বিল গেটস প্রাচীন কোন শস্যদানার খোঁজ করছেন, কেন
পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ফনিও নামের এক শস্য আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ খাবার হিসেবে গ্রহণ করছেন। এই ফনিও শস্য আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। এ বিষয়ে নিজের ব্লগসাইট ‘গেটস নোটস’-এ বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য লেখাটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
আমি যদি পূর্ব এশিয়ায় জন্ম নিতাম, তাহলে আমি সম্ভবত ছোটবেলায় অনেক বেশি ভাত খেতাম। আপনি যদি পশ্চিম আফ্রিকায় বড় হয়ে থাকেন, তবে আপনি ফনিও নামের প্রাচীন শস্য খেয়ে থাকবেন। ফনিও পাঁচ হাজারের বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম আফ্রিকায় বিভিন্ন পরিবার খাবার হিসেবে খাচ্ছেন। আফ্রিকা মহাদেশে আর কোনো শস্য এত দিন ধরে চাষ হচ্ছে না। মানব সভ্যতায় টয়লেট, চাকা আর বর্ণমালা আবিষ্কারের চেয়েও পুরোনো এই শস্যদানার ব্যবহার।
ফনিওর পাশাপাশি ফিঙ্গার মিলেট নামের ফসলের কথা হয়তো শুনেছেন। উগান্ডা, কেনিয়া ও তানজানিয়ার কিছু অংশে এই শস্য থেকে খাবার তৈরি হয়। ভারতে এই ফসল রাগি নামে পরিচিত। আপনি হয়তো টেফ নামের শস্যের কথা শুনেছেন। ইথিওপিয়াতে দীর্ঘদিন ধরে এই শস্য থেকে ইনজেরা নামের পিঠা তৈরি হয়। বাজরা নামের শস্য কয়েক শতাব্দী ধরে টিকে আছে। এ ধরনের ফসলের পুনরুত্থান বেশ ইতিবাচক। যাঁরা নতুন স্বাদ খুঁজেন আর কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ভালো বৃষ্টি হলে অল্প মাটি খুঁড়ে মাটিতে বীজ ছড়িয়ে দিতে হয় ফনিও চাষের জন্য। দুই মাস পরে ফনিও শস্য কাটার জন্য উপযোগী হয়। যদিও পশ্চিম আফ্রিকার কৃষকেরা এই শস্যকে অলস কৃষকের ফসল বলে অভিহিত করে।
ফনিও আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে বেশি হয়। সাহারা মরুভূমির ঠিক দক্ষিণে আধা-শুষ্ক অঞ্চলে বেশ ভালো জন্মায় এই ফসল। এই ফসল খরা-সহনশীল ও নিম্নমানের মাটিতে জন্মাতে সক্ষম। ফনিও শুধু শুষ্ক অবস্থায় বিকশিত হয় না, মাটির গুণকে পুনরুজ্জীবিত করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ঋতুর আপেক্ষিক অবস্থান ও চরিত্র বদলে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দানাদার শস্য ও ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গেটস ফাউন্ডেশন বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে ভুট্টা ও ধানের মতো প্রধান ফসলকে আরও জলবায়ু সহনশীল করতে কাজ করছে। আরেক দানাদার ফসল বাজরারও প্রাকৃতিক অনেক গুণ রয়েছে। বাজরার মতো ফসল আসলে কৃষকেরা খোঁজ করেন। এ ধরনের ফসল কৃষকদের উষ্ণতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ধরনের ফসলের মাধ্যমে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করা যেতে পারে। ইউরোপের মানুষ যখন প্রথম পশ্চিম আফ্রিকায় যায়, তখন ফনিও শস্যদানাকে ক্ষুধার্তের ভাত বলে ডাকা হতো। এ ফসল দ্রুত রোপণ করা যায়। যখন অন্যান্য খাবার পাওয়া যায় না, তখন আপনি এটি খেতে পারেন। আজ অনেকে এ শস্যদানাকে সুপারফুড বলে অভিহিত করছে। বিশ্বের কিছু অংশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। একটি উচ্চমানের পুষ্টির উৎস শিশুদের বিকাশকে আরও কার্যকর করতে পারে।
এই শস্যে সুস্বাদু পোরিজও বা জাউ ভাতের মতো খাবার তৈরি করা যায়। এসব খাবারে অনেক কিছু থাকার পরেও সর্বত্র কেন খাওয়া হয় না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফনিওর মতো ফসল বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা বেশ কঠিন। যে অংশ খাওয়া হয় তার বাইরের আবরণ শক্ত থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষ নারীরা পা ব্যবহার করে বাইরের আবরণ অপসারণের কাজ করে। ফনিও প্রক্রিয়ায় বেশ সময় ও শ্রম-লাগে। সেনেগালে চাষ করা ফনিওর মাত্র ১০ শতাংশ বাজারে বিক্রি হয়। বাকি অংশ প্রায় পুরোটাই কৃষক ও তাদের পরিবার সরাসরি ব্যবহার করে। ঐতিহ্যগতভাবে ফনিও ফসল কাটাও একটা কঠিন কাজ। শস্য সংগ্রহ, পরিষ্কার, ধোয়া, শুকানো ও রান্না করতে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে।
উল্লেখ্য, সেনেগালের একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় টেরা ইনগ্রেডিয়েন্টস নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইউরোপ ও আমেরিকায় এই শস্য বাজারজাতের জন্য কাজ করছে। বিল গেটস গত বছরের নভেম্বরে সেনেগাল ভ্রমণের সময় সেই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছিলেন।
অনুবাদ: জাহিদ হোসাইন খান
সূত্র: গেটস নোটস