিকিরণের প্রভাব জানতে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। নারীদের সাধারণত পুরুষের তুলনায় বিকিরণে বেশি সংবেদনশীলতা থাকে। ভ্যান অ্যালেন বেল্ট বিকিরণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। সেই বেল্ট অতিক্রম করে ভ্রমণ ও আন্তগ্রহ ভ্রমণের ওপরে কেমন প্রভাব পড়ছে, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আন্তগ্রহ অভিযানে মহাজাগতিক রশ্মি দীর্ঘ মেয়াদে নভোযানের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই বিকিরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে বিকিরণের প্রভাব নিয়ে অনেক তথ্য আছে। বাইরে কেমন হবে, তা জানা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: রয়টার্স
https://www.reuters.com/science/spaceflight-radiation-exposure-tested-with-onboard-sensors-mannequins-2024-09-25/