কাঁকড়ারা ভালো নেই, কেন?

কাঁকড়াছবি: রয়টার্স

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপকূলে সন্ন্যাসী কাঁকড়া হিসেবে পরিচিত বিশেষ ধরনের কাঁকড়া এখন প্লাস্টিক বর্জ্যে তাদের বাড়ি তৈরি করছে। টেরেস্ট্রিয়াল হার্মিট কাঁকড়া সাধারণভাবে কোমল দেহের ক্রাস্টেসিয়ান। বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতটে এদের বাস। নিজস্ব কোনো প্রাকৃতিক সুরক্ষা ছাড়াই এই কাঁকড়া অন্য প্রাণীদের ফেলে দেওয়া খোসায় আশ্রয় খুঁজে নেয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছুসংখ্যক স্থলজ সন্ন্যাসী কাঁকড়া প্রজাতি সৈকতের আবর্জনায় থাকা প্লাস্টিককে কৃত্রিম খোলস হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেছে। পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবিক ও রাসায়নিক গবেষণা কেন্দ্রের একটি দল ও পোল্যান্ডের পজনান ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সেসের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষকেরা এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। সায়েন্স অব টোটাল এনভায়রনমেন্টে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।

প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই সমস্যার কারণে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ৮৫ ভাগ সামুদ্রিক এলাকা দূষণের শিকার হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, পৃথিবীর সাগর ও মহাসাগরের বেশির ভাগ প্লাস্টিক দূষণের প্রধান উৎস নদীদূষণ। এতে উপকূলরেখায় প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে অনেক পরিমাণে। টেরেস্ট্রিয়াল হার্মিট কাঁকড়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপকূলে বাস করে। সাধারণত তাদের নরম পাকস্থলীকে রক্ষা করার জন্য গ্যাস্ট্রোপড গোত্রের প্রাণীদের খালি খোসার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করে। এ ধরনের খোলস তাদের শিকারি থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয়, নরম পাকস্থলীকে শুকিয়ে যাওয়া থেকেও রক্ষা করে। কিন্তু খোলসের দুর্বল মান আর কাঁকড়া বৃদ্ধির হার বাড়ার কারণে ঝুঁকিতে আছে সন্ন্যাসী কাঁকড়া গোষ্ঠী।

খোলস কাঁকড়ার জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব খোলসের মাধ্যমে সঙ্গীকে যৌন–সংকেত পাঠায় কাঁকড়া। পুরুষ কাঁকড়ার খোলসের আকার ও অবস্থা স্ত্রী সঙ্গীর পছন্দকে প্রভাবিত করে। গবেষকেরা সব মিলিয়ে কৃত্রিম খোলসসহ ৩৮৬টি স্বতন্ত্র কাঁকড়া শনাক্ত করেছেন। কালো ও সাদা প্লাস্টিকের ক্যাপ ব্যবহার করতে দেখা যায় ৮৪ ভাগ কাঁকড়াকে। এ বিষয়ে গবেষক জুজান্না জাগিলো বলেন, বিবর্তনের ধারায় গ্যাস্ট্রোপড প্রাণীর শেলের মাধ্যমে এসব কাঁকড়া নিজেদের আশ্রয় তৈরি করত। খোলসের অভাবের কারণে অনেক কাঁকড়া প্রজাতি হারিয়ে গেছে। বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্যকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করছে কাঁকড়া। গবেষকেরা মনে করেন স্ত্রী কাঁকড়ার মনোযোগ আকর্ষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য হালকা হওয়ার কারণে কৃত্রিম শেলের জন্য সন্ন্যাসী কাঁকড়ার শক্তি কম ব্যয় হয়। এ ছাড়া ডাইমিথাইল সালফাইডের গন্ধ প্রাকৃতিক খোলস ও সামুদ্রিক বর্জ্য উভয়েই পাওয়া যায়। প্লাস্টিকের কৃত্রিম শেল সমুদ্রের দূষিত এলাকায় ছদ্মবেশে কাঁকড়াদের বেশ সহায়তা করে। প্লাস্টিক বোতলের ক্যাপসহ ধাতব ক্যাপ এখন কাঁকড়া নিজেদের খোলস হিসেবে ব্যবহার করছে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় কাঁকড়ারা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করছে।

ইন্টারনেট ইকোলজি–পদ্ধতিতে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে অডিও রেকর্ডিং, ভিডিও, ছবি, খবরসহ গবেষকদের নানান লেখা, পরিবেশগত ঘটনা, সংবাদনির্ভর সাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম জুড়ে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফটোগ্রাফার শন মিলার ২০১৪ সালে তার ব্লগে প্রথম প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে খোলসসহ হার্মিট কাঁকড়ার ছবি পোস্ট করেন। তিনি জাপানের ওকিনাওয়ার সমুদ্রসৈকতে ব্লুবেরি হারমিট কাঁকড়ার খোঁজ পান। তার ছবির মাধ্যমেই গবেষকেরা তথ্য সংগ্রহে অনুপ্রাণিত হন। সন্ন্যাসী কাঁকড়া আচরণ বোঝার জন্য গবেষকেরা বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা ছবি পর্যালোচনা করেন। ২০০৯ সালে এমন আচরণের বিষয়টি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রেকর্ডে প্রকাশিত হয়। কৃত্রিম খোলস ব্যবহারের মাধ্যমে সন্ন্যাসী কাঁকড়ার মধ্যে অভিনব বিবর্তনমূলক দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকেরা। প্লাস্টিক ব্যবহার কাঁকড়ার জন্য নতুন আচরণ হিসেবে অভিযোজন ক্ষমতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ