মহাকাশে হবে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র
জ্বালানিসংকটে ইউরোপের নানা দেশ অনেক বছর ধরেই দিশাহারা। বিকল্প উপায়ে জ্বালানি উৎপাদনের পথ হিসেবে এবার মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে ইউরোপ। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) ব্রিটিশ নভোচারী টম পিক মহাকাশে এই সৌর খামার নিয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি সৌরবিদ্যুৎ-চালিত মহাকাশ খামার নিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
টিম পিক ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রথম নভোচারী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গমন করেন। তিনি ছয় মাস মহাকাশে অবস্থান করেন। তিনি মহাকাশে হাঁটার (স্পেসওয়াক) সুযোগও পান। মহাকাশে ছয় মাস অবস্থানের সময় প্রায় তিন হাজারবার তিনি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। তিনি বলেন, বিশালাকার রকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার টন পণ্য এখন পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে পাঠানোর উপায় তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে পৃথিবীর জ্বালানিসংকটের কথা বিবেচনা করে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ আছে।
চলতি বছর ইএসএ মহাকাশে সৌর খামার করার জন্য দুটি বড় আকারের গবেষণা পরিচালনা করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে মহাকাশে খামারের ব্যবসায়িক দিক উন্মোচন করবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। নভোচারী টিম পিক বলেন, ‘মহাকাশে খামারের সম্ভাবনা বাড়বে, যখন আমরা কার্গোর মাধ্যমে প্রতি কেজি পণ্য এক হাজার ডলারের মধ্যে পাঠাতে পারব। এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে খরচ পড়ে ২ হাজার ৭০০ ডলার।’
মহাকাশযান নির্মাণ সংস্থা স্পেসএক্সের ফ্যালকন হেভি রকেটের মাধ্যমে এ খরচ কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। দুটি রকেট এক করে বিশাল স্টারশিপ তৈরি করলে এ খরচ ৩০০ ডলার পর্যন্ত কমে আসতে পারে। ফ্যালকন হেভি এরই মধ্যে স্যাটেলাইটসহ নানা পণ্য মহাকাশে নিয়ে গেছে। বিশালাকার স্টারশিপ গত এপ্রিলে উৎক্ষেপণ করা হয়। যদিও উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট পরই সেটি বিস্ফোরিত হয়ে যায়। স্পেসএক্সের অন্যান্য রকেটের মতো এই স্টারশিপও আবার ব্যবহার করা যাবে। যে কারণে বারবার রকেট তৈরির ঝামেলায় পড়তে হবে না।
ইতিহাস বলছে, এর আগেও মহাকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে ভেবেছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৭০–এর দশকে এ বিষয়ে নানা রকম ধারণাপত্র দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো কাজ দেখা যায়নি। সেই সময়ের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে এর জন্য দায়ী বলা যায়। ২০০৮ সালে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ তৈরির জন্য রীতিমতো ‘জাতীয় লক্ষ্য’ হিসেবে আইন পাস করে জাপান।
২০২০ সালের পর জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বেশ জোরালোভাবে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০২০ সালের মে মাসে ইউএস নেভাল রিসার্চ ল্যাবরোটরি প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সৌরশক্তি উৎপাদনের পরীক্ষা চালায়। ২০৩৫ সালের মধ্যে চীন ২০০ টন পণ্য মহাকাশে পাঠাবে মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
ইএসএ সোলারিস কর্মসূচির মাধ্যমে মহাকাশে সৌর প্যানেল পাঠানোর কাজ করছে। এসব প্যানেল স্বয়ংক্রিয় রোবটের মতো একত্র হয়ে সোলার ফার্ম তৈরি করবে। পৃথিবীতে আমরা যে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র দেখি, তা অন্ধকারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না। কিংবা খারাপ আবহাওয়ায় কাজ করে না। অন্যদিকে মহাকাশের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র সব সময়ই কার্যকর থাকবে। মহাকাশনির্ভর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এ বছর সরকারিভাবে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ লাখ পাউন্ড অনুদান দেওয়া হয়েছে।
আপনি মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করলে সেখান থেকে মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তি পৃথিবীতে পাঠাতে পারেন। এর মাধ্যমে টেকসই ও ক্লিন এনার্জি নিরবচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীতে পাঠানো যাবে।
২০২০ সালে ব্রিটিশ সরকারের এক প্রতিবেদনে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনুপ্রেরণা দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বিশালাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য মহাকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান