এক সেকেন্ড নিয়ে যে বিপদে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা
অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। প্রতি চার বছরে একবার ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করা হয়। ২০২৪ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি তেমনই একটি দিন ছিল। অনেকেই আমরা জানি না, কয়েক বছর পরপর একটি অধিমুহূর্ত বা লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়। এ মুহূর্ত যুক্ত হয় সাধারণত জুন বা ডিসেম্বরের শেষে। পৃথিবী যে গতিতে তার অক্ষের চারপাশে ঘোরে, তা সব সময় এক থাকে না। সব সময় একই মাপে একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন হয় না। এই ধারাবাহিকতা চলছে অনেক বছর ধরে।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা একটি নেতিবাচক লিপ সেকেন্ড নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তাঁরা একটি সেকেন্ড বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর ভূ-পদার্থবিদ অধ্যাপক ডানকান অ্যাগনিউ বলেন, পৃথিবী খুব দ্রুত ঘূর্ণায়মান একটি গ্রহ। ২০২৯ সালে নেতিবাচক লিপ সেকেন্ড বা সেই বছরে এক সেকেন্ড বাদ দেওয়া প্রয়োজন। এক সেকেন্ড বাদ দিলে স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে। পৃথিবী ঘূর্ণনের জন্য সব সময় একই সময় নেয় না বলে ঐতিহ্যগতভাবে লিপ সেকেন্ড যোগ করা হচ্ছে।
২০২৯ সালের লিপ সেকেন্ড যুক্ত করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একটি লিপ সেকেন্ড শেষবার ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর যোগ করা হয়েছিল। ২০২৯ সালে এক সেকেন্ড যুক্ত না করলে সেই বছরের শেষ সময় হবে ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড। এরপরই এক সেকেন্ড বাদ দিয়ে নতুন বছর ২০৩০ চালু হবে। লিপ সেকেন্ডের মাধ্যমে কোর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম বা ইউটিসির সঙ্গে এক সেকেন্ড সমন্বয় করা হয়। আমরা গ্রিনিচ মান সময় বা জিএমটির কথা জানি। এমনই একটি মান সময় ইউটিসি। পারমাণবিক ঘড়ি বা অ্যাটমিক ক্লকের সময় ও সৌর সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য ইউটিসি চালু করা হয়। একটি পজিটিভ লিপ সেকেন্ডের মাধ্যমে এক সেকেন্ড যোগ করা হয়। যখন পৃথিবীর ঘূর্ণন খুব ধীর হয়, তখন এক সেকেন্ড যোগ করা হয়।
অন্যদিকে নেতিবাচক লিপ সেকেন্ডের ক্ষেত্রে এক সেকেন্ড বাদ দেওয়া হয়। যখন পৃথিবীর ঘূর্ণন খুব দ্রুত হয়, তখন এক সেকেন্ড বাদ যাবে। ১৯৭২ সাল থেকে লিপ সেকেন্ড যোগ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৭ বার যোগ করা হয়েছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন ২০২০ সাল থেকে কিছুটা বেড়েছে বলে গবেষকেরা জানাচ্ছেন। এ কারণেই একটি লিপ সেকেন্ড অপসারণ করতে হবে। ভবিষ্যতে ঘড়ির সঙ্গে সৌর সময় পর্যবেক্ষণ করার জন্য এমনটা করতে হবে। কোর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম বিশ্বজুড়ে অত্যাধুনিক সময়ের মানদণ্ড হিসেবে পারমাণবিক ঘড়ির সঙ্গে সমন্বয় করে চালু হয়েছে।
এক সেকেন্ড বাদ দিলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবস্থায় গোলযোগ দেখা দিতে পারে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের যে সময়, সেখান থেকে এক সেকেন্ড বাদ দেওয়ার উপায় এখনো বের হয়নি। বিজ্ঞানী অ্যাগনিউ বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণনের হার বছরে পর বছর পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীর কেন্দ্রে তরল গলিত লোহার লাভা আছে। পৃথিবীর কেন্দ্র পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের ওপর প্রভাব রাখে বলে ঘূর্ণনে নানা মাত্রা দেখা যায়।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা। বরফ গলে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীর হয়ে যায়। যখন বরফ গলে যায়, তখন পানি পুরো মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কৌণিক ত্বরণের কারণে পৃথিবীর গতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। এতে গতি ধীর হয়ে যায়। বরফ গলে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন যদি ধীর না হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নেতিবাচক লিপ সেকেন্ডের প্রয়োজন হবে। আমাদের হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি দিনে মোট সময় ৮৬৪০০ সেকেন্ড। ঘূর্ণন সব দিন সমান নয় বলে প্রতিদিনই সেকেন্ডের কম বা বেশি এদিক-সেদিক হয়।
নেচার জার্নালে এক সেকেন্ডের গোলযোগ নিয়ে এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যে লিপ সেকেন্ড নিয়ে এত বিভ্রান্তি, তা ২০২২ সালে আরেক দল বিজ্ঞানী বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। যদিও সেই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হতে ২০৩৫ সাল লেগে যাবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল