ত্বক ও চোখের যত্নে জনপ্রিয়তা বাড়ছে শামুকের
শখের বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগান অনেকেই। সেই বাগানে দেখা যায় বিভিন্ন রং ও আকৃতির শামুক। বাগানে পাওয়া এই শামুকের শ্লেষ্মা বা মিউকাস কাজে লাগিয়ে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। ত্বকের ক্ষতি মেরামতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখায় বিশ্বজুড়েই শামুকের শ্লেষ্মাযুক্ত প্রসাধনী পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হলেও শামুকের শ্লেষ্মাযুক্ত প্রসাধনী বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উজ্জ্বল ত্বক আর সুস্বাস্থ্যের জন্য শামুকের শ্লেষ্মা অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাচীন সময়ে গ্রিকরা ক্ষতের চিকিৎসায় ত্বকে শামুকের স্লাইম (বিশেষ ধরনের মিউকাস) ব্যবহার করত। ১৯৮০-এর দশকে চিলির শামুকচাষিরা হাতের ত্বক নরম রাখার পাশাপাশি ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহার করত শামুকের স্লাইম। তখন থেকেই দক্ষিণ আমেরিকায় শামুকের জনপ্রিয়তা শুরু হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, শামুকের শ্লেষ্মায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তাই মানুষের শরীরের ক্ষতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বন্ধ করতে শামুকের শ্লেষ্মা কার্যকর। বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় অনেক অ্যান্টিবায়োটিকের তুলনায় শামুকের শ্লেষ্মায় বেশি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শামুকের শ্লেষ্মায় ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতাও রয়েছে। এরই মধ্যে গবেষণাগারে মানুষের ত্বকের ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে সফলও হয়েছে শামুকের শ্লেষ্মা।
যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জোশুয়া জেইচনার বলেন, বাগানের শামুকের বৈজ্ঞানিক নাম করনু অ্যাসপারসাম। বাগানের শামুক থেকে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য তৈরির সুযোগ বাড়ছে। শামুকের এ প্রজাতি থেকে ময়েশ্চারাইজিং, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পূর্ণ ও নতুন কোলাজেনকে উদ্দীপিত করতে সক্ষম স্লাইম তৈরি হচ্ছে। এ উপাদান বার্ধক্যের গতি কমাতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ বাহার হাউশমান্ড বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক মেরামতের পাশাপাশি আর্দ্র রাখতে শামুকের শ্লেষ্মাযুক্ত পণ্যের চাহিদা বেশি। শামুকের শ্লেষ্মা প্রাকৃতিক ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা প্রদাহ কমায় ও বার্ধক্যজনিত লক্ষণ কমাতে পারে। ত্বকের কোলাজেন উত্পাদনকে বাড়ানোর উপাদানও রয়েছে শামুকের শ্লেষ্মায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট আন্তোনিও সেরুলো তিন ধরনের শামুকের শ্লেষ্মা বিশ্লেষণ করেছেন। শামুকের পিঠের পাশাপাশি পা থেকেও আঠালো ও লুব্রিকেটিং শ্লেষ্মা সংগ্রহ করেন তিনি। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের শ্লেষ্মাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। তৈলাক্তকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত শ্লেষ্মায় বেশি কোলাজেন থাকে। অন্য শ্লেষ্মাগুলোতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোটিন। নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির জৈব রসায়নবিদ অ্যাডাম ব্রাউনশওয়েগ বলেন, মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীণ আলসার ও সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ক্ষত মেরামতে আঠা হিসেবে শামুকের শ্লেষ্মা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে শামুকের শ্লেষ্মার নির্যাসে তৈরি ড্রপ শুষ্ক চোখের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখনো শামুকের শ্লেষ্মায় থাকা সব উপাদানের সন্ধান পাননি।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক