২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

টয়োটার ইঞ্জিনে তৈরি গাড়ি চলবে চাঁদে

ভাবুন তো, আপনি যে গাড়ি চালাচ্ছেন, সেই একই ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি গাড়ি চলছে চাঁদে। ভাবতে অবাক লাগলেও পৃথিবীতে চলা গাড়ির ইঞ্জিন দিয়েই চাঁদে চলাচলের উপযোগী রোভার গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর। এ জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিনির্ভর (আরএফসি) বিশেষ ধরনের ব্যাটারি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে লুনার রোভার তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

চাঁদের পরিবেশ কিন্তু পৃথিবীর মতো নয়। চাঁদের অভিকর্ষ পৃথিবীর ৬ ভাগের ১ ভাগ। আবার কোনো কোনো স্থানের তাপমাত্রা ১৭০ থেকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টয়োটা তার ৮৫ বছরের গাড়ি নির্মাণের কৌশল ও গবেষণার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় তৈরি করছে এই রোভার গাড়ি। জাপান কয়েক বছর ধরে মহাকাশ গবেষণায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টেমিস কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে সক্রিয়ভাবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এই দশকেই চাঁদে গেটওয়ে নামের লুনার স্পেস স্টেশনে মানুষ পাঠানো হবে। টয়োটার প্রকৌশলী শিনিচিরো নোডা বলেন, ‘পৃথিবীর সব জায়গায় টয়োটার গাড়ি দেখা গেলেও এমন জায়গায় এখন আমরা গাড়ি পাঠাচ্ছি, যেখানে আমাদের গাড়ি আগে যায়নি। আমরা এই কর্মসূচি নিয়ে ভীষণ রোমাঞ্চিত। আমাদের গাড় চাঁদে চলবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

ছয় চাকার এই রোভার দেখতে রাস্তায় চলা ল্যান্ড ক্রুজারের মতোই। টয়োটা ২০১৯ সালে জাপানের মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানুষের ব্যবহারোপযোগী লুনার রোভার তৈরির জন্য কাজ করছে। এই রোভারের নাম রাখা হয়েছে লুনা ক্রুজার। ২০২৯ সালে এই রোভার চাঁদে পাঠানো হবে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের সম্মানে এই নামকরণ করা হয়েছে। ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ৭০ বছর ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে মানুষের অন্যতম ব্যবহার্য একটি গাড়ি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। জাপানের ফুজি পর্বত এলাকায় চলছে এই রোভারের নির্মাণকাজ।

‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া/ ঢাকা শহর দেখমু আজ দুইজনে ঘুইরা ঘুইরা’—সেকালের বিখ্যাত গানটি অনেকেই গুনগুন করে গান। সেই গানের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সাইকেলের মতোই এই রোভারে নভোচারীরা ‘উইড়া উইড়া’ চাঁদে ঘুরবেন। খাওয়াদাওয়া করবেন, কাজ করবেন, ঘুমাবেন কিংবা চাঁদের বুকে অবকাশের জন্য অবস্থান করবেন। পৃথিবীতে যেমন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি নিয়ে মানুষ ঘুরতে বের হন, চাঁদেও রোভারে চড়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে। টয়োটার চাঁদ অভিযান প্রকল্পের প্রধান কেন ইমাশিতা বলেন, ‘আমরা চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর গবেষণার জন্য বিশেষ ধরনের রোভার তৈরির কাজ করছি। নাসা পুনরায় চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য দায়িত্ব দিয়েছে জাপানকে।’

রোভারের ইঞ্জিনটি বিশেষ পরিকল্পনায় বানানো হচ্ছে। চাঁদে পৃথিবীর মতো জ্বালানি নেওয়ার জন্য একটু পরপর পেট্রলপাম্প নেই। যে কারণে বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে রোভারটি নকশা করছেন। বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো এই রোভার হাইড্রোজেনের সংশ্লেষে জ্বালানি তৈরি করবে। টয়োটা জানিয়েছে, রোভারটি সৌরশক্তি ও পানি থেকে ইলেকট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে কাজ করবে। চাঁদে একটি রাত মানে পৃথিবীর ১৪ দিন। যে কারণে এই প্রযুক্তি রোভারকে রাত কিংবা তীব্র ঠান্ডার মধ্যে জ্বালানি প্রদান করবে নিশ্চিন্তে।

আগামী বছরের মধ্যে পুরোপুরিভাবে কার্যকর রোভার তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে টয়োটা। চাঁদে রোভারটি দুজন নভোচারীকে ৪২ দিন বহন করতে পারবে। আরও বলা হচ্ছে, ১০ বছরের মতো কার্যকর থাকবে রোভারটি। কেন ইমাশিতা জানান, ‘আমরা এই রোভারকে কার্যকরভাবে পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করতে চাই। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি চাঁদে পানি উৎপাদন করতে চায়, তবে রোভারটি তাদের সহায়তা করবে। গিতাই জাপান ইনকরপোরেশন টয়োটার রোভারের জন্য রোবোটিক আর্ম তৈরি করেছে। চাঁদে এর আগে মানুষ কয়েক ঘণ্টার জন্য অবতরণ করেছে, এবার কয়েক দিন থাকার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যে কারণে বিশেষভাবে রোভারের ভেতরটি নকশা করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকেই ক্যারাভ্যান বা গাড়ির মধ্যে ঘর বাঁধেন। চাঁদে তেমনই ঘরে থাকবেন মহাকাশচারীরা।’