গ্রহাণুতে স্যাটেলাইটের আঘাত, ধীরগতিতে ছিটকে পড়েছিল পাথরের টুকরা
২০২২ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বেশ রোমাঞ্চকর একটি কাজ করে। কৃত্রিম উপগ্রহের (স্যাটেলাইট) সঙ্গে একটি গ্রহাণুর সংঘর্ষ ঘটানো হয়। নাসা সম্প্রতি সেই সংঘর্ষের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নাসা জানাচ্ছে, হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে সেই সংঘর্ষের অনেক ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। স্যাটেলাইটের আঘাতে গ্রহাণু থেকে অসংখ্য পাথরের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে মহাকাশে।
পৃথিবীর দিকে প্রায়ই অনেক গ্রহাণু বা ধূমকেতু ছুটে আসে। পৃথিবীর অবস্থান আর অভিকর্ষের কারণে এসব গ্রহাণু বা ধূমকেতুর গতিপথ পরিবর্তন হয়। আবার কোন কোন গ্রহাণু বা ধূমকেতু সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের আকর্ষণে ছুটে যায় অন্যদিকে। কিন্তু কখনো যদি বিশাল কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে?
এর আগে গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডায়নোসররা বিদায় নিয়েছিল, এরপরের আঘাতে কী হবে? সেই আঘাতের প্রতিরক্ষা নিয়ে গবেষণা চলছে অনেক দিন ধরেই। ভবিষ্যতে পৃথিবীকে গ্রহাণুর হাত থেকে রক্ষা করতে এমন প্রতিরক্ষামূলক বিষয়কে গুরুত্ব দিতে এমন পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিষয়ক বিজ্ঞানী ডেভিড জুইট জানাচ্ছে, ডিমরফোস নামের গ্রহাণুর ওপরে স্যাটেলাইটের আঘাতে দারুণ এক ঘটনার জন্ম নিয়েছে। যে স্থানে স্যাটেলাইট আঘাত হানে, সেখান থেকে টুকরা টুকরা পাথর মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। পাথরের টুকরাগুলো যথেষ্ট গতি ও ভর নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। টুকরা পাথরগুলো ছড়িয়ে পড়ার কারণে গ্রহাণুর শক্তি ও ভরের পরিবর্তন আসবে। এসব পাথর মহাকাশে বলা যায় কচ্ছপের গতিতে ঘণ্টা এক কিলোমিটার গতিতে সরে যাচ্ছে।
গবেষকেরা ভবিষ্যতে সরাসরি পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা গ্রহাণুদের রুখতেই এমন পরিকল্পনা নিচ্ছেন। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে নাসার ডাবল অ্যাস্ট্রয়েড রিডিরেকশন টেস্ট বা ডার্ট কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি স্যাটেলাইট গ্রহাণুতে আঘাত করে। ডার্ট খেয়াযানের সঙ্গে ডিডিমস রিকনেইসেন্স অ্যান্ড অ্যাসট্রয়েড ক্যামেরা ফর অপটিক্যাল নেভিগেশন বা ডিআরএসিও যুক্ত ছিল। এ ছাড়া স্মার্ট ন্যাভ নেভিগেশন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ডার্ট পরিচালনা করা হয়। স্যাটেলাইটটি প্রতি ঘণ্টায় ২২ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত করে গ্রহাণুর বুকে। এতে গ্রহাণুর স্বাভাবিক চলার পথে পরিবর্তন আসে। আঘাতের কারণে গ্রহাণুর বুকে ৫০ মিটার প্রশস্তের গর্ত তৈরি হয়।
ডিমরফস ১১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নিয়ে তার মূল গ্রহাণু ডিডিমসকে প্রদক্ষিণ করত। স্যাটেলাইটের আঘাতে প্রদক্ষিণের সময়ে কিছুটা পরিবর্তন খেয়াল করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ৩২ মিনিট কম সময় নিয়ে এখন ডিমরফস প্রদক্ষিণ করছে। যদিও আঘাতের আগে নাসার অনুমান ছিল ৭৩ সেকেন্ড পরিবর্তন আসবে। টেলিস্কোপের তথ্য গবেষণা বলছে আঘাতের কারণে ৩৭টির মতো টুকরা টুকরা পাথর মহাকাশে ছিটকে যায়। ৩ ফিট থেকে ২২ ফিট আকারের পাথরের টুকরা তৈরি হয় আঘাতের কারণে।
ডার্ট ২৪ নভেম্বর ২০২১ সালে পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করে। ডার্ট মিশনের মাধ্যমে প্রথম মহাকাশে মানুষ কোনো গ্রহাণুকে আক্রমণ করল। ৭৮০ মিটার আকারের ডিডিমসকে প্রদক্ষিণ করছে ১৬০ মিটারের ডিমরফস। ডার্টের খেয়াযান প্রায় ১০ মাসের বেশি সময় অতিক্রম করে ছুঠে যায় গ্রহাণুর দিকে। ১১ মিলিয়ন দূরের গ্রহাণুর ওপরে এমন পরীক্ষার অনুসন্ধান নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে কাজ করবেন গবেষকেরা এমনটাই জানিয়েছেন।
সূত্র: নাসা