অতিকায় ডাইনোসর লোপ পেলেও যে মাছি এখনো টিকে রয়েছে
আমরা যেভাবে পৃথিবীতে রাজত্ব করছি, ২৪৩ কোটি বছর আগে ডাইনোসরও ঠিক একইভাবে রাজত্ব করত পৃথিবীতে। গবেষকদের ধারণা, ৬৬ কোটি বছর আগে এক গ্রহাণু আঘাত করেছিল পৃথিবীর বুকে। সেই আঘাতেই বিলুপ্ত হয়ে যায় ডাইনোসর। সেই ডাইনোসরের আমলে বিভিন্ন পোকামাকড়ও পৃথিবীতে বসবাস করত। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল রাফিডিওপটেরা গণের মাছিরা। সেই মাছিদের উত্তরসূরি এখনো উত্তর গোলার্ধে বাস করছে। কীভাবে স্নেকফ্লাই নামের এই মাছি এখনো টিকে আছে, তা নিয়ে বিস্ময়ের শেষ নেই। সেই স্নেকফ্লাই নামের মাছির পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে মাছির বিবর্তনের ইতিহাস বোঝার নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, স্নেকফ্লাইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম ভেনুস্টোরাফিডিয়া নিগ্রিকোলিস। এই মাছি ক্যামেল-নেক ফ্লাই নামেও পরিচিত। জার্মানি, অস্ট্রিয়া আর সুইজারল্যান্ডে ২০২২ সালের ইনসেক্ট অব দ্য ইয়ার হিসেবে কালো গলাযুক্ত স্নেকফ্লাইকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। শিকারি আচরণের জন্য এই মাছি বেশ আলোচিত। এই মাছির পেছনের অংশ দেখতে অনেকটা ফড়িংয়ের ডানার মতো।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট, মুনচেবার্গ ও ভিয়েনার বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো স্নেকফ্লাইয়ের পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন। স্নেকফ্লাই সাধারণত ২ সেন্টিমিটারের কম লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা সাপের মতো এই মাছির লম্বা মাথা ও দীর্ঘ শরীর রয়েছে। ডাইনোসরের আমলে বসবাসকারী পোকামাকড়দের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্নেকফ্লাইকে। এ বিষয়ে জার্মানির মুঞ্চেবার্গের সেনকেনবার্গ জার্মান কীটতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরিচালক টমাস স্মিথ বলেন, আমরা জীবাশ্ম থেকে স্নেকফ্লাইকে অনেক পুরোনো প্রাণী হিসেবে অনুমান করতে পারি। জীবন্ত জীবাশ্ম হিসেবেও তাদের বর্ণনা করা যেতে পারে। আনুমানিক ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে এমন পোকামাকড় অনেক বেশি দেখা যেত। তখন আরও অনেক প্রজাতি ছিল। ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষে গ্রহাণুর আক্রমণ ও পরবর্তী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্য সব প্রজাতি কমতে থাকে। যারা ঠান্ডা তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল, তারাই শুধু বেঁচে ছিল। বর্তমানে শনাক্ত করা আনুমানিক ২৫০ প্রজাতির স্নেকফ্লাইয়ের প্রায় সব কটি উত্তর গোলার্ধে বাস করে। জার্মানিতে রয়েছে ১০ প্রজাতির স্নেকফ্লাই।
জার্নাল অব হেরিডিটিতে স্নেকফ্লাইয়ের জীবন রহস্য নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। কালো ঘাড়ের স্নেকফ্লাইয়ের প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ জেনেটিক সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। বিজ্ঞানী ম্যাগনাস উলফ বলেন, ‘নতুন তথ্যাদি আমরা মাছির জেনেটিক অভিযোজন বুঝতে ব্যবহার করব। এই জীবন্ত জীবাশ্ম সেই সময় কীভাবে গ্রহাণুর প্রভাব থেকে বেঁচে গেল, তা আমরা জানতে চাই। গ্রহাণুর আঘাতের পর পৃথিবীর প্রাণ-প্রতিবেশ বদলে যায়। সেই সময় কীভাবে এই প্রাণীরা টিকে ছিল, তা আজও রহস্যের। স্নেকফ্লাইস তাদের জীবনের বেশির ভাগ সময় লার্ভা হিসেবে কাটায়। সাধারণত দুই বা তার বেশি বছর লার্ভা হিসেবে থাকে মাছিগুলো। এ সময়ে তারা প্রধানত ডিম ও অন্যান্য পোকামাকড়ের লার্ভা খায়। গ্রীষ্মের শুরুতে ডিম ফুটে স্নেকফ্লাই বের হয়। স্নেকফ্লাই লার্ভাকে কাঠঠোকরা, মাকড়সা ও অন্য পোকামাকড় শিকার করে। গাছের বাকল ও মরা কাঠের মধ্যে ডিম পাড়ে স্নেকফ্লাই।
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ